ডাচদের হারিয়ে সুপার এইটের পথে এগিয়ে রইলো বাংলাদেশ
দীর্ঘদিন পর হাসলো সাকিব আল হাসানের ব্যাট, দাুপটে ব্যাটিংয়ে খেললেন দুর্বার এক ইনিংস। সঙ্গে থাকলো তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিকের লড়াইও। তাতে যে সংগ্রহ মিললো, নির্ভার থাকার উপায় ছিল না। শুরুর চাপ কাটিয়ে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডসের জুটিতে যেভাবে এগোতে থাকে নেদারল্যান্ডস, কাঁপনই ধরেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু জোড়া উইকেট নিয়ে মুহূর্তেই চিত্র পাল্টে দিলেন রিশাদ হোসেন, সুর মিলিয়ে দারুণ বোলিং করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ডাচদের হারিয়ে সুপার এইটের পথে এগিয়ে থাকলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংসটাউনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের 'ডি' গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে এটা তাদের দ্বিতীয় জয়, নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারায় দলটি। শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জিতলেই কোনো হিসাব ছাড়াই সুপার এইটে উঠে যাবে বাংলাদেশ, হারলেও থাকবে সম্ভাবনা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাচদের বিপক্ষে নিজেদের অপরাজেয় থাকার রেকর্ড অক্ষত রাখলো বাংলাদেশ, এ নিয়ে তিন ম্যাচের সব কটিতেই জিতলো তারা। এই ফরম্যাটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের চতুর্থ জয়।
টানা তিন জয়ে 'ডি' গ্রুপ থেকে সুপার এইটে উঠে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে একটি জয় পাওয়া নেদারল্যান্ডস তিন নম্বরে। এক পয়েন্ট করে পাওয়া নেপাল ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে চার ও পাঁচ নম্বরে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শ্রীলঙ্কার বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ, বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ফল এলেই লঙ্কানদের বিদায় নিশ্চিত ছিল। বাকি থাকা ম্যাচে জিতলেও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট হবে ৩, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে কম।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। চার ওভারের মধ্যেই দুই উইকেট হারালেও তানজিদ হাসান তামিম ও সাকিব আল হাসানের জুটিতে ছন্দ মিলে যায়। তানজিদ ফিরলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন দীর্ঘ ১ বছর আট মাস পরে টি-টোয়েন্টিতে হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিব। ম্যাচসেরা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে শেষ দিকে যোগ দিয়ে অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী অনিকও। এর চারজনের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ, যা এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা বলার মতো না হলেও গুছিয়ে নিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এঙ্গেলব্রেখট ও এডওয়ার্ডসের ব্যাটে জয়ের দিকেই আগাচ্ছিল তারা। কিন্তু ১৫তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রিশাদ, এক ওভার পরে উইকেট নেওয়াসহ নিজের বাকি ওভারগুলোতে দুর্বার থাকেন মুস্তাফিজুর রহমান। একটু খরুচে হলেও ঠিক সময়ে আঘাত হেনে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তানজিম হাসান সাকিবও মাহমুদউল্লাও ভোগান ডাচদের। বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ৮ উইকেটে ১৩৪ রানে থামে নেদারল্যান্ডস।
লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরু করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডাচ ওপেনার মাইকেল লেভিট। ১৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ফেরান তাসকিন আহমেদ। এক ওভার পরই ম্যাক্স ও'ডাউডকে ফেরান তানজিম। ৩৭ রানের জুটি গড়ে এই চাপ কাটান এঙ্গেলব্রেখট ও বিক্রমজিৎ সিং। এ সময়ে বিক্রমজিৎ বেশি মারকুটে মেজাজে ছিলেন। ১৬ বলে ৩টি ছক্কায় ২৬ রান করেন তিনি। ম্যাচে একটি ওভার করা মাহমুদউল্লাহ তৃতীয় বলে তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন।
এই জুটির পরও অস্বস্তিতে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। অধিনায়ক এডওয়ার্সের সঙ্গে আরেকটি জুটি গড়ে তোলেন এঙ্গেলব্রেখট। তখন মনে হচ্ছিল জয়ের পথেই আছেন তারা। কিন্তু ১৫তম ওভারে ডাচদের দিক ভুলিয়ে দেন রিশাদ। ২২ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করা এঙ্গেলব্রেখটকে ফেরানোর পর এই ওভারের শেষ বলে তুলে নেন বাস ডে লেডের উইকেটও। ২৩ বলে ২৫ রান করা এডওয়ার্ডসকে ১৭তম ওভারে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। বাকি সময়ে ১৭ রান তোলে নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশের প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা রিশাদ বল হাতে স্বপ্নের মতো সময় কাটাচ্ছেন। তিন ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া এই তরুণ বোলার আজ ৪ ওভারে ৩৩ রানে নেন ৩টি উইকেট, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও তার শিকার ছিল ৩ উইকেট। মুস্তাফিজ বেশি উইকেট না পেলেও রান খরচায় কৃপণ ছিলেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দেন তিনি, নেন একটি উইকেট। ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট নেন তাসকিন। ৩ ওভারে ২৩ রানে তানজিমের শিকার এক উইকেট। মাহমুদউল্লাহ এক ওভারে ৬ রানে একটি উইকেট পান। আগের দুই ম্যাচের মতো আজও উইকেট পাননি সাকিব, ৪ ওভারে তার খরচা ২৯ রান।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ চার ওভারের মধ্যে দুই উইকেট হারালেও চাপে পড়েনি। তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ে দাপুটে ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তানজিদ ও সাকিব। তৃতীয় উইকেটে ৩২ বলে ৪৮ রান যোগ করেন তারা। মাহমুদউল্লাহ সঙ্গেও ৩২ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন এক বছর আট মাস পর টি-টোয়েন্টিতে হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিব। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার ৪৬ বলে ৯টি চারে ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন।
সাকিবের এটা টি-টোয়েন্টিতে ১৩তম ও বিশ্বকাপের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। তরুণ এই ওপেনার তানজিদ ২৬ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে করেন ২৫ রান। ৭ বলে ৩টি চারে অপরাজিত ১৪ রান করেন জাকের। আজও ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ১ রান করেন তিনি। লিটন কুমার দাসও ১ রান করে থামেন। আগের দুই ম্যাচের কাণ্ডারি তাওহিদ আজ ১৫ বলে ৯ রান করেন। নেদারল্যান্ডসের আরিয়ান দত্ত ও পল ফন মেকেরেন ২টি করে উইকেট পান।