হতশ্রী ব্যাটিংয়ে আরেকটি টেস্ট হারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হলো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দুই দিনব্যাপী মেগা নিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে থাকলেও বাংলাদেশের কিছু ক্রিকেটারের নজর এই নিলামে ছিল। নিলামে নাম দেওয়া ১২ বাংলাদেশির মধ্যে যে তাদের নামও ছিল। বিক্রিত ক্রিকেটারের তালিকায় নিজের নাম না দেখে নিশ্চয়ই কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। কারণ, দল পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তো নিলামে নাম দেওয়া। এই হতাশা কয়েকজন ক্রিকেটারের, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল যে পারফরম্যান্স করছে; সেই হতাশা পুরো দেশের।
পারফরম্যান্স বিচারে এই হতাশার পরিমাপ করাটা কষ্টসাধ্য কাজ। অনুভূতিমূলক ব্যাপার হওয়ায় এমনিতেই হতাশা মাপা যায় না, তবে তীব্রতা বোঝাতে 'কিছুটা, 'চরম' জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। তাতে বোঝা যায় হতাশার পরিমাণ। কিন্তু অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করেছে, সেটা সীমাহীন হতাশার। এমন অবস্থায় থাকা দলের পরিণতি যা হওয়ার, তেমনই হচ্ছে। আরও একটি টেস্টে চোখ রাঙাচ্ছে হার।
প্রথম ইনিংসে ১৮১ রানের লিড পাওয়া ক্যারিবীয়রা তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তোলে স্বাগতিকরা, বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩৪ রান। টানা দুই সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশের জন্য যা পাড়ি দেওয়া সাত-সমুদ্দুর পাড়ি দেওয়ার মতো। ব্যাটিংয়ে নামতেই তা ফুটে ওঠে, শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। স্বাগতিকদের দুই পেসার কেমার রোচ ও জেডেন সিলসের দাপটের সামনে ১০৯ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে আরও একটি হারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যান জাকের আলী অনিক ১৫ রানে অপরাজিত, রানের খাতা খোলেননি হাসান মাহমুদ।
অ্যান্টিগা টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হলো, শেষ দিনে বাংলাদেশের পরিণতি খুব অনুমেয়। সকালেই তিন উইকেট হারিয়ে বড় হার মেনে নিতে হতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজের দলকে। বাস্তবতা বলছে, বাকি থাকা তিন উইকেট নিয়ে আরও ২২৫ রান করে জেতার ভাবনা কল্পনাতে আনাও 'অপরাধ'- এর পর্যায়ে পড়বে। আবার টিকে থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যানের সঙ্গে যোগ দিয়ে বোলাররা পুরো দিন কাটিয়ে দেবেন, এমন আশা করলে 'বিবেকহীন' তকমা এঁটে যাবে কল্পনাকারীর গায়ে। তাই হারই যে হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অমোঘ নিয়তি, চোখ বন্ধ করেই এটা বলে দেওয়া যাচ্ছে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে বরাবরের মতো শুরুতেই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই ফিরে যান শেষ ১২ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়া জাকির হাসান। শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই দলীয় ৭ রানে সাজঘরে আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও। বেজে ওঠা ভাঙনের সুরে দিক ঠিক রাখতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপুও, দলীয় ২০ রানে ফিরে যান তিনি। তিন রান পরই বিদায়ের মিছিলে শামিল আগের ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হক, ২৩ রানেই নেই ৪ উইকেট।
বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা করলেন লিটন কুমার দাস ও মিরাজ। এই জুটিতে ক্ষণিকের স্বস্তি মেলে, আসে ৩৬ রান। লিটন ২২ রান করে ফিরে যাওয়ার পর জাকেরের সঙ্গে জুটি বাধেন মিরাজ। এই জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ। দলীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই খেই হারান জাকেরে সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়া মিরাজ, তার ব্যাট থেকে আসে ৪৬ বলে ৪৫ রান। ৬ রান পর ফিরে যান তাইজুল ইসলামও। বাংলাদেশকে বেগ দেওয়া রোচ ও সিলস ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট পান শামার জোসেফ।