কমলাপুরের টার্ফে খেলে চোটে পড়ার শঙ্কায় খেলোয়াড়রা, বদলানোর টাকা নেই বাফুফের!
শেষ হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। টুর্নামেন্টের এবারের সব খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামটিতে অনেকদিন ধরেই ফিফার উপহার দেওয়া কৃত্রিম ঘাস অর্থাৎ টার্ফ ব্যবহার করছে বাফুফে।
সেই টার্ফের মান এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন এবং সমালোচনা চলছে। ঠিকমতো যত্ন না নেওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রুক্ষ হয়ে আছে কৃত্রিম ঘাস, যেখানে খেলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আঘাতও পেয়েছেন। এমনকি বল নিয়ন্ত্রণ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে খেলোয়াড়দের।
গোড়ায় গলদ
বাফুফের মাঠ কমিটির প্রধান ফজলুর রহমান বাবুলের দাবি, এই টার্ফ যখন বসানো হয়েছে তখন থেকেই সমস্যার শুরু। টার্ফ বসানোর আগে ছোট ছোট পাথরের টুকরো দিতে হয়। সেটিই ঠিকমতো হয়নি বলে মন্তব্য বাবুলের, 'টার্ফের নিচে যে ছোট পাথরের টুকরো দেওয়া হয় সেগুলো অনেক জায়গায় অসামঞ্জস্য অবস্থায় আছে। এই টার্ফ বসানোর সময়ই সমস্যাটা হয়েছিল।'
টার্ফটি বদলে নতুন একটি দেওয়ার কথা আছে বলে জানান বাবুল। তবে সেটিও খুব শীঘ্রই হচ্ছে না, 'বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাজ চলছে বিধায় এখানেই সব খেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তাই ছয় মাসের আগে এই টার্ফ বদলানো সম্ভব না।'
টার্ফ বদলাতে কমপক্ষে ছয় কোটি টাকা খরচ হবে বলেও জানান ফজলুর রহমান বাবুল।
বসুন্ধরা কিংসের কমলাপুর বয়কট
সাফের এই টুর্নামেন্টের আগে টার্ফ বদলানোর কথা বলেছিলেন বলে জানান সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল, 'আমরা টুর্নামেন্টের আগেই বাফুফেকে টার্ফ বদলানোর কথা বলেছি। কোনো কাজই হয়নি। এই জায়গায় খেলা মোটেও খেলোয়াড়দের জন্য উপযোগী নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের হাতে বিকল্প উপায়ও নেই।'
এদিকে কমলাপুর স্টেডিয়ামে যতদিন নতুন টার্ফ না বসছে সেখানে ততদিন খেলবে না দেশের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ক্লাবটির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বায়েজিদ আলম নিপু, 'গত বছর স্বাধীনতা কাপ খেলার সময়ই আমরা বাফুফেকে জানিয়েছি যে এই টার্ফে খেলা খেলোয়াড়দের জন্য বিপদজনক। সেখানে আমাদের ফাইনাল হারার অন্যতম কারণ ছিলো ওই টার্ফে খেলে আমাদের সেরা দুই খেলোয়াড় চোট পেয়ে ফাইনাল খেলতে পারেননি। এই টার্ফ না বদলানো পর্যন্ত আমরা কমলাপুরে আর কোনো ম্যাচ খেলব না।'
অর্থের সংকট
বসুন্ধরা কিংস কমলাপুরে খেলবে না, এটি জানানোর সঙ্গে বায়েজিদ আলম নিপুর বিশ্বাস বাফুফের কাছে এই মুহূর্তে টার্ফ বদলানোর মতো টাকা নেই, 'যখন টার্ফ প্রথম বসানো হয় তখনই ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এখন সব কিছুর দাম বাড়তি, সে হিসেবে ১০ কোটি টাকার কমে নতুন টার্ফ বসানো সম্ভব নয়। আর বাফুফের কাছে এত টাকা এখন নেই।'
সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হেলালের পরামর্শ, বাফুফের উচিত ফিফাকে এই বিষয়ে জানানো, 'ফিফা যেহেতু এই টার্ফ বসানোতে সাহায্য করেছিল, তাদের কাছে অনুরোধ করলে তারা আবারও সাহায্য করবে। বাফুফে যোগাযোগ করেছে কিনা এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই, কিংবা করে থাকলেও ফিফা এটিকে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে দেখবে সেটাও একটা বিষয়। তবে আমাদেরকে (সাফ) বাফুফে কিছু জানায়নি।'
বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ যেখানে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশা দেখাচ্ছে, সেখানে ফুটবলের অন্যতম তীর্থস্থান কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফের এই বেহাল দশা বড় চিন্তার কারণ। এই টার্ফে খেলে ফুটবলারদের বড় ধরণের চোটে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কিন্তু বাফুফের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাদের কাছে না আছে টার্ফ বদলানোর টাকা, না আছে বিকল্প কোনো স্টেডিয়াম!