এক নজরে বিপিএলের ৯ ফাইনাল
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আরেকটি আসর শেষ হওয়ার পথে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটির দশম আসরে প্রায় দেড় মাসের লড়াই শেষে ফাইনালের টিকেট কেটেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতার ম্যাচে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লড়বে দল দুটি।
বিপিএলে সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা, ফাইনালে কখনই হারেনি তারা। এবার টানা তৃতীয় শিরোপা জেতার হাতছানি সফলতম দলটির সামনে। প্রথম শিরোপার আশায় থাকা ফরচুন বরিশাল এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। ২০২২ এর আসরের ফাইনালে কুমিল্লার বিপক্ষেই হার মানে তারা। সেই হিসেবে কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচটি আজ বরিশালের জন্য প্রতিশোধের মিশনও।
সেরা দুই দলের লড়াইটা জমবে, কুমিল্লা-বরিশালের ক্রিকেটারদের মতো এমন প্রত্যাশা দল দুটির ভক্ত-সমর্থকদেরও। লড়াইটি দেখতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। এর আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, আগের ৯ আসরের ফাইনাল কেমন ছিল।
২০১২ ফাইনাল (ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-বরিশাল বার্নার্স): ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় বিপিএল। প্রথম আসরেই বাজিমাত করে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। বরিশাল বার্নার্স দারুণ খেললেও ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। ১৪১ রানের লক্ষ্যে ২৬ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় ঢাকা। বরিশালের অধিনায়ক ব্র্যাড হজের হার না মানা ৭০ রানের ইনিংস বিফলে যায়। লক্ষ্য তাড়ায় ম্যাচসেরা ইমরান নাজিরের ঝড়ো গতির ৭৩ ও এনামুল হক বিজয়ের অপরাজিত ৪৯ রানে সহজেই জেতে ঢাকা। এর আগে বল হাতে ঢাকাকে পথ দেখান শহিদ আফ্রিদি ও নাভেদ-উল-হাসান। আফ্রিদি ৩টি ও নাভেদ ২টি উইকেট নেন।
২০১৩ ফাইনাল (ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-চিটাগং কিংস): বিপিএলের দ্বিতীয় আসরেও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের রাজত্ব চলে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা দলটি চিটাগং কিংসকে হতাশায় ডুবিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে এনামুল হক বিজয়ের ৫৮ ও সাকিব আল হাসানের ৪১ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ১৭২ রান তোলে ঢাকা। জবাবে আলফনসো থমাস ও প্রয়াত মোশাররফ হোসেন রুবেলের বোলিং তোপে ১৬.৫ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট হয় চিটাগং, ৪৩ রানে জেতে ঢাকা। থমাস ও ম্যাচসেরা রুবেল ৩টি করে উইকেট নেন।
২০১৫ ফাইনাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-বরিশাল বুলস): ২০১৩ সালের ফিক্সিং কাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৪ সালে বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৫ সালে নতুন চ্যাম্পিয়ন পায় আসরটি। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের শেষ বলে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয়ে শিরোপার আনন্দে মাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগে ব্যাটিং করে সেকুগে প্রসন্নর ৩৩, শাহরিয়ার নাফিসের ৪৪ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪৮ রানের সুবাদে ৪ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে বরিশাল। জবাবে ইমরুল কায়েসের ৫৩ ও আহমেদ শেহজাদের ৩০ রানের ইনিংসের পর ম্যাচসেরা অলোক কাপালির অপরাজিত ৩৯ রানে শেষ বলে জয় নিশ্চিত হয় কুমিল্লার।
২০১৬ ফাইনাল (ঢাকা ডাইনামাইটস-রাজশাহী কিংস): মালিকানা বদলে এই আসরে ঢাকার নামও বদলায়। ঢাকা ডায়নামাইটস নামে খেলা দলটি ফাইনালে রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে গুঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এভিন লুইসের ৪৫ ও ম্যাচসেরা কুমার সাঙ্গাকারার ৩৬ রানে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে ঢাকা। জবাবে আবু জায়েদ রাহি, সাকিব আল হাসান, সানজামুল ইসলামদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ১৭.৪ ওভারে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহীর ইনিংস।
২০১৭ ফাইনাল (রংপুর রাইডার্স-ঢাকা ডায়নামাইটস): এই আসরে অনেক কষ্টে ফ্লেঅফ নিশ্চিত করা রংপুর রাইডার্স শেষ পর্যন্ত বিজয় নিশান ওড়ায়। ফাইনালে তারা ৫৭ রানে উড়িয়ে দেয় ঢাকাকে। ম্যাচসেরা ক্রিস গেইলের অপরাজিত ১৪৬ ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অপরাজিত ৫১ রানের সুবাদে ১ উইকেটে ২০৬ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে রংপুর। লক্ষ্য তাড়ায় সোহাগ গাজী, ইসুরু উদানা, নাজমুল ইসলাম অপুদের বোলিং তোপে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি ঢাকা।
২০১৮ ফাইনাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-ঢাকা ডায়নামাইটস): টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে ঢাকা ডায়নামাইটস। আগেরবার রংপুরের কাছে শিরোপা হারানো দলটি এবারও হতাশায় ডোবে। শিরোপার লড়াইয়ে ঢাকাকে ১৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা। ম্যাচসেরা তামিম ইকবালের মহাকাব্যিক ১৪১ রানের সুবাদে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান তোলে কুমিল্লা। বড় লক্ষ্য তাড়ায় উপুল থারাঙ্গার ৪৮, রনি তালুকদারের ৬৬ রানের ইনিংসের পরও ৯ উইকেটে ১৮২ রানে থামে ঢাকা।
২০১৯ ফাইনাল (রাজশাহী রয়্যালস-খুলনা টাইগার্স): আন্দ্রে রাসেলময় আসরে ফাইনালে ওঠে রাজশাহী রয়্যালস। ফাইনালেও চলে ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডারের দাপট। ফাইনাল সেরা ও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতা রাসেলের অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ নেয় রাজশাহী। আগে ব্যাটিং করে ইরফান শুক্কুরের ৫২, মোহাম্মদ নওয়াজের ক্যামিও ৪১ ও রাসেলের ২৭ রানে ৪ উইকেটে ১৭০ রান তোলে রাজশাহী। জবাবে মোহাম্মদ ইরফান, রাসেল, কামরুল ইসলাম রাব্বিদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ৮ উইকেটে ১৪৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা খুলনা।
২০২২ ফাইনাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-ফরচুন বরিশাল): কোভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়নি। আসরটি ফেরার পর্বে দাপট দেখিয়ে শিরোপা জেতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তৃতীয়বারের মতো শিরোপার স্বাদ নেওয়ার পথে ফাইনালে তারা হারায় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশালকে। উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালে বরিশালকে ১ রানে হারায় কুমিল্লা। আগে ব্যাটিং করে ম্যাচসেরা সুনিল নারাইনের ৫৭ ও মঈন আলীর ৩৮ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ১৫১ রান তোলে তারা। জবাবে ক্রিস গেইলের ৩৩ ও সৈকত আলীর দুর্বার ৫৮ রানের পরও ১৫০ রানে থেমে যায় বরিশাল। হাফ সেঞ্চুরি করা নারাইন ২ উইকেট নেন, ২ উইকেট পান তানভীর ইসলামও।
২০২৩ ফাইনাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-সিলেট স্ট্রাইকার্স): এই আসরেও শাসন জারি রাখে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে দারুণ আসর কাটানো সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ফাইনালে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় কুমিল্লা। টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে বিপিএলের চতুর্থ শিরোপা জেতে দলটি। আগে ব্যাটিং করা সিলেট নাজমুল হোসেন শান্তর ৬৪ ও মুশফিকুর রহিমের ৭৪ রানে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান তোলে। এই রানও কুমিল্লার কাছে মামুলি থেকে যায় লিটন কুমার দাস ও ম্যাচসেরা জনসন চার্লসের দাুপটে ব্যাটিংয়ে। লিটন ৫৫ ও চার্লস অপরাজিত ৭৯ রান করেন। শেষ দিকে মঈন আলী হার না মানা ২৫ রান করেন।