আবারও ব্যাটিং দুর্দশা, আরেকটি টেস্ট হার বাংলাদেশের
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতার পর প্রশংসায় ভেসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন পাকিস্তানের শক্তিমত্তা নিয়ে। দেশটির চিরাচরিত পেস আক্রমণ ছিল না, ব্যাটিং অর্ডারও পোক্ত ছিল না। তাই বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দিলেও প্রতিপক্ষের সামর্থ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। এরপর থেকে সিরিজ এসেছে, সিরিজ গেছে; টেস্টে বাংলাদেশ বন্দী থেকে ব্যর্থতার বৃত্তে। আর সবখানেই দেখা গেছে দুর্দশার ব্যাটিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও বদলায়নি বাংলাদেশের ব্যাটিং ভাগ্য, পুরনো হতাশাই ফিরে এসেছে নতুন মোড়কে। ফলও তাই অভিন্ন, আরও একটি টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণে সঙ্গী হয়েছে বড় হার। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২০১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান সফরের পর এ নিয়ে টানা পাঁচ টেস্টে হারলো তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও এটা তাদের টানা পাঁচ টেস্ট হার।
টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ওয়ানডের পর টেস্টেও নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। মিকাইল লুই, আলিক আথানেজ ও সেঞ্চুরিয়ান জাস্টিন গ্রিভসের ব্যাটে ৯ উইকেটে ৪৫০ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ক্যারিবীয়রা। জবাবে ব্যাটিং বিপর্যয়ে দিশা হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে থেকেই ইনিংস ঘোষণা করে, ৯ উইকেটে ২৬৯ রান তুলে ব্যাটিং ছাড়ে তারা।
প্রথম ইনিংসেই ১৮১ রানের বড় লিড পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুর্বার বোলিংয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি স্বাগতিকরা। সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তোলে তারা, বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩৪ রান। সামর্থ্যের বাইরে চলে যাওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরও একবার হতাশার ব্যাটিং করা বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৩২ রানে।
বাংলাদেশের হার চতুর্থ দিনেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। শুরু থেকে চলে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল, ক্যারিবীয় দুই পেসার কেমার রোচ ও জেডেন সিলসের দাপটের সামনে ১০৯ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। জাকের আলী অনিক ১৫ ও হাসান মাহমুদ শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ দিনে এ দুজনের ব্যাটে শুরু করা বাংলাদেশ কয়েক ওভারের মধ্যেই হাসানের উইকেট হারায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে যান ৩১ রান করা জাকেরও। শেষ ব্যাটসম্যান শরিফুল ইসলামের কাঁধে বল লাগলে তার উইকেট না হারিয়ে হার মেনে নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রিভস।
লক্ষ্য তাড়ায় আগের দিন বাংলাদেশের শুরু হয় দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম ওভারেই ফিরে যান শেষ ১২ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়া জাকির হাসান। শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই দলীয় ৭ রানে সাজঘরে আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও। বেজে ওঠা ভাঙনের সুরে দিক ঠিক রাখতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপুও, দলীয় ২০ রানে ফিরে যান তিনি। তিন রান পরই বিদায়ের মিছিলে শামিল আগের ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হক, ২৩ রানেই নেই ৪ উইকেট।
বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা করলেন লিটন কুমার দাস ও মিরাজ। এই জুটিতে ক্ষণিকের স্বস্তি মেলে, আসে ৩৬ রান। লিটন ২২ রান করে ফিরে যাওয়ার পর জাকেরের সঙ্গে জুটি বাধেন মিরাজ। এই জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ। দলীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই খেই হারান জাকেরে সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়া মিরাজ, তার ব্যাট থেকে আসে ৪৬ বলে ৪৫ রান। ৬ রান পর ফিরে যান তাইজুল ইসলামও। বাংলাদেশকে বেগ দেওয়া রোচ ও সিলস ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। ২টি উইকেট নেন আলজারি জোসেফ, একটি উইকেট পান শামার জোসেফ।
ব্যাটিং দুর্দশার মাঝেও এই ম্যাচ থেকে নেওয়ার আছে বাংলাদেশের। বল হাতে সময়টা একেবারে মন্দ যায়নি তাদের। ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেন হাসান। ২ উইকেট করে পান তাসকিন ও মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে চোখ ধাঁধানো বোলিং করেন তাসকিন। ডানহাতি এই পেসার ১৪.১ ওভারে ৬৪ রানে ৬টি উইকেট নেন। দেশের বাইরে এটা বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা বোলিংয়ের কীর্তি। তাসকিনের এটা টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ বা এর বেশি উইকেট। টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে ৫ উইকেট পাওয়ায় তিনি অষ্টম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিতীয়। দুই ইনিংসে মিলিয়ে বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরি দুটি, করেন মুমিনুল ও জাকের।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪৫০/৯, ডিক্লে.
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৯/২৬৯, ডিক্লে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৫২
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৩২/৯ (লক্ষ্য ৩৩৪) (মুমিনুল ১১, লিটন ২২, মিরাজ ৪৫, জাকের ৩১, তাসকিন ৪*; রোচ ৩/২০, সিলস ৩/৪৫, আলজারি ২/৩২, শামার ১/২২)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: জাস্টিন গ্রিভস
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে