হাথুরুসিংহেকে শোকজ ও সাসপেন্ড করলো বিসিবি
সিদ্ধান্তটি আরও আগে এলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। বরং, বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের পদ থেকে আরও আগেই চান্দিকা হাথুরুসিংহের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা জেগেছিল। দায়িত্ব পাওয়ার আগেই ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, বিসিবি সভাপতি হলে হাথুরুসিংহেকে প্রধান কোচের পদে রাখার কারণ দেখেন না তিনি। বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও একই অবস্থানের কথা জানান তিনি। অবশেষে সেই ঘোষণাটা আজ দিলেন ফারুক, বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও একবার সাবেক হওয়ার পথে হাথুরুসিংহে।
লঙ্কান এই কোচকে বরখাস্ত শোকজ ও সাসপেন্ড করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘোষণাটি দিতে মঙ্গলবার তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিসিবি। দুপুর একটার দিকে বিসিবির মিডিয়া গ্রুপে জানানো হয়, সাড়ে ৩টায় মিরপুর স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে কথা বলবেন বিসিবি সভাপতি। পূর্বের বেশিরভাগ সংবাদ সম্মেলনের মতো আজও নির্ধারিত সময়ে হাজির হননি বিসিবির কর্তারা।
৪০ মিনিট পর শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি ঘোষণা দিলেন, হাথুরুসিংহেকে শোকজের পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টা সময়কালের সাসপেন্ড করা হয়েছে। এরপর তাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়ায় যাবে বিসিবি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও আগেই চাকরি হারাচ্ছেন তিনি। জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্সকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান জাতীয় দলের পাশাপাশি বিভিন্ন ঘরোয়া লিগে কোচিং করিয়েছেন তিনি।
কারণটা পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি শৃঙ্খলাজনিত। যেখানে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের সঙ্গে হাতুরুসিংহের করা একটি আচরণ অন্যতম। ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে চলাকালীন নাসুমকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে লঙ্কান এই কোচের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিসিবি। ফারুক বলেন, 'কয়েকটি ঘঠনা ছিল, যা সাবেক একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমার জন্য পীড়াদায়ক ছিল। সবকিছু বিবেচনা করে তাকে আমরা শোকজ এবং কোচের পদ থেকে সাসপেন্ডের নোটিশ দিয়েছি। ৪৮ ঘণ্টা পর বরখাস্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে। ক্রিকেটারের সঙ্গে হেনস্তা করাটা অন্যতম। এ ছাড়া অনমুতি না নিয়ে ছুটি কাটানোও একটি কারণ।'
প্রথম মেয়াদে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন হাথুরুসিংহে। তিন বছর পর হঠাৎ করে নিজেই পদ ছাড়েন তিনি। তার দায়িত্ব ছাড়ার ধরনও ভালো ছিল না। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকার সফর চলাকালীন সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান হাথুরুসিংহে, দায়িত্ব নেন শ্রীলঙ্কা দলের। হাথুরুসিংহের অমনভাবে দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারটি অবশ্য বিসিবি মনে রাখেনি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় তাকে প্রধান কোচ বানায় দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
প্রথম মেয়াদে সফল ছিলেন হাথুরুসিংহে। তার অধীনে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। দারুণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে, যা ছিল প্রথম অভিজ্ঞতা। তার তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। লঙ্কান এই কোচের আমলেই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জেতে বাংলাদেশ।
প্রথম মেয়াদে হাথুরুসিংহের তত্ত্বাবধানে তিন বছরে বাংলাদেশ ২১টি টেস্ট ম্যাচের ৬টিতে জেতে। হার মানতে হয় ১১ ম্যাচে, ড্র হয় ৪টি ম্যাচ। ৫১ ওয়ানডের মধ্যে ২৫টিতে জেতে বাংলাদেশ, হার ২৩ ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচে ১০ জয়ের বিপরীতে ছিল ১৯ হার। দ্বিতীয় মেয়াদে তার পথচলা আগের মতো সুখকর হয়নি। পাকিস্তান সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতলেও এবার অনেক ব্যর্থতার দায় চেপেছে তার কাঁধে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয়, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হতাশার পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ। হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদে ১০ টেস্টের ৫টিতে জেতে বাংলাদেশ। ৩৫ ওয়ানডের ১৩টি ও এবং ৩৫ টি-টোয়েন্টির ১৯টিতে জয় পায় বাংলাদেশ।