ভাঙা মনে ঘরের মাঠের পর্ব শেষ সিলেট স্ট্রাইকার্সের
চিটাগং ভাইকিংসের দেওয়া বড় লক্ষ্য তাড়ায় ঢিমেতালে এগোলেও পরে সম্ভাবনা জাগায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায়, ম্যাচটি তাদের জেতা হচ্ছে না। প্রিয় দলের হারের দৃশ্য না দেখতে আগেই গ্যালারি ছেড়ে গেছেন কেউ কেউ। 'রানটা বেশি হয়ে গেছে' বলে আফসোস করছিলেন তারা। ম্যাচটি সিলেট হেরেছে, ঘরের মাঠে এভাবে শেষ করায় তারা হতাশ। দলটির ভক্ত-সমর্থকরাও তাই। তবে তাদের বেশি মন খারাপ সিলেট থেকে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)।
৩০ ডিসেম্বর মাঠে গড়ানো ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি এই টুর্নামেন্টটি সিলেটে আসে ৪ জানুয়ারি, মাঠের লড়াই শুরু হয় ৬ জানুয়ারি। ছয় দিনে এই পর্বে ছিল ১২টি ম্যাচ। আজ সোমবার একাদশতম ম্যাচটি খেললো সিলেট, যে ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিকক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৩০ রানে হেরেছে তারা। সন্ধ্যার ম্যাচে লড়বে খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রাইডার্স। গ্যালারিতে আসা দর্শকরা আরও একটি ম্যাচ দেখতে পাবেন, কিন্তু বিপিএলের বিদায়ের কথা ভেবে আগে থেকেই যেন তাদের মন খারাপ।
তুমুল আগ্রহের কারণেই সিলেটের ক্রিকেট ভক্তদের এই মন খারাপ। এই পর্বে অনুষ্ঠিত প্রায় সব ম্যাচেই গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। ঘরের মাঠের দল সিলেটের জন্য সবাই গলা ফাটিয়েছেন, অন্য ম্যাচেও আগ্রহের কমতি ছিল না। এক টিকেটে দুই ম্যাচ দেখার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন মাঠে আসা সিংহভাগ দর্শক। ম্যাচের ছয় দিন উৎসবের মঞ্চে পরিণত হয়েছিল সিলেট স্টেডিয়াম। কাল থেকে আর ক্রিকেটের এই উৎসব এখানে থাকবে না, এটা ভাবতেই আফসোস বেড়ে যাচ্ছে সিলেটবাসীর।
রুদ্র নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বললেন, 'প্রতিদিন মাঠে এসে খেলা দেখেছি। বিশেষ করে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জন্য এসেছি। আমাদের দলকে সমর্থন দিয়েছি, অন্য ম্যাচও দেখেছি। দেখেছেন হয়তো, কোনো ম্যাচেই গ্যারারি ফাঁকা থাকেনি। সব সময় গ্যালারি ভরা ছিল। মন খারাপ হচ্ছে বিপিএল চলে যাচ্ছে বলে।' সজিব নামের আরেকজন বলেন, 'এখানে বেশি ম্যাচ পাই না আমরা, তাই ম্যাচ হলে উৎসব মনে হয় আমাদের। গত কয়েকদিন ক্রিকেট মাঠে খুব সুন্দর সময় গেছে। বিসিবির কাছে আবেদন থাকবে, অন্তত বিপিএলে যেন এখানে আরও বেশি ম্যাচ দেওয়া হয়।'
এবারের বিপিএল হার দিয়ে শুরু করে সিলেট। ঘরের মাঠে এসেও হারে আরও দুই ম্যাচে। তবে ঘরের মাঠে সুখস্মৃতি মেলে দলটির। টানা তিন হারের পর জেতে টানা দুই ম্যাচ। সিলেটে তারা পাঁচ ম্যাচ খেলে জিতেছে দুটি ম্যাচ। জয়ের পথ খুঁজে পাওয়া দলটির ঘরের মাঠের অভিজ্ঞতা আরও ভালো হতে পারতো আজকের ম্যাচটি জিতলে। কিন্তু চিটাগং কিংসের রান পাহাড় তাড়া করে জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি আরিফুল হকের দল। ছয় ম্যাচে দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচ নম্বর দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। টানা তিন জয় তুলে নেওয়া চিটাগং ছয় পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নম্বর দল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে চিটাগং ভাইকিংস। দাপুটে ব্যাটিংয়ে শুরু করা দলটি পুরো ইনিংসে সিলেট বোলারদের শাসন করেছে। উসমান খান, গ্রাহাম ক্লার্কের হাফ সেঞ্চুরির পর হায়দার আলীর ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে ৬ উইকেটে ২০৩ রান তোলে চিটাগং। চলতি আসরে এটা তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে জর্জ মানজির হাফ সেঞ্চুরি ও শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানো জাকের আলী অনিকের ব্যাটিং ঝড়ের পরও ৮ উইকেটে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ইনিংস থামে ১৭৩ রানে।
মানজি ৩৭ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫২ রান করেন। কিন্তু তার ব্যাটিং ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০'র বেশি রান তাড়ায় শুরুর দিকে হেলেদুলে ব্যাটিং করেন স্কটল্যান্ডের এই ওপেনার। তার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য জুটি গড়া অ্যারন জোন্সও একই তালে এগোনে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাটসম্যান ১৮ বলে ২টি চারে ১৫ রান করেন। এর আগে জাকির হাসানও দ্রুত রান তুলতে পারেননি, দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৫ রান করেন।
প্রয়োজনমাফিক ব্যাট চালিয়েছেন কেবল জাকের আলী। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান যোগ্য সঙ্গীর অভাবে দলের মুখে হাসি ফোটাতে পারেননি। খুনে ব্যাটিংয়ে ২৩ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের। অধিনায়কও আরিফুলও তেড়েফুঁরে শুরু করেছিলেন, কিন্তু বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। ৭ বলে ২টি ছক্কায় ১২ রান করে আউট হন তিনি। ব্যাটিং করা সিলেটের বাকি পাঁচজন দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি, দুজন ফেরেন শূন্য রানে। চিটাগংয়ের মোহাম্মদ ওয়াসিম ৩টি ও আলিস আল ইসলাম ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাবিল সামাদ, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ।
এর আগে ব্যাটিং করা চিটাগংয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন গ্রাহাম ক্লার্ক। ইংল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে রান করে চলা চিটাগংয়ের পাকিস্তানি ওপেনার আজও দাপট দেখান। ৩৫ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৩ রান করেন তিনি। অধিনায়ক মোহাম্ম মিঠুন ১৯ বলে ২টি ছক্কায় ২৮ রান করেন। তাণ্ডব চালানো হায়দার আলী ১৮ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। সিলেটের পেসার তানজিম হাসান সাকিব ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাহিদুল ইসলাম, রুয়েল মিয়া ও আরিফুল হক।