প্রয়াত দাবাড়ু জিয়ার পরিবারের পাশে তামিম ইকবাল
প্রয়াত দাবাড়ু জিয়াউর রহমানের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনার বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিয়ার ছেলে তাজওয়ার জিয়ার হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন। না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানাও ছিলেন সেখানে।
বাবার দেখানো পথেই হাঁটছেন তাজওয়ার, হতে চান নামি দাবাড়ু। বাবার স্বপ্ন পূরণে নিজেকে তিনি প্রতিষ্টা করতে চান সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে। এ পথে এগিয়ে যেতে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন তার। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছোট একটি ফ্ল্যাট ছাড়া কিছু নেই জিয়ার। অনেক সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করার কথা জানানো হলেও কেউই সেভাবে এগিয়ে আসেনি।
জিয়ার পরিবারের বর্তমান অবস্থা জেনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তামিম। জাতীয় দলের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়কের এভাবে এগিয়ে আসায় অভিভূত জিয়ার স্ত্রী। মিরপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'উনি (তামিম) আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি তো আসলে বাংলাদেশে ক্রিকেট জগতের ভালো একজন খেলোয়াড়। আমার ছেলের ব্যাপারে কথা বলেছেন। জিয়াকে সম্মান করেছেন। আমার ছেলের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। উনি আমার ছেলেকে ভালো উপদেশ দিয়েছেন। সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। উনি সব সময় পাশে থাকবেন বলেছেন।'
মাঠে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তামিম, নিয়মিত মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে আসছেন তিনি। আজও মিরপুরে যান দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ক্রিকেটার। এদিন সকালে মিরপুরে যান জিয়ার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান তাজওয়ার। মিরপুর স্টেডিয়ামের ইনডোরে অনুশীলনের ফাঁকে জিয়ার স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তামিমকে।
এ সময় তাজওয়ারের হাতে অর্থ তুলে দেন তামিম। জিয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় দাবাড়ু বানাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে সম্মিলিত সাহায্য প্রয়োজন বলে জানান জিয়ার স্ত্রী। তাসমিন বলেন, 'আপনাদের কাছে আমি সব সময় বলেছি, আমার ছেলেকে নিয়ে সামনে আগানো দরকার। এটার জন্য সম্মিলিত সাহায্য দরকার। সবাই যদি এগিয়ে আসে, তাহলে আমার মনে হয় সবকিছু ভালো হবে।'
জিয়া মারা যাওয়ার পর সেভাবে সহযোগিতা পায়নি তার পরিবার, আক্ষেপভরা কণ্ঠে তাসমিন বলেন, 'ও (জিয়া) তো দেশের জন্য সবকিছু করেছে। দেশের জন্য সব খেলা খেলেছে। দেশের বাইরে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সেই হিসেবে জিয়া এখনও কিছু পায়নি। তবে সম্মান পেলো না বললে ভুল হবে। সম্মান অবশ্যই পাবে। এখন পরিস্থিতির জন্য দেরি হচ্ছে। আমি আশা করব যে ভবিষ্যতেও সম্মান পাবে অন্যরা।'
তামিমের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পেরে উচ্ছ্বসিত তাজওয়ার। তামিমের থেকে পাওয়া পরামর্শ অনেক অনুপ্রেরণার জানিয়ে তিনি বলেন, 'উনি তো অনেক বড় একজন ক্রিকেটার বাংলাদেশের। উনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভালো লাগছে। উনি অনেক পরামর্শ দিয়েছেন জীবনের ব্যাপারে। এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল। উনি বলেছেন দাবার সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে।'
গত ৫ জুলাই খেলতে খেলতে মারা যান জিয়া। জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডের খেলা চলছিল। আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলছিলেন জিয়া। বেলা ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি শেষ করতে পারেননি তিনি, বিকাল ৬টার দিকে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান এই দাবাড়ু ।
জিয়া জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলে প্রতিপক্ষসহ আরও অনেকে মিলে তাকে তোলেন। দ্রুততার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গেই তার চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত জিয়ার পালস খুঁজে পাননি তারা। জিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা শেষে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা গেছেন তিনি।