দুর্বার রাজশাহীর অনুশীলন বাতিলের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) মাঠে গড়ানোর আগে থেকেই আলোচনায় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি। আগের আসরগুলোয় ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া এবং টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধের নিয়ম মানা হলেও এবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি বিসিবি। যে কারণে প্রায়ই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে। আজ বুধবারের খবর, পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া চেক বাউন্স হওয়ায় চট্টগ্রামে অনুশীলন বাতিল করেছেন দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা।
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আজ সকাল ১০টায় অনুশীলন শুরুর কথা ছিল রাজশাহীর, যা আগের দিন নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক বিবৃতিতে জানায় বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। কিন্তু আজ অনুশীলন শুরুর মাত্র ১২ মিনিট আগে সেটা বাতিল করে রাজশাহী। দলটির বিবৃতিতে জানানো হয়, আজকের অনুশীলন বাতিল করে ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর থেকে গুঞ্জন ছড়ায়, স্থানীয় পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ টাকার চেক বাউন্স হওয়ায় ক্রিকেটাররা অনুশীলন বয়কট করেছে। এ নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে খবর প্রকাশ করেছে। যদিও দুর্বার রাজশাহী কৃর্তৃপক্ষের দাবি, অনুশীলন বাতিলের সঙ্গে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পাওয়া না পাওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিছু ক্রিকেটারের বিশ্রামের কথা চিন্তা করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকজন ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের দৈনিক ভাতা বয়েকা থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করেছে রাজশাহী কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করলে দুর্বার রাজশাহীর কর্তৃপক্ষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানায়, সিলেট পর্ব শেষে কয়েকজন ক্রিকেটার দুদিনের ছুটিতে ছিলেন। আজ সকালে তাদের চট্টগ্রামে গিয়ে পৌঁছানোর কথা। ভ্রমণ করে গিয়ে অনুশীলনে নামলে ক্রিকেটারদের ধকল যাবে, তাই আজকের অনুশীলন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজশাহীর টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন ক্রিকেটারের অনুরোধের কারণে আজকের অনুশীলন বাতিল করা হয়েছে, তাদের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে এই কর্মকর্তার কথাতেই উঠে আসে চেক বাউন্স হওয়ার বিষয়টি। চেক বাউন্স হওয়ার খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, 'কয়েকজন ক্রিকেটারের চেক বাউন্স হয়েছে, এটা সত্যি। তবে চেক জমা দেওয়া ব্যাপারে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। আমাদের দলের সত্ত্বাধিকারী দেশের বাইরে থাকায় স্থানীয় ক্রিকেটারদের ১৬ জানুয়ারি চেক জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু কেউ কেউ ব্যাপারটি না বুঝে আগেই চেক জমা দেয়। চেকে স্বাক্ষরকারী দেশের বাইরে থাকায় ব্যাংক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি, আর এখানেই সমস্যা হয়েছে। কালকের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আর দৈনিক ভাতা বয়েকার বিষয়টি সত্য নয়।'
স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে দুর্বার রাজশাহীর সত্ত্বাধিকারী শফিক রহমান দেশের বাইরে আছেন। দলটির দাবি, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভেরিফাই করতে না পারায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কয়েকজন ক্রিকেটারের চেক জমা নেয়নি। তবে পারিশ্রমিক ইস্যুতে রাজশাহীর অবস্থান যে স্বচ্ছ, তেমনও নয়। দলটি জানায়, বিদেশি ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিকের চেক দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দেরিতে চেক দেওয়া এবং তা বাউন্স হওয়ায় ক্রিকেটারদের মধ্যে অসেন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিপিএল মাঠে গড়িয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। শুরুর আগে থেকেই সব ফ্র্যাঞ্চাইজি জানায়, দ্রুততার সঙ্গে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেওয়া হবে, বিসিবির পক্ষ থেকেও একই রকম বক্তব্য আসে। কোনো কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের দেওয়া কথা রাখলেও অনেকে এখনও নতুন নতুন তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী তাদের মধ্যে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। সিলেট পর্বের শুরুতে রাজশাহীর এক ক্রিকেটার টিবিএসকে জানান, দুই-একদিনের মধ্যে তাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই ক্রিকেটার এখনও পারিশ্রমিক বুঝে পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে এই ক্রিকেটার বলেন, 'গত ৬ তারিখে আমাকে বলা হয়, দুই-এক দিনের মধ্যে পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেব। কিন্তু এর মধ্যে ৮-৯ দিন চলে গেলেও আমি পারিশ্রমিক বুঝে পাইনি। উল্টো আমাদের কারও কারও চেক বাউন্স হয়েছে। যে কারণেই হোক, এমন হওয়াটা খুবই হতাশার। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার ১৫ দিন হেয় গেছে, কিন্তু এখনও টাকা চাইতে হচ্ছে, এটা তো কোনো নিয়মের মধ্যে পড়তে পারে না। নতুন করে কাল দেওয়ার কথা জানিয়েছে, দেখা যাক তারা এবার কথা রাখে কিনা। তবে কালকের মধ্যে পারিশ্রমিক বুঝে না পেলে আমরা ক্রিকেটাররা কী করতে পারি, তা নিয়ে ভাববো।'
বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ঠিক সময়ে না দেওয়া, বকেয়া রাখার মতো বিষয়গুলো নতুন কিছু নয়। আসরটির পথচলার শুরুর দিকে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক আদায়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (ফিকা)। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে ব্যাংক গ্যারান্টি ও আসর শুরুর আগে ৫০ শতাংশ অর্ত পরিশোধের নিয়ম করে বিসিবি। কিন্তু এবার একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ছাড়া কেউ-ই ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়নি, আসর শুরুর আগে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিকও পাননি ক্রিকেটাররা। যদিও অনেক দিন বদলের কথা শুনিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, পারিশ্রমিক নিয়ে এবার কোনো অভিযোগই করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।