জাকারিয়া পিন্টুকে শেষবিদায় জানালো ক্রীড়াঙ্গন
শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুকে শেষ বিদায় জানিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের সর্বস্তরের মানুষ। সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ মারা যান কিংবদন্তি এই ফুটবলার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
নিজের প্রিয় ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রাঙ্গনে আজ সকালে জাকারিয়া পিন্টুর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে 'গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।' জাকারিয়া পিন্টুকে শেষবিদায় জানাতে মোহামেডান ক্লাবে এসেছিলেন তার সতীর্থসহ ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
ক্লাব প্রাঙ্গণের মাঠে ছোট মঞ্চে রাখা হয় জাকারিয়া পিন্টুর মরদেহ। সাবেক খেলোয়াড়, ক্লাব, বিভিন্ন ফেডারেশন, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও জানাজার পর জাকারিয়া পিন্টুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাফুফে ভবনে। সেখানে তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। বাফুফে ভবনে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে জাকারিয়া পিন্টুর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাকারিয়া পিন্টুকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে সিসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টাই ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই সূর্যসন্তানকে। তার হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা গঠন করেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। দেশের মানুষের মুক্তির পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিল দলটি। জাকারিয়া পিন্টু ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গর্বিত অধিনায়ক। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৬টি ম্যাচের ১২টিতেই জেতে দলটি। ওই ম্যাচের টিকিট বিক্রির অর্থ মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে জমা দেওয়া হয়।
১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেন জাকারিয়া পিন্টু। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও প্রথম অধিনায়ক। মোহামেডানের সাবেক এই তারকা ডিফেন্ডার সংগঠক হিসেবেও মোহামেডানের সঙ্গে কাজ করেছেন।
১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি ফুটবল খেলা শুরু করেন পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে। ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরবর্তীতে ক্লাবটির পরিচালক নির্বাচিত হন জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৯৭৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান তিনি।