মারা গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু
বয়সের ভারে শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না অনেক দিন ধরেই, প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যেতেন না স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। বোরবার হঠাৎ-ই অসুস্থতা বাড়ে তার। ফুটবল খেলে দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা সাবেক এই ফুটবলারকে ভর্তি করা হয় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে। কিন্তু এখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হলো না জাকারিয়া পিন্টুর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলার আজ সোমবার বেলা ১১.৫০ মিনিটে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। হাসপাতালে নেওয়ার পর জাকারিয়া পিন্টুকে সিসিইউতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টাই ফেরাতে পারলো না বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই সূর্যসন্তানকে।
জাকারিয়া পিন্টুর হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সাবেক এই ডিফেন্ডারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিবৃতিতে লিখেছে, 'স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া পিন্টুর প্রয়াণে বাফুফে শোক প্রকাশ করছে। দেশের স্বাধীনতা ও ফুটবলে তার অবদান অমলিন থেকে যাবে। সৃষ্টিকর্তা তাকে চির শান্তি দান করুন।'
১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ চলছিল, ঝরছিল হাজারো প্রাণ। বাধ্য হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পরের দেশে আশ্রয় নিতে ছুটছিলেন কাতারে কাতার মানুষ। এমন সময়ে ফুটবল দল তৈরি করে ভারতের মাটিতে ম্যাচ খেলায় ব্যস্ত বাংলাদেশের এক দল যুবক। এদের মধ্যে অনতম ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। সিনিয়র হওয়ায় দলটির নেতৃত্বভার উঠেছিল তার কাঁধে। কেবল মাঠে খেলাই নয়, অভিভাবকের ভূমিকায় থেকে দলটির দেখভালও করেন তিনি।
ভারতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে নেমে ফুটবল পায়ে দেশ স্বাধীন করার পথ পেয়ে যান সাইদুর রহমান প্যাটেল, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান, বীরেন কুমার বীরু, মুজিবর রহমান, বিমল কর, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, নওশেরুজ্জামানরা। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনমত গঠন করা, বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভ করা। এর পাশাপাশি অর্থের যোগানও মিলে যায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা হায়দরাবাদ, জয়পুর, মুম্বাইসহ বিভিন্ন প্রদেশে ১৬টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে অভাবনীয় সাড়া পায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। দেশের পক্ষে জনমত গঠন করার পাশাপাশি ভারতের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ প্রবাসী সরকারের হাতে তুলে দিতে থাকেন ফুটবল যোদ্ধারা। সেই দলটির অনেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন, এবার উড়াল দিলেন জাকারিয়া পিন্টুও।
খেলায়াড়ি জীবন শেষ সংগঠক হিসেবে ফুটবল নিয়ে কাজ করেন ১৯৪৩ সালে নওগাঁতে জন্ম নেওয়া জাকারিয়া পিন্টু। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক ছিলেন তিনি। এর আগে ক্লাবটির হয়ে দীর্ঘদিন খেলেন পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে ফুটবল খেলা শুরু করা জাকারিয়া পিন্টু। মোহামেডানের নেতৃত্ব সামলানো সাবেক এই ডিফেন্ডার ক্লাবটির হয়ে ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত খেলেন। পরে মোহামেডানের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন জাকারিয়া পিন্টু।