‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সাকিবকে দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে’
শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় দেশে আসা আটকে গেছে সাকিব আল হাসানের। বিদায়ী টেস্ট খেলতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা দিয়েও মাঝপথে থেমে যেতে হয় তাকে। দুবাইয়ে ট্রানজিটে থাকা সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিক্ষোভের মুখে সাকিবের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে এই পরামর্শ দেয় সরকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পর সাকিবকে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তখন থেকেই সাকিবকে না খেলানোর প্রতিবাদ শুরু হয়। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের দেশে আসার খবরে তা রূপ নেয় বিক্ষোভে। বুধবারই সাকিবের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়, দেওয়া হয় আরও বিক্ষোভের হুমকি।
বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে চলে এই বিক্ষোভ। সাকিবের বিরুদ্ধে লেখা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিরপুর হাজির হন মিরপুরের ছাত্রজনতা নামের একদল আন্দোলনকারী। বিক্ষোভের শুরুতে হয় দেয়াল লিখন। যেখানে বাংলাদেশ অলাউন্ডারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর চলে সাকিবের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান। এর মাঝে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে থাকা চার-পাঁচজন বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
বিসিবির কাছে তাদের চাওয়া, সাকিবকে যেন দেশের মাটিতে খেলতে না দেওয়া হয়। তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বাদ না দিলে হরতাল ও অবরোধের ঘোষণা দেবেন তারা। এমন অবস্থায় সাকিবের দেশে আসা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সবার মতো তিনিও সাকিবকে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া দেখতে চান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমি নিজেও চেয়েছি সাকিব আল হাসানের মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে অবসর নিক। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রথম দিকেই বলেছি সাকিব আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে, যা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করাসহ জনমনের ক্ষোভ নিরসনে তিনি ফেসবুক পোস্ট দিলেও সাম্প্রতিক প্রতিবাদে প্রতীয়মান হয়েছে যে, তা যথেষ্ট ছিল না। যারা প্রতিবাদ করছে, তাদেরও তা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।'
এমন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই সাকিবকে দেশে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই আপাতত দেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে বিসিবিকে পরামর্শ দিতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আশু ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত বলে মনে করি। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েই তার সমাধান খোঁজা যেতে পারে।'
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, সাকিবের দেশে আসা-যাওয়া নিয়ে তাদের কোনো কোনো কথা নেই। এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'সাকিব আল হাসান দেশে আসবেন কি আসবেন না, এটা তার ব্যাপার। এটা নিয়ে আমাদের কথা থাকা উচিত নয়। তবে তার খেলা নিয়ে আমাদের ঘোরতোর আপত্তি আছে। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সদস্য, হত্যা মামলার আসামি। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার তাকে আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেখতে চাই না, খেলা তো আরও পরের কথা।'
স্মারকলিপি দিয়ে বের হয়ে একজন বলেন, 'আওয়ামী সরকারের একজন এমপি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। এই বেঈমানী আমরা হতে দিবো না। যেহেতু সাকিব আল হাসানকে দলে নেওয়া হয়েছে, আমরা দেখেছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, দ্রুততার সাথে তাকে দল থেকে বাদ দিতে হবে। বাদ না দিলে মিরপুরের ছাত্র-জনতা এক হয়ে হরতাল ও অবরোধের ঘোষণা দেব।'
জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি সংসদ সদস্যও ছিলেন সাকিব। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচত হন তিনি। গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় নাম আসে সাকিবের, তাকে ২৮ নম্বর আসামি করা হয়। ছাত্র আন্দোলনে নিরব ভূমিকায় থাকা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছেন তিনি।