বিফলে গেল হৃদয়ের লড়াই, আরেকটি হারে ফাইনাল স্বপ্ন বিবর্ণ বাংলাদেশের
প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ে হারের যে শঙ্কা তৈরি হয়, তা কাটিয়ে তোলেন মুশফিকুর রহিম ও তাওহিদ হৃদয়। মুশফিকের বিদায়ের পর ধাক্কা লাগলেও হৃদয়ের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃসময়ে কাণ্ডারীর ভূমিকায় থেকে দারুণ এক ইনিংস খেললেও দলের মুখে জয়ের হাসি ফুটাতে পারেননি তিনি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।
শনিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এবারের আসরে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই সাক্ষাতেই হারলো সাকিব আল হাসানের দল। সুপার ফোরে টানা দুই ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচ হারে ফাইনাল স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের, কার্যত ফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেল তাদের। শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় কাজে নাও আসতে পারে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা শ্রীলঙ্কার ইনিংসে সবচেয়ে বড় নাম সাদিরা সামারাবিক্রমা। দারুণ ব্যাটিংয়ে ঝকঝকে এক ইনিংস খেলা লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করেন। হাফ সেঞ্চুরি করেন কুশল মেন্ডিস, রানের দেখা পান পাথুম নিসাঙ্কাও। এদের ব্যাটে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় হতাশায় ডুবতে দেখায যায় বাংলাদেশকে। হৃদয় একা লড়লেও তা যথেষ্ট হয়নি, ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং শুরুটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। ধীর গতিতে রান তুললেও দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। উদ্বোধনী জুটিতে ৬৬ বলে ৫৫ রান যোগ করেন তারা। মিরাজের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার বলে আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দুই ওভার পর নাঈমকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন শানাকা। অবশ্য বাংলাদেশ ওপেনারকে শিকারে পরিণত করতে হয়নি, তিনি নিজেই তার উইকেট বিলিয়ে দেন। শানাকার করা বাউন্সারে নাঈম না খেলেছেন শট, না ছেড়েছেন। অদ্ভুতভাবে ক্যাচ তুলে আউট হন ৪৬ বলে একটি চারে ২১ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৫ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো দলটির ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে ১৬তম ওভারে। তরুণ লঙ্কান পেসার মাথিসা পাথিরানার করা অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চাালিয়ে উকেটের পেছনে ধরা পড়েন সাকিব। যদিও শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, পরে রিভিউ নিয়ে সাকিবের উইকেট আদায় করে নেয় স্বাগতিকরা। ৭ বলে ৩ রান করেন সাকিব।
১৫ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন লিটন কুমার দাস ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু এই জুটিতেও স্বস্তি মেলেনি। একটু পরই থামেন লিটন। লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ভেল্লালাগের করা অফ স্টাম্পের বাইরের একটি ডেলিভারি খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ২৪ বলে একটি চারে ১৫ রান করা তিনি।
নিয়মিত ধারায় উইকেট পতনের প্রভাব পড়ে তোলার গতিতে। ৮৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের ১০০ রান পূর্ণ হয় ২৪.৪ ওভারে। কোণঠাসা দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মুশফিক ও তাওহিদ হৃদয়। রান তোলার চেয়ে উইকেটে থিতু হওয়াতে মনোযোগ দেন তারা। পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-হৃদয় ১১২ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন।
এই জুটিতে স্বস্তি পাওয়া বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে। কিন্তু ৩৮তম ওভারে ফের ছন্দপতন। শানাকার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ৪৮ বলে ২৯ রান করা মুশফিক। হৃদয় ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী তখন শেষ ভরসা। জুটি গড়ায় মনোযোগ দেওয়া এ দুজনও তাড়াহুড়ো করেননি। মুশফিকের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে থাকা হুদয়।
হৃদয় ও শামীমের জুটি দীর্ঘ হয়নি, ২৫ বলে ২৬ রান যোগ করা এই জুটি ভাঙেন মাহিশ থিকশানা। ১০ বলে ৫ রান করে ফিরে যান শামীম। নাসুম আহমেদকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন হৃদয়। কিন্তু এ দফায় আর বেশি পথ লড়াই করা হয়নি তার। থিকসানার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে থামতে হয় প্রতিকূল অবস্থায়ও অসাধারণ ব্যাটিং করা হৃদয়কে। ৯৭ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৮২ রান করে আউট হন তিনি।
শেষ দিকে নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদের লড়াই বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। নাসুম ১৫ ও হাসান ১০ রান করেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন শানাকা। লঙ্কান অধিনায়ক ৯ ওভারে ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। ৩টি করে উইকেট পান থিকশানা ও পাথিরানাও। একটি উইকেট নেন ভেল্লালাগে।
এর আগে টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। বল হাতে শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়ার উল্লাসেও মাতে তারা। পাথুম নিসাঙ্কার বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন করেন তাসকিন আহমেদ, আম্পায়ার আউটও ঘোষণা করেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লঙ্কান ওপেনার।
প্রথম সাফল্য আসে ষষ্ঠ ওভারে। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে দিমুথ করুনারত্নেকে ফিরিয়ে দেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৭ বলে ১৮ রান করা করুনারত্নে। প্রথম উইকেট হারানোর চাপ সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। ৬০ বলে ৪০ রান করা নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।
টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া কুশলকেও আর বেশি সময় টিকতে দেননি শরিফুল। বাঁহাতি এই পেসারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৭৩ বলে ৫০ রান করেন কুশল। শুরু থেকেই ধুকতে থাকা চারিথ আসালাঙ্কাকে টিককে দেননি তাসকিন, ১০ রান করে ফেরেন তিনি। ২০ রান পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও ফিরে যান, তাকে থামান হাসান।
এরপর বাকিটা সময় একাই লড়ে যান শ্রীলঙ্কার ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা সাদিরা সামারাবিক্রমা। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকলেও অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন, শেষ বল পর্যন্ত দাপট দেখান তিনি। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ৭২ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৩ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন। অধিনায়ক দাসুন শানাকা করেন ২৪ রান।
শ্রীলঙ্কার যাওয়া ৯ উইকেটের ৮টিই নেন বাংলাদেশের পেসাররা, একটি রান আউট। তাসকিন ১০ ওভারে ৬২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। হাসানের শিকারও ৩ উইকেট, ৯ ওভারে ৫৭ রান দেন তিনি। শরিফুল ২ উইকেট নিতে ৮ ওভারে খরচা করেন ৪৮ রান। পেসাররাই কেবল উইকেট পেলেও রান আটকে রাখার কাজটি করেন তিন স্পিনার সাকিব, নাসুম ও মিরাজ, তিনজনেরই ইকোনমি ৫ এর কম ছিল।