জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/10/476406365_660922829821743_1789024066250636067_n.jpg)
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি শহীদ পরিবার ও ৭ জন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মাধ্যমে কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে তিনটি শহীদ পরিবারের সদস্য ও তিনজন আহত যোদ্ধা বক্তব্য দেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের দাবি জানান। স্মৃতিচারণার সময় তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস পেয়েছি, তাদের অবদান কোনো মাপে মাপা যায় না।' তিনি শহীদ ও আহতদের 'জীবন্ত ইতিহাস' আখ্যা দিয়ে বলেন, 'যে জাতি ইতিহাস স্মরণ করতে পারে না, সে জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আজ থেকে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের প্রতি সমাজের দায়িত্ব রয়েছে।'
বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে। বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাতটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামবো না। যারা অপরাধী তাদের আমরা পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব।'
তিনি সবাইকে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'দেশ গড়ার স্বপ্ন আমাদের সবার। আমরা একসাথে সুন্দর দেশ গড়ে তুলব।'
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহীদদের 'জুলাই শহীদ' এবং আহতদের 'জুলাই যোদ্ধা' নামে অভিহিত করা হবে ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১০ লাখ এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়া মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা ও সরকারি, আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
আহত যোদ্ধারা দুটি ক্যাটাগরিতে আর্থিক সহায়তা পাবেন। গুরুতর আহতদের 'ক্যাটাগরি এ'-তে অন্তর্ভুক্ত করে এককালীন ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২ লাখ এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। তারা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা, আজীবন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা এবং কর্মসহায়ক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
'ক্যাটাগরি বি' যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ লাখ এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা ও সরকারি/আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
এখন পর্যন্ত সরকার ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে এবং আহতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা দ্রুত প্রকাশিত হবে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। সংকটকালীন পরিস্থিতির কারণে বিলম্ব হয়েছে, এ জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।'