সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাওয়াটা অবান্তর, বলছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আগামী মাসে ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট কেরতে চান তিনি। এই ম্যাচ খেলতে দেশে ফিরতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। তার এমন চাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য সাড়া দেয়নি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি।
এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য হওয়ায় সাকিবের বিরুদ্ধে জনমনে তৈরি হওয়া ক্ষোভের বিপরীতে তার নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাওয়ার ব্যাপারটি অবান্তর। একই সঙ্গে সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বানও জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা।
তার মতে, ক্রিকেটার সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হলেও জনগণের ক্ষোভ থাকলে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। রোববার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'খেলোয়াড় সাকিবের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আছে। তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে জনমনে তৈরী হওয়া ক্রোধের বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর।'
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে খেলছেন সাকিব। পাশাপাশি গত জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই তারকা। তার দুটি পরিচয়ের কারণে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'এখানে সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটি, এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। খেলোয়াড় হিসেবে একটা পরিচয়, আরেকটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়। উনি আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে এমপি নির্বাচন করেছিলেন। মানুষের মধ্যে এই দুটি নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।'
সাকিবকে তার রাজনৈতিক পরিচয় পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, দেওয়ার দায়িত্ব, সেটা দেব, দেশে এলে আমরা দেব। কিন্তু উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে…। মনে করেন আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল থাকে, একজন গানম্যান থাকে। আমার উপরে যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দশ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই পাঁচ ছয়জন আমাকে কী নিরাপত্তা দেবে? আমারও সেই ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।'
'জনগণের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটা তো আমাকেই রিডিউস করতে হবে, কথা দিয়ে। আমার যেটা মনে হয়, উনাকে উনার বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, রাজনৈতিক জায়গা থেকে। উনার যে রাজনৈতিক অবস্থান… ইতোমধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা কথা বলেছেন সে বিষয়টি নিয়ে। জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটার (নিশ্চয়তা) কেউ কাউকে দিতে পারবে না, শেখ হাসিনাকেও দেওয়া যায়নি, দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সেই জায়গাটা, রাজনৈতিক বিষয়টা, পরিষ্কার করা উচিত বলে আমি মনে করি। খেলোয়াড় হিসেবে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, এটা আমরা পালন করব।' যোগ করেন তিনি।
দেশে ফিরে খেলতে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে সাকিব বলেছিলেন, 'আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।' সাকিব পরিষ্কার করেই জানান, সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে তার দেশে ফেরার বিষয়টি।
যদিও সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়নি বিসিবি। সেদিনই বোর্ড সভা শেষে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, 'নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তাকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। নির্দিষ্ট একজনকে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বিসিবির। নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আসতে হবে। বিসিবি কোনো এজেন্সি, পুলিশ, র্যাব নয়। সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারটি আসতে হবে।'
দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে আছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে দুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার, সেখানে খেলেন মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)। এরপর কানাডাতে বাংলা টাইগার্স মিসিসাগার অধিনায়ক হিসেবে খেলেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি। এরপর পাকিস্তানের মাটিতে খেলেন টেস্ট সিরিজ। এই সিরিজের পর ইংল্যান্ডে সারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ম্যাচ খেলে ভারতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব।