নিউজিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে জয়ের মালা বড় করল ভারত
এ এক মধুর সমস্যা! প্রতিপক্ষের দলের রানও যখন কোনো ব্যাটসম্যানের কাছে কম মনেহয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে এক রান নিচ্ছিলেন না বিরাট কোহলি, রান হয়ে যাবে বলে সঙ্গী লোকেশ রাহুলও ব্যাট চালাচ্ছিলেন না। দারুণ ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই আবহ তৈরি করলেন কোহলি, আরেকটি সেঞ্চুরি ছুঁতে এগোলেন আগের উপায়েই। এবার রাহুলের মতো করে সঙ্গ দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। যদিও এবার আর একই গল্প লেখা হলো না, ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন ফিল্ডারের হাতে।
কোহলির বিদায়ে পুরো গ্যালারিতে হঠাৎ-ই নিরবতা, 'কোহলি, কোহলি' বলে গলা ফাটানো ভারতীয় সমর্থকরাও যে খুব করে চাইছিলেন তার সেঞ্চুরি। এ দফায় তা আর হলো না, তবে ভারতের বিজয়ের নিশান উড়লো ঠিকই। নিউজিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে জয়ের মালা বড় করে নিল বিশ্বকাপের আয়োজকরা। রোববার ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত।
বিশ্বকাপে এটা ভারতের টানা পঞ্চম জয়। ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে গেল রোহিত শর্মার দল। গত কিছুদিন ধরে শীর্ষস্থান দখলে রাখা নিউজিল্যান্ডের জায়গা হলো দুই নম্বরে। চার ম্যাচ পর প্রথম হারের স্বাদ নিতে হলো বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্স আপদের। সমান গতিতে এগোচ্ছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। দল দুটির সামনে বাধার দেয়াল তুলতে পারছিল না কোনো প্রতিপক্ষই। দুই দলেরই টানা চার ম্যাচে জয়। পঞ্চম ম্যাচে এসে থামতে হলো এক দলকে, এগিয়ে গেল অন্যরা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামির বিপক্ষে ভালোই ভুগতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। একাই ৫ উইকেট নেন ম্যাচসেরা হওয়া ডানহাতি এই পেসার। এরপরও ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরি ও রাচিন রবীন্দ্রর ৭০ পেরোনো ইনিংসে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাবে উড়ন্ত সূচনার পরও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুইবার চাপে পড়ে ভারত। কিন্তু কোনোবারই দলকে দিক হারাতে দেননি আরও একটি চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলা কোহলি। দারুণ সঙ্গ দেন শ্রেয়াস, রাহুল, জাদেজারাও। ১২ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ভারত।
লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরু হয় ভারতের। উদ্বোধনী জুটিতে ১১.১ ওভারে ৭১ রানের জুটি গড়েন তাদের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। এ সময় মারকুটে মেজাজে ব্যাটিং করেন ভারতীয় অধিনায়ক, শুভমান কেবল তাকে সঙ্গ দিয়ে যান। ১২তম ওভারে কিউই পেসার লকি ফার্গুসনের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হন ৪০ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান করা রোহিত।
কিছুক্ষণ পরই থামেন শুভমান। ৩১ বলে ৫টি চারে ২৬ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে দ্রুততম ২ হাজার রান পূর্ণ করার রেকর্ড করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৮ ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন তিনি, এতোদিন রেকর্ডটি দখলে রাখা দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা ৪০ ইনিংসে দুই হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন।
দারুণ শুরু পর পাঁচ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়ে যায় ভারত। যদিও এই চাপ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি তাদের। তৃতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়েন কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। দলীয় ১২৮ রানে শ্রেয়াসের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ২৯ বলে ৬টি চারে ৩৩ রান করেন তিনি। শ্রেয়াসের পর লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়েন কোহলি।
২৭ রান করা রাহুল দলীয় ১৮২ রানে বিদায় নিলেও হঠাৎ চাপে পড়ে ভারত, কারণ ৯ রান পর সাজঘরে ফেরেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পাওয়া সূর্যকুমার যাদবও। এবারও বেগ পেতে হয়নি ভারতকে। রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের একেবারে কাছে পৌঁছে দেন দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলা কোহলি।
বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেও ১০৪ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৫ রানে থামতে হয় তাকে। বিশ্বকাপে এটা তার নবম হাফ সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডের ৬৯তম। শামিকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করা জাদেজা ৪৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন ২টি উইকেট পান। একটি করে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি ও মিচেল স্যান্টনার।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে ধুঁকছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার। রানই নিতে পারছিলেন না তারা। দলীয় ৯ রানে আসে প্রথম ধাক্কা। মোহাম্মদ সিরাজের বলে ক্যাচ তুলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান ডেভন কনওয়ে।
১৭ রান করা আরেক ওপেনার উইল ইয়াংও বেশি সময় টিকতে পারেননি। শার্দুল ঠাকুরের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। লাফিয়ে ওঠা বলে শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালিয়ে ইনসাইডজ এজ হন ইয়াং। ৮.১ ওভারে কিউইদের স্কোরকার্ডে জমা হয় মাত্র ১৯ রান, হারায় দুই উইকেট।
এমন অবস্থা থেকে হাল ধরেন রবীন্দ্র ও মিচেল। চাপ কাটিয়ে দারুণ ব্যাটিং করা এ দুজন তৃতীয় উইকেটে গড়েন ১৫৯ রানের জুটি। যা বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম ও তৃতীয় উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি। ৮৭ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৫ রান করা রবীন্দ্রকে বিদায় করে এই জুটি ভাঙেন বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই অসাধারণ বোলিং করা শামি।
এরপর শামি-কুলদীপের তোপের মুখে দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। টম ল্যাথাম ৫ রান করে বিদায় নেন, গ্লেন ফিলিপস ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৩ রান করে থামেন কিউই এই ব্যাটসম্যান। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে পথ দেখিয়ে আসা মিচেল এরপরও অবিচল থাকেন, ব্যাটিং করেন শেষ ওভার পর্যন্ত।
শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ার আগে ১২৭ বলে ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৩০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়ানডেতে এটাই তার সেরা ইনিংস, আগের সেরা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২৯। ইয়াং, রবীন্দ্র, মিচেল ও ফিলিপস ছাড়া নিউজিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। শামি ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৫টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান কুলদীপ। একটি করে উইকেট নেন বুমরাহ ও সিরাজ।