বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য পাড়ি দিতে রেকর্ড গড়তে হবে ক্যারিবীয়দের
'অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স'- অর্থাৎ, আক্রমণই হলো সবচেয়ে ভালো প্রতিরক্ষা। প্রচলিত এই প্রবাদ বলছে, আগ্রাসী হয়ে আগেই পদক্ষেপ নেওয়া অনেক সময় নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এই কাজটিই করেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু রান লিড পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান তুলতে চেয়েছে তারা। যেখানে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও শেষ দিকে ভরসার নাম হয়ে ওঠা জাকের আলী অনিক। সাথে সাদমান ইসলাম অনিকের চল্লিশোর্ধ ও আরও কিছু ছোট ইনিংসে লড়ার রসদ মিলে গেছে বাংলাদেশের।
জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯.৫ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২৬৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। আগের ইনিংসে ১৮ রানে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছে ২৮৬ রান। ২৯৭ রান রান তাড়া করে জিততে রেকর্ড গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
এর চেয়ে আরও বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতার অভিজ্ঞতা আছে ক্যারিবীয়দের। তবে এই ম্যাচের ভেন্যু স্যাবাইনা পার্কে এতো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই কারও। এই মাঠের সর্বোচ্চ রান তাড়া মোটে ২১২ রান, সেটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই রান তাড়া করে জেতে ক্যারিবীয়রা। দ্বিতীয় সফল রান তাড়াও তাদের, ২০৬।
লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও তেড়েফুঁড়ে শুরু করেছে। উইকেটে টিকে থেকে সময় পার করার চেয়ে রান তোলায় বেশি মন লাগিয়েছে তারা। যদিও শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। দলীয় ২৩ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা, ফিওরে গেছেন মিকাইল লুই। চতুর্থ দিন মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৪.২ ওভারে ১ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২৩ রান। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ১৬ রানে অপরাজিত আছেন।
নাহিদ রানার বোলিং তোপের মুখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৪৬ রানেই, অপ্রত্যাশিতভাবে ১৮ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এই এগিয়ে থাকাই যেন আত্মবিশ্বাসী করে তোলে প্রথম ইনিংসের পর মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে সফরকারী দলটি।
ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে উইকেট হারালেও মানসিকতা বদলায়নি। তাতে ফলও মিলেছে, ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে তারা। জাকের আলী ২৯ ও তাইজুল ইসলাম ৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। আজ দিনের শুরুটা ভালো না হলেও জাকের একাই লড়ে গেছেন।
জাকেরকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ৫০ রান করে আউট হন, বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২০৭ রান। এখান থেকে দলকে ২৮৬ রানে নিয়ে যাওয়ার প্রায় সব কৃতিত্ব জাকেরের। তাইজুল আউট হওয়ার পর বাকি ব্যাটসম্যানরা মিলে করেন ৪ রান, বাকি সব রান জাকেরের ব্যাট ও অতিরিক্ত থেকে এসেছে।
ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন, তবে সেঞ্চুরির কথা ভাবেননি। তার ব্যাটিংয়ের ধরন বলে, দলের রান বাড়িয়ে নেওয়াই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। এ কারণেই সেঞ্চুরির খুব কাছেও গিয়েও শট খেলার চেষ্টা করে আউট হয়ে যান তিনি। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মহাকার্যকর ইনিংস খেলা জাকের ১০৬ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৯১ রান করেন।
টেস্ট অভিষেকের পর থেকে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন সাত নম্বরে ব্যাটিং করা জাকের। টানা তিন টেস্টেই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টেই হাফ সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান জাকের। আগের দিন দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৩৯ বলে ৭টি চারে ৪২ রান করেন মিরাজ। ৮২ বলে ৭টি চারে ৪৬ রান করেন সাদমান।
এ ছাড়া ২৫ রান করে করেন শাহাদাত হোসেন দিপু ও লিটন কুমার দাস। নিজের ছায়া হয়ে ওঠা মাহমুদুল হাসান জয় রানের খাতা খুলতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে আট নম্বরে নামা মুমিনুল হকও রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফ ও কেমার রোচ ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান শামার জোসেফ। একটি করে উইকেট নেন জেডেন সিলস ও জাস্টিন গ্রিভস।