বিশ্ব জয়ের নায়কদের উঠে আসার গল্প
যুব বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে একপ্রকার হুঙ্কারই দিয়ে গিয়েছিলেন আকবর আলী। বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক বলেছিলেন, 'কেবল জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নয়, পুরো বিশ্বকাপই জিততে পারি আমরা।' সেটা করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের যুবারা।
লম্বা এই সফরে বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা এক সুরে গান গেয়েছেন। লক্ষ্য একটাই, শিরোপা; সবাই এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছেন। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে নিজেদের কথা রেখেছেন যুবারা। কেমন ছিল ফাইনাল যুদ্ধে লড়াই করা বাংলাদেশের ১১ জন যুবার ক্রিকেটে আসার গল্পটা? এক নজরে জেনে নেয়া যাক তাদের উঠে আসা, ক্রিকেট ক্যারিয়ার, জন্মস্থানসহ আরও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে।
আকবর আলী (অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক, ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান): বয়সের তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার আকবর আলী, সেটা ফাইনালে প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর রংপুরে জন্ম তার। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট আকবর। ২০১২ সালে দিনাজপুর বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন আকবর। ২০১৫ সালে চলে আসেন সাভারের বিকেএসপিতে, এরপর ক্রমেই এগিয়ে চলা। এখন তিনি বিশ্বজয়ী অধিনায়ক।
পারভেজ হোসেন ইমন (বাঁহাতি ওপেনার, অনিয়মিত উইকেটরক্ষক): যুব দলের বাঁহাতি এই ওপেনারের জন্ম ২০০২ সালে ৬ ডিসেম্বর, চট্টগ্রামে। ক্রিকেটের হাতেখরিও সেখানে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় টেপ টেনিসের ক্রিকেটে আলোড়ন ফেলেন ইমন। এটা দেখে ইমনের বড় ভাইয়ের বন্ধু সিজান তাকে একাডেমিতে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। বন্ধুর কথা মতো ২০১৩ সালে ইমনকে দিনাজপুরের আঞ্চলিক বিকেএসপিতে ভর্তি করান তার বড় ভাই। সেখান থেকে ২০১৬ সালে চলে আসেন সাভারের বিকেএসপিতে।
২০১৮ সালের যুব এশিয়া কাপে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়া ইমনকে অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটের একটি টুর্নামেন্টে সুযোগ দেন বিকেএসপির কোচ আসাদল হক টুটুল। সুযোগ পেয়েই ৯৬ রানের একটি ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এই ইনিংসে সুযোগ হয়ে যায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রস্তুতি ম্যাচে। এখানেও তিনি খেলেন ৯৬ রানের একটি ইনিংস। এরপর যুব দল এবং পরের গল্পটি মোটামুটি সবার জানা।
তানজিদ হাসান তামিম (বাঁহাতি ওপেনার): বাংলাদেশ জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালের চেয়েও মারকুটে মেজাজের যুব দলের এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২০০০ সালের ১ ডিসেম্বর বগুড়ায় জন্ম নেয়া বাংলাদেশের এই যুবার ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের সাথে বন্ধুত্ব। এতোটাই বন্ধুত্ব ছিল যে, পড়াশোনার কথাই ভুলে যেতেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ক্রিকেটের কারণে তামিমকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার বাবা।
তবু থামেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বগুড়া জেলা দলের হয়ে খেলা তামিম ২০১৭ সালে রাজশাহীর বাংলা ট্র্যাক ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন। এই একাডেমির প্রধান কোচ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। এই একাডেমি থেকে তামিম চলে আসেন প্রথম বিভাগে খেলতে। তাকে দলে ভেড়ায় উত্তরা ক্রিকেট ক্লাব। ব্যাটিং প্রতিভা দিয়ে যুব দলে জায়গা করে নেয়া তামিম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ রানের ইনিংস খেলে দলে জায়গাটা পোক্ত করে নেন।
মাহমুদুল হাসান জয় (ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান): মাহমুদুল হাসান জয়ের গল্পটা তার অনেক সতীর্থের সঙ্গেই মিলে যায়। তাকেও বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো। কিন্তু মাঠে গিয়ে ব্যাটিং না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতেন তিনি। জিদটা পুষে রেখেছিলেন যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানের ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তোলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জন্ম নেয়া মাহমুদুলের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখে বাবা ব্যাংকার আবুল বারেক তাকে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করান। চাঁদপুরের এই একাডেমিতে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন মাহমুদুল। ছেলেকে নিজের মতো ব্যাংকার বানানোর স্বপ্ন ছেড়ে বাবা আবুল বারেকও সব ধরনের সমর্থন দিতে থাকেন। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়ার গল্পই লিখেছেন মাহমুদুল।
তৌহিদ হৃদয় (টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ডানহাতি অফ স্পিনার): যুব দলের টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের গল্পটা একটু ভিন্ন। সাত বছরেই ক্রিকেটের প্রেমে এতটা মজেছিলেন হৃদয় যে, বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা মেতে থাকতেন। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর বগুড়ায় জন্ম নেয়া এই ব্যাটসম্যান বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসে প্রতারিত হন। বনশ্রীর একটি ভুয়া ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হয়ে বেশ কিছু টাকা গচ্ছা দিতে হয় তাকে।
অবশ্য কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি। মায়ের অনুপ্রেরণায় ছুটে চলা হৃদয় জায়গা করে নেন যুব দলে। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অংশ নেয়া ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ২০১৮ যুব বিশ্বকাপ খেলেন। এবার দ্বিতীয়বারের মতো যুবাদের আসরে খেলতে যান তিনি। বাংলাদেশের নবম ক্রিকেটার হিসেবে যুব ক্রিকেটে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার সুখস্মৃতি আছে মুশফিকুর রহিমের মতো ব্যাটসম্যান হতে চাওয়া হৃদয়ের।
শাহাদাত হোসাইন (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান): যুব দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসাইনের জীবন যুদ্ধ আর সবার চেয়ে একটু বেশিই কঠিন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়িচালক শাহাদাতের বাবা আবদুস সবুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১০ সালে মারা যান। দুই ছেলে আবুল হোসাইন ও শাহাদাত হোসাইনকে নিয়ে ঘোর অন্ধকারের মধ্যে পড়ে যান মা ফেরদৌস বেগম। সংসার চালাতে বাবার জায়গায় গাড়িচালকের চাকরি নেন আবুল।
আবুল যখন সংসার চালাতে রাতদিন এক করে ফেলছেন, শাহাদাত তখন ছুটছেন ক্রিকেটের পেছনে। এই স্বপ্নেও বাধা পড়ে ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া শাহাদাতের। বিকেএসপির ট্রায়াল থেকে বাদ পড়েন তিনি। শাহাদাত যখন হার মেনে নেবেন এমন সময় সুদীপ্ত দেব নামের একজন শাদাহাতের মা ও বড় ভাইকে বুঝিয়ে তাকে ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ২০১৩ সালে দলটির হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম জেলা দলে সুযোগ হয় শাহাদাতের। এখান থেকেই বদলাতে থাকে তার গল্প। অভাবকে হার মানিয়ে ক্রিকেট খেলা যাওয়া শাহাদাত জায়গা পেয়ে যান যুব বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে। এবার তিনি দেশে ফিরবেন বিশ্বজয়ী এক দলের গর্বিত সদস্য হয়ে।
শামীম হোসেন (ডানহাতি অলরাউন্ডার): চাচাতো ভাইদের ক্রিকেট খেলা দেখে আগ্রহ তৈরি হয় ছোট্ট শামীম হোসেনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহের পরিমাণও বাড়তে থাকে ২০০০ সালে ২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে জন্ম নেয়া শামীমের। স্থানীয় টিভি টুর্নামেন্টে ৮-৯ বছর থেকেই খেলা শুরু করে দেন তিনি। শামীমের স্বপ্নের পথে বাধ সাধেননি ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকা বাবা। কেবল বলেছেন, 'বাবা লেখাপড়াটাও ভালোমতো চালিয়ে নিও।'
শামীমের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তার চাচা আনোয়ারের। শামীমকে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন তিনিই। সেখান থেকে পরবর্তীতে বিকেএসপিতে ঠিকানা গাড়েন শামীম। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে পশ্চিমবঙ্গ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের বিপক্ষে ২২৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। যা তাকে ২০১৮ যুব বিশ্বকাপের ক্যাম্পে সুযোগ করে দেয়। সেবার একাদশে সুযোগ না পেলেও এবার শামীম ছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
অভিষেক দাস (ডানহাতি অলরাউন্ডার): যুব দলের ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের ক্রিকেটে আসার গল্পটা বেশ মজার। ক্রিকেটার নয়, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল অভিষেক দাসের। ২০০১ সালে ৫ সেপ্টেম্বর নড়াইলে জন্ম নেয়া অভিষেক ব্যাডমিন্টনে তিনবারের জেলা চ্যাম্পিয়ন। ২০১২ সালে জেলা পর্যায়ের একটি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশ নেন তিনি। সেখানেই ৬ ফুট উচ্চতার অভিষেক চোখে পড়েন বাবার বন্ধু ক্রিকেট কোচ সৈয়দ মনজুর তৌহিদ তুহিনের। অভিষেককে ক্রিকেটে দিতে বাবা অসিত দাসকে বলেন তিনি।
বন্ধুর কথা ফেলেননি অসিত দাস। ব্যাডমিন্টনের ব্যাট রেখে ছেলের হাতে ক্রিকেট ব্যাট তুলে দেন তিনি। শুরু হয় অভিষেকের নতুন অধ্যায়। নতুন খেলায় নিজেকে মানিয়ে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন এই ডানহাতি। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে চ্যালেঞ্জ সিরিজে নিজের প্রথম ইনিংসে তিন উইকেট নেন অভিষেক। এতে সুযোগ মিলে যায় যুব দলের ক্যাম্পে। এরপর বাবা এবং পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থনে স্বপ্নের পথে এগিয়ে গেছেন অভিষেক। যে স্বপ্নের প্রথম ধাপ ৯ ফেব্রুয়ারি পচেফস্ট্রুমে পার করলেন তিনি।
রকিবুল হাসান (বাঁহাতি স্পিনার): অভিষেক দাসের মতো রকিবুল হাসানের স্বপ্নও একটা পর্যায়ে গিয়ে মোড় নিয়ে নেয়। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হতে গিয়ে ক্রিকেটার হয়ে গেছেন অভিষেক। রকিবুল ক্রিকেটেই থেকেছেন, কিন্তু পেসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। ২০০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের কুড়িপাড়ায় জন্ম নেয়া রকিবুল হয়ে গেছেন বাঁহাতি স্পিনার। পেসারসুলভ শারীরিক গঠন না থাকায় বাধ্য হয়েই স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে নামতে হয় তাকে।
লেখাপড়ার প্রতি রকিবুলের বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। যে কারণে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নের কথা বাবা-মাকে জানাতে পারেননি তিনি। স্বপ্ন লুকিয়ে রাখা রকিবুল গৃহশিক্ষকের এক মাসের টাকা মেরে ভর্তি হয়ে যান একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। কিছুদিন পর তিনি ভর্তি হন মোহাম্মদ আশরাফুলকে পথ দেখানো প্রবীণ ক্রিকেট কোচ ওয়াহিদুল গনির অঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমিতে। তখনও রকিবুলের বাবা-মা জানেন না ব্যাপারটি। জানতেই তার ওপর বাড়তে থাকে লেখাপড়ার চাপ, সঙ্গে বাবার উত্তম-মাধ্যমও।
থামেননি রকিবুল। এর মধ্যেই ডাক পড়ে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। বয়সভিত্তিক দলটির হয়ে ময়মনসিংহে একটি টুর্নামেন্টে দারুণ পারফরম্যান্স করেন তিনি। এটা দেখে বাবা-মাও সমর্থন দিতে শুরু করেন। এরপর শুধু ক্রিকেটেই বসবাস করেছেন তিনি। যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে জয়সূচক রানটি করেছেন এই রকিবুলই।
তানজিম হাসান সাকিব (ডানহাতি মিডিয়াম পেসার): বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নামে তার নাম। কিন্তু এই সাকিব একজন পেসার, সেটাও ডানহাতি। তার পছন্দের ক্রিকেটার আবার দুই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০০২ সালে ২০ অক্টোবর সিলেটের তিলকচানপুর গ্রামে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ যুব দলের এই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার অনুপ্রেরণাও নেন আরেক উইকেটরক্ষক জাকির হাসানের কাছ থেকে। দূরসম্পর্কের এই আত্মীয়কে দেখে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বোনা সাকিব অবশ্য প্রথম ট্রায়ালে বাদ পড়েন।
চট্টগ্রামে এক মাসের ক্যাম্প করতে গেলে সেখানকার কোচ মোহাম্মদ কায়সার আহমেদ সাকিবের বাবা গৌউস আলীকে বোঝান, ক্রিকেটে দিতে বলেন ছেলেকে। বাবা রাজি হয়ে ছেলেকে নিয়ে ছোটেন বিকেএসপির পথে। প্রথম ট্রায়ালে বাদ পড়লেও দুই বছর পর ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ করে নেন সাকিব। এরপর যুব দলে সুযোগ পেয়ে দারুণ বোলিংয়ে জায়গা শক্ত করেন সাকিব। এবারের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবকটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
শরিফুল ইসলাম (বাঁহাতি পেসার): যুব দলের বাঁহাতি এই পেসার জেএসসির পরীক্ষায় অকৃতকারর্য হয়ে ডুকে পড়েন স্বপ্নের ক্রিকেট রাজ্যে। ২০১৬ সালে জেএসসির পরীক্ষায় খারাপ করার পর শরিফুলকে দিনাজপুরের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন তার মামা। সেখানে চলতে থাকে তার ক্রিকেট অধ্যায়। কঠোর পরিশ্রম করতে থাকা শরিফুলকে মনে ধরে ওই একাডেমির রাজশাহীর কোচ আলমগীর কবিরের। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ শরিফুলকে বেশ কিছুদিন অনুশীলন করান তিনি।
এ সময় ভালো করায় রাজশাহী ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে সুযোগ পান তিনি। এখানে এসে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন ও জহুরুল ইসলামের চোখে পড়েন বাংলাদেশের এই যুবা। এই দুই জনের কল্যাণে শরিফুল ঢাকায় এসে লিস্ট 'এ' ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। বল হাতে ধারাবাহিকভাবে ভালো করায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়ে যান ২০০১ সালের ৩ জুন পঞ্চগড়ের কালিগঞ্জে জন্ম নেয়া দীর্ঘদেহী এই পেসার। এরপর ধীরে ধীরে দলের প্রধান বোলার হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বল হাতে বাংলাদেশকে পথ দেখানো বাঁহাতি এই পেসার।