ভারতকে হারানোর আনন্দে এশিয়া কাপ মিশন শেষ বাংলাদেশের
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ দিলে এবারের এশিয়া কাপে কেবল হতাশাই সঙ্গী হয়ে থেকেছে বাংলাদেশের। তবু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে পাওয়ার আশার কথা জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। জয়ের জন্যই খেলতে নামার কথা জানান তিনি, সেই জয় মিলেছে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারানোর আনন্দ নিয়ে এশিয়া কাপ মিশন শেষ করলো বাংলাদেশ।
শনিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ৪০ ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের সপ্তম জয়। ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ১৩ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে এটা সাকিবদের দ্বিতীয় জয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। বাজে শুরুর পর অধিনায়ক সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে অনেকটা পথ পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। শেষ দিকে নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদি হাসান, অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবদের লড়াইয়ে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান তোলে তারা। জবাবে শুভমানের গিলের সেঞ্চুরির পর অক্ষর প্যাটেলের লড়াইয়ের পরও ১ বল বাকি থাকতে ২৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।
ভারতের বিপক্ষে জিতে এশিয়া কাপ শেষ করলেও এবারের আসরটি অবশ্য মনে রাখার মতো নয় বাংলাদেশের জন্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ গড়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিববাহিনী। সুপার ফোরে টানা দুই ম্যাচে তেমন লড়াই-ই করতে পারেনি তারা, সঙ্গী হয় হার। শেষ ম্যাচে মিললো ভারতকে হারানোর আনন্দ। তবে আফগানিস্তান ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচেই ব্যাটিং নিয়ে ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। জয় পাওয়া এই ম্যাচেও ব্যাটিং নিয়ে হতাশা থাকার কথা, লড়াইয়ের পুঁজি মেলে শেষের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা ভারতকে শুরুতেই চেপে ধরেন তানজিম সাকিব। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেওয়া ডানহাতি এই পেসার তৃতীয় ওভারে থামান ভারতের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তীলক ভার্মাকে। ১৭ রানেই দুই উইকেট হারানো দলকে ছন্দে ফেরান সেঞ্চুরিয়ান শুভমান ও লোকেশ রাহুল।
১৯ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদি। ইশান কিশানও টিকতে পারেননি, এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে বিদায় করে মেহেদী হাসান মিরাজ। এখান থেকে শুভমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সূর্যকুমার যাদব। এই জুটি থেকে ৪৫ রান পায় ভারত। ২৬ রান করে সূর্যকুমার আউট হওয়ার পর রবীন্দ্র জাদেরজার সঙ্গে ৩১ রানের জুটি গড়েন শুভমান।
জাদেজা ৭ রান করে আউট হন, কিন্তু ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা শুভমান এক পাশ আগলে খেলে যান। সপ্তম উইকেটে অক্ষরের সঙ্গে ৩৯ রানরে জুটি গড়েন ডানহাতি এই ওপেনার। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন শুভমান। ১৩৩ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্বায় ১২১ রান করে বিদায় নেন তিনি।
এরপর অক্ষর প্রায় একাই লড়েছেন, কিন্তু ৪৯তম ওভার পর্যন্ত ব্যাট চালিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন অক্ষর। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম সাকিব ৭.৫ ওভারে ২টি উইকেট নেন। তিন ম্যাচ পর সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান ৮ ওভারে ৫০ রানে পান ৩টি উইকেট। ৯ ওভারে সমান রান খরচায় ২ উইকেট নেন শেখ মেহেদি। একটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব ও মিরাজ।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানেই বিদায় নেন লিটন কুমার দাস। রানের খাতা খোলার আগেই ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামির দারুণ এক ডেলিভারিতে উপড়ে যায় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের স্টাম্প। প্রথম উইকেট হারানোর চাপ সামলানোর আগেই থামেন ভালো শুরু করেও হতাশাজনকভাবে আউট হওয়া তানজিদ হাসান তামিম। ব্যাটে লেগে বোল্ড হন ১২ বলে ৩টি চারে ১৩ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার।
তৃতীয় উইকেটের পতনও কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়। দলীয় ২৮ রানে ক্যাচ তুলে আউট হন দীর্ঘদিন পর সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়, ১১ বলে ৪ রান করেন তিনি। ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের চাপ আরও বাড়ে ১৪তম ওভারে, অক্ষর প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
৫৯ রানেই নেই প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশ তখন দিকহারা। এখান থেকে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব ও হৃদয়। উইকেটে মানিয়ে নিতে সময় নিলেও এ দুজন অনেকটা পথ লড়াই করেন। পঞ্চম উইকেটে ১১৫ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন তারা। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৫তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। আর একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ হাফ সেঞ্চুরির (৫৬টি) মালিক তামিম ইকবালকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি।
সাকিবের বিদায়ে এই জুটি ভাঙে, ফেরার আগে ৮৫ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৮০ রান করেন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পরের ওভারেই থামেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী, ৫ বলে ১ রান করেন তিনি। এরপর নাসুমের সঙ্গে ৩২ রানের জুটি গড়েন হৃদয়। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৮১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৪ রান করে আউট হন।
হৃদয়ের বিদায়ের পর শেখ মেহেদির সঙ্গে জুটি গড়েন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা নাসুম। এই জুটি ৩৬ বলে ৪৫ রান যোগ করেন। ব্যাটসম্যানদের দৈন্যতার মাঝেও দারুণ ব্যাটিং করা নাসুম ৪৫ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৪ রান করেন। নবম উইকেটে ১৬ বলে ২৭ রানের জুটি গড়েন শেখ মেহেদি ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। মেহেদি ২৩ বলে ৩টি চারে ২৯ ও সাকিব ৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের পেসার শার্দুল ঠাকুর ৩টি ও মোহাম্মদ শামি ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান প্রসিদ কৃষ্ণ, অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজা।