সাবেক গোলরক্ষক মহসিনের পাশে বিসিবি
দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন করা প্রধান কাজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। তবে ক্রিকেটের বাইরে নানা সঙ্কটেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিসিবি। হকি ফেডারেশনকে আর্থিক অনুদান দেওয়া দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কিছুদিন আগে সাফজয়ী নারী দলকে মোটা অঙ্কের পুরস্কার দিয়েছে। এ ছাড়া ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট অনেকের পাশেই দাঁড়ানোর নজির আছে বিসিবির। এবার সাবেক জাতীয় ফুটবলার মোহাম্মদ মহসিনকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি।
লম্বা সময়ে ধরে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে আছেন মহসিন। বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষকের সংসারে আর্থিক অনটন সীমাহীন। আছে শারীরিক অসুস্থতা, হারিয়ে ফেলেছেন মানসিক ভারসাম্য। আবার জায়গা-জমিও হয়ে গেছে বেদখল; সব মিলিয়ে রীতিমতো দিনাতিপাত করতে হচ্ছে মহসনিকে। সাবেক এই ফুটবলারের চরম দুর্দশার দিন কাটানোর খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার বিসিবির নজরে পড়ে।
মহসিনের চিকিৎসায় সাহায্য করবে বিসিবি, পাশাপাশি জমি উদ্ধারের ব্যাপারে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শুধু ক্রিকেটারদের জন্য নয়, যে কোনো খেলার যে সকল ক্রীড়াবিদ আছেন, তাদের যে কোনো অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করে। মহসিন ভাইয়ের ব্যাপারটা এমনই। আমাদের বোর্ড সভাপতির নজরে বিষয়টা এসেছে। তিনি এর মধ্যেই আমাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, উনাকে (মহসিন) সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে।'
'তার পরিবারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যাপারে সেভাবে বলা হয়নি। আমাদের যেটা বলা হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা। সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে। জায়গা-জমি সংক্রান্ত কিছু আইনী ঝামেলা আছে, সে বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা আমাদের আইনী পরামর্শককে বলেছি, তাদের কাগজ-পত্র দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত সহযোগিতা প্রদান করতে।'
মহসিনের জনপ্রিয়তা দেখেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। এমন একজন ফুটবলারের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলছেন নিজামউদ্দিন চৌধুরী, 'মহসিন ভাই আমাদের জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে, ওই সময়ে তার অনেক বড় ফ্যানবেজ ছিল। এখনকার সময়ে যত মিডিয়া ফোকাস বা যাই হোক... আমরা তখন সাদাকালো টেলিভিশনে খেলা দেখতাম। তার মতো একজন খেলোয়াড়ের পাশে থাকতে পারা ব্যক্তিগতভাবেও আমার জন্য অন্যরকম অনুভূতি।'
বাংলাদেশ দলের গোলপোস্টের নিচে দেয়ার তুলে দাঁড়াতেন মহসিন, তাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ানো কষ্টসাধ্য কাজ ছিল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের জন্য। ঢাকার শীর্ষ ফুটবলে আশির দশকে পথচলা শুরু মহসিনের। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে খেলে এসেছেন তিনি। আবাহনী, মোহামেডান ও মুক্তিযোদ্ধার মতো ক্লাবে মহসিন ছিলেন আস্থার প্রতিক। ছোটখাটো গড়নের হলেও স্কিল ও রিফ্লেক্স দিয়ে গোলকিপিংয়ে অনন্য ছাপ রাখেন মহসিন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফুটবলকে বিদায় জানান মহসিন, এরপর পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানে ভালো সময়ই যাচ্ছিল তার। কিন্তু পারিবারিক ও আর্থিক কারণে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সব হারিয়ে প্রায় নিঃস অবস্থায় দিন কাটাতে গিয়েই হয়তো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সাবেক তারকা এই ফুটবলার।