এআই-এর বানানো শুমাখারের সাক্ষাৎকার ছেপে বরখাস্ত হলেন সম্পাদক
বিখ্যাত জার্মান রেসিং ড্রাইভার ও সাতবারের ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন মাইকেল শুমাখারের ভুয়া সাক্ষাৎকার প্রকাশের দায়ে একটি জার্মান ম্যাগাজিনের সম্পাদককে বরখাস্ত করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে এই মিথ্যা সাক্ষাৎকারটি তৈরি করে প্রকাশ করেছিল ম্যাগাজিনটি। খবর বিবিসির।
ইতোমধ্যেই ম্যাগাজিনটির প্রকাশক কিংবদন্তি ফর্মুলা ওয়ান তারকার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের আল্পস পর্বতমালায় স্কি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাইকেল শুমাখার। মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় কোমায় চলে যান তিনি। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তার পরিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং এরপর থেকে মাইকেল শুমাখারের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রেখেছে তার পরিবার এবং জনসম্মুখেও তারকাকে আর দেখা যায় না।
তাই জার্মান ম্যাগাজিন 'ডি আকতুয়েলা'র প্রচ্ছদে 'মাইকেল শুমাখার, দ্য ফার্স্ট ইন্টারভিউ' শিরোনামে শুমাখারের সাক্ষাৎকার দেখে সকলের অবাক হওয়ারই কথা। প্রচ্ছদে শুমাখারের হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি সংযুক্ত করে নিচে সাব-হেডিং এ লেখা হয়েছে- 'সত্যি বলে ধোঁকা খেতে পারেন'।
কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আসল শুমাখার এই সাক্ষাৎকারটি দেননি। বরং প্রশ্নোত্তর পর্বে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) শুমাখারের হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ক্যারেক্টার.এআই নামক একটি এআই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে এই সাক্ষাৎকারটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুমাখারের স্বাস্থ্য ও তার পরিবার সম্পর্কে উত্তর বানিয়ে উপস্থাপন করেছে।
ভুয়া সাক্ষাৎকারে এআই 'শুমাখার' সেজে উত্তর দিয়েছে- "আমি আমার টিমের সাহায্য ছাড়াই উঠে দাঁড়াতে পারি এবং ধীরে ধীরে কয়েক কদম হাঁটতেও পারি।"
এটি আরও বলেছে- "আমার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ, তাদেরকে ছাড়া আমি এভাবে সামলাতে পারতাম না। কিন্তু এই সবকিছু হওয়ার ফলে অবশ্যই তাদের মনও খুবই খারাপ। তারা আমাকে সহায়তা করে এবং সবসময় আমার পাশে থেকেছে।"
এদিকে গেল শুক্রবার মাইকেল শুমাখারের পরিবার জানিয়েছে, তারা ম্যাগাজিনটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যদিও ঐ সপ্তাহেই ম্যাগাজিনের প্রকাশক আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
ফাংকি মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিয়াংকা পোলমান বলেন, "এই নির্জীব ও বিভ্রান্তিকর নিবন্ধটি কখনো প্রকাশ হওয়াই উচিত ছিল না। আমরা এবং আমাদের পাঠকেরা সাংবাদিকতার যে মান প্রত্যাশা করি, তার সাথে কোনোভাবেই এটি মানায় না।"
"এই নিবন্ধটি প্রকাশের ফলে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে পরিণাম ভোগ করতে হবে। 'ডি আকতুয়েল' এর এডিটর-ইন-চীফ অ্যান হফমান, যিনি ২০০৯ সাল থেকে ম্যাগাজিনটির দায়িত্বে ছিলেন, তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে।"
৫৪ বছর বয়সী শুমাখার বেনেটনের হয়ে ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে এফওয়ান ওয়ার্ল্ড ড্রাইভারস' খেতাব জয় করেন। অন্যদিকে, ফেরারির হয়ে ২০০০ সাল ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচটি শিরোপা জেতেন তিনি।
তবে শুমাখারের সাতটি এফওয়ান শিরোপা জয়ের রেকর্ড তাকে ভাগ করে নিতে হয়েছে আরেক রেসিং ড্রাইভার লুইস হ্যামিল্টনের সাথে। মাইকেল শুমাখার তার ক্যারিয়ারে ৯১টি রেস জিতেছেন এবং ২০২০ সালে তার এই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন লুইস হ্যামিল্টন।
২০০৬ সালে একবার রেসিং থেকে অবসর নিয়েছিলেন মাইকেল শুমাখার। কিন্তু পরে ২০১০ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন এবং এর দুই বছর পর আবার তিনি খেলা থেকে অবসর নেন।
শুমাখারের ছেলে মিক ফর্মুলা ওয়ানে 'হাস' এর হয়ে ড্রাইভ করতেন এবং এই মুহুর্তে তিনি মার্সিডিজের একজন রিজার্ভ ড্রাইভার।
২০২১ সালের এক নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে শুমাখারের স্ত্রী কোরিনা বলেছিলেন, "আমরা একই বাড়িতে একসাথে থাকি। থেরাপি নেওয়াই। মাইকেল যেন ভালো থাকে, নিজেকে আগের মতোই পরিবারের অংশ মনে করে এবং আমাদের বন্ধনটা অনুভব করতে পারে, তার সব রকম চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।"
"আমরা একটা পরিবার হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যেভাবে মাইকেল পছন্দ করতো এবং এখনও করে। আমরা আমাদের মতো করে দিন কাটাচ্ছি", যোগ করেন কোরিনা।
কিংবদন্তি তারকার স্ত্রী আরও বলেন, 'যা ব্যক্তিগত তা ব্যক্তিগতই', সবসময় এমনটাই বলতেন মাইকেল শুমাখার। তিনি যেন তার ব্যক্তিগত জীবন উপভোগ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাইকেল সবসময় আমাদের সুরক্ষা দিয়েছে, এখন আমরা তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।"