কিংসের জয় দিয়ে যাত্রা শুরু বিশ্বমানের বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের
যাত্রা শুরু হলো বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়া বিশ্বমানের বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। এখানে ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট আয়োজন করা যাবে। যা কেবল বাংলাদেশই নয়, উপমহাদেশেই দৃষ্টান্ত। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি গড়ে উঠছে বালু নদীর পাড় ঘেঁষে।
বৃস্পতিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় কমপ্লেক্সের বসুন্ধরা কিংস এরেনা নামের মাঠের। শুরুটা হলো ঘরের মাঠের দল বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ দিয়ে। নিজেদের মাঠের অভিষেকের দিন পুলিশ এফসিকে ৩-০ গোলে হারায় কিংস। জোড়া গোল উপহার দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো। অন্য গোলটি করেন নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া এলিটা কিংসল।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল বসতির শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই কমপ্লেক্স। শুরুতে ৫০ বিঘা নিয়ে শুরু হলেও পুরো প্রকল্প ৩০০ বিঘা জমিতে হবে। ২০১৯ সালে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে কমপ্লেক্সের। তবে ১৪ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কিংস অ্যারেনা মাঠের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
ফুটবল ম্যাচ দেখার জন্য টিকেট কিনলে শাটল বাসে বসুন্ধরা গেট থেকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হবে, ম্যাচ শেষে আবারও পৌঁছে দেওয়া হবে গেটে। মাঠের দেই পাশে হবে ১৪ হাজার আসন বিশিষ্ট গ্যালারি। এটাই কিংসের হোম ভেন্যু। উত্তর পাশে কাজ চলছে ক্রিকেট মাঠের। আর দক্ষিণ দিকে হবে ৫০০ ক্রীড়াবিদের জন্য আবাসন, আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হকি ফিল্ড, আর্চ্যারি রেঞ্জ, শুটিং রেঞ্জ, ইনডোর গেমস এবং একটি গলফ কোর্সসহ আরও অনেক খেলার অবকাঠামো।
মাঠ নিয়ে বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, 'যেহেতু বসুন্ধরা কিংস একটা পেশাদার ক্লাব, তাদের জন্য একটি ফুটবল মাঠের চিন্তা থেকেই গত বছর জুনে আমরা মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু করি। এ ছাড়া ক্রিকেটের সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা আছে। ভবিষ্যতে আমরা ক্রিকেট দল নিয়েও আসতে চাই।'
'আমরা ৫৫ বিঘার ওপরে কাজ শুরু করি। তখন আসলে আমরা ফুটবলের বড় স্টেডিয়ামের কথা ভাবিনি। একটা প্র্যাকটিস ফিল্ড করার ইচ্ছা ছিল। পরবর্তী সময়ে মনে হলো এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম করে ফেললে এটাই হবে কিংসের হোম ভেন্যু, সেক্ষেত্রে হোম ভেন্যুর জন্য আমাদের বাইরে যেতে হবে না। তাই আমরা গ্যালারি করার চিন্তা করি। গ্যালারি করার ব্যাপারটি নিয়ে বসার পর ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে ।' যোগ করেন তিনি।
সব খেলার ব্যবস্থাই রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'দেশের প্রচলিত প্রায় সব খেলাই এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের গর্ব করার মতো বেশি কিছু নেই। আশা করি এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরব। আগামী বছর কিংসের নামে আমরা একটা ক্রিকেট দলও করব। আসলে পেশাদার লিগের প্রথম শর্ত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ হয়ে থাকে। আপাতত সাত হাজার, সব মিলিয়ে ১৪ হাজার আসন রাখা হয়েছে। আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগও রাখা হয়েছে।'
দুটি জোনে বিভক্ত করে বসুন্ধরা গড়ে তুলছে এই প্রকল্প। উত্তর জোনের প্রায় সত্তরভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দক্ষিণ জোনেও ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। পুরো কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিক দিয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি লেক। যা সংযুক্ত হবে বালু নদীর সঙ্গে।
দক্ষিণ জোনে নির্মাণ করা হবে ১৫ হাজার আসন সংখ্যার আধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ক্রিকেট প্র্যাকটিস ফিল্ড, ক্রিকেট নেট, ফুটবল প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড, হকি ফিল্ড, টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল, ভলিবল, কারাতে কোর্ট, ফুটসাল কোর্ট, অ্যাকাডেমি ও ক্লাব ভবন, ক্যাফেটারিয়া, শুটিং রেঞ্জ, কারাতে, তায়কোয়ান্দো, জুডো, ইয়োগার মতো খেলার জন্য একটি মাল্টি-পারপাস স্টুডিও, ইনডোর গেমস রুম, ট্রেনিং রুম, ডরমেটরি, গলফ ড্রাইভিং রেঞ্জ, আরচারি রেঞ্জ এবং
উত্তর জোনে ফুটবল স্টেডিয়াম, ২৫ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ইনডোর কমপ্লেক্স, ২৫ ও ৫০ মিটার সুইমিং পুল, স্কোয়াশ কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, জিমনেশিয়াম এবং একটি স্পোর্টস মিউজিয়াম। কমপ্লেক্সের ধার ঘেঁষেই দুই বিঘা জমির ওপর তৈরি করা হবে বিশাল মসজিদ এবং একটি আধুনিক শপিং সেন্টার। শপিং সেন্টারে ফুটকোর্ট, সিনেপ্লেক্স থেকে শুরু করে সবকিছুই থাকবে বলে জানান কিংস সভাপতি।