বাংলাদেশকে উড়িয়ে সিরিজে ফিরলো দক্ষিণ আফ্রিকা
লড়াইয়ের মঞ্চের ঠিকানা বদলালো, সেঞ্চুরিয়ন থেকে যেতে হলো জোহানেসবার্গে। ঠিকানা বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল বাস্তবতাও। সেঞ্চুরিয়নের দাপুটে বাংলাদেশকেই ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে দেখা গেল বিবর্ণ চেহারায়। ব্যাটে-বলে শাসন করে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা, মুখ বুজে তা সহ্য করতে হলো তামিম ইকবালের দলকে। দাপুটে জয়ে সিরিজে ফিরলো প্রোটিয়ারা।
রোববার জোহানেসবার্গের ওয়ার্ডারার্স স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা এলো। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগামী ২৩ মার্চ সেঞ্চুরিয়নে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা কাগিসো রাবাদার আগুনে বোলিংয়ের মুখে ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দিক হারা দলকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কিছুটা অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ৯ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে কুইন্টন ডি ককের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৩৭.২ ওভারেই (৭৬ বল হাতে রেখে) ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দাপুটে শুরু পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। উদ্বোধনী জুটিতে ১২.৩ ওভারে ৮৬ রান যোগ করেন ইয়ানেমান মালান ও কুইন্টন ডি কক। মালান ধীর মেজাজে থাকলেও কয়েক বল মোকাবিলার পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ডি কক। মাত্র ২৬ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রোটিয়া বাঁহাতি এই ওপেনার।
১৩তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। তার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৪০ বলে ৪টি চারে ২৬ রান করা মালান। কিছুক্ষণ পর ডি কককে ফেরান সাকিব আল হাসান। এর আগে ৪১ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ডি কক। এরপর প্রোটিয়াদের আর বিপদে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বাভুমা-ভেরেইনে তৃতীয় জুটিতে ৮২ রান যোগ করেন।
প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা ৫২ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রান করে ফেরার পর রাসি ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে জয়ের বাকি কাজ সারেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ভেরেইনে। ১১তম ওয়ানডে খেলতে নামা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। মিরাজ, সাকিব ও আফিফ একটি করে উইকেট নেন। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম এদিন খরুচে ছিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান ভালো করলেও উইকেট এনে দিতে পারেননি।
এরআগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস দেখেশুনে শুরু করেন দুজন। কিন্তু প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিদের দারুণ বোলিংয়ের মুখে সুবিধা করতে পারেননি তারা। তামিমকে উইকেটে এলোমেলো দেখিয়েছে, পথটা তাই দীর্ঘ হয়নি তার।
তৃতীয় ওভারেই ফিরতে হয় বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে। এনগিডির লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চালিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন ১ রান করা তামিম। সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করতে সমস্যা হয়নি কেশব মহারাজের। সাকিব আল হাসানও এদিন বুঝে ওঠার আগেই সাজঘরে ফেরেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে রাবাদার করা পায়ে ওপরের একটি ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন তিনি। ৬ বল খেললেও রানের খাতা খোলা হয়নি আগের ম্যাচে ৭৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলা বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের।
লিটন দাসকে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল। যদিও ডানহাতি এই ওপেনারও পারেননি বেশি সময় উইকেটে টিকতে। ২১ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করা লিটন রাবাদার বাউন্সারে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। চাপ কাটিয়ে উঠতে ধীর-স্থির মেজাজে ব্যাট চালানো মুশফিকুর রহিমও ব্যর্থ। ৩১ বলে ১২ রান করে ওয়েন পার্নেলের এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি।
কঠিন অবস্থায় ইয়াসির আলী রাব্বিও চেষ্টা করেছেন উইকেটে থিতু হয়ে দলকে ছন্দে ফেরাতে। কিন্তু ১৪ বলে ২ রান করে রাবাদার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায় যায় বাংলাদেশ। এখান থেকে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব।
ষষ্ঠ উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ে চাপ কাটিয়ে তোলেন তারা। দলে অনেকটা স্বস্তি ফিরিয়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৪৪ বলে ৩টি চারে ২৫ রান করেন। এরপর আফিফের সঙ্গে জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সপ্তম উইকেটে তারা যোগ করেন ৮৬ রান। এ সময় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আফিফ।
এই জুটিতে বাংলাদেশ যখন লড়াকু সংগ্রহের আশায়, তখন ঘাতক দেয় দেখা দেন শুরুতে বাংলাদেশের ইনিংস এলোমেলো করে দেওয়া রাবাদা। স্লোয়ারের ফাঁদে ফেলে আফিফকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন ডানহাতি এই পেসার। ফেরার আগে ১০৭ বলে ৯টি চারে ৭২ রানের মহা কার্যকর এক ইনিংস খেলেন আফিফ।
এই ওভারে মিরাজকেও ফিরিয়ে দেন ম্যাচসেরা রাবাদা। কভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ইয়ানেমান মালানের হাতে ধরা পড়েন ৪৯ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান করা মিরাজ। পরের তিন ব্যাটসম্যান মাত্র ১৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো প্রোটিয়া পেসার রাবাদা ১০ ওভারে ৩৯ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন। যা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েন পার্নেল, তাবরাইজ শামসি ও রাসি ফন ডান ডুসেন একটি করে উইকেট নেন।