এক দুপুরে নালিতাবাড়ীতে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’
নালিতাবাড়ী উপজেলায় গৃহপরিচারিকা টুনির বাড়ি ঘুরে গেলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা।
শুক্রবার উপজেলার যোগানিয়া কাচারি মসজিদ-সংলগ্ন টুনির বাবা আক্কাছ আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরাফি। এ নিয়ে এলাকায় হুলস্থুল পড়ে যায়। বিষয়টি প্রথমদিকে গোপন থাকলেও নিভৃত পল্লীতে দুটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে আসা অতিথিদের এবং অধিনায়ক মাশরাফির আগমনের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে লোকজনের ভিড় সামলেতে বেগ পেতে হয়। মাত্র আড়াই ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর মাশরাফি শেরপুর ত্যাগ করেন।
যোগানিয়ার সেই অজপাড়াগাঁয়ে মাশরাফিকে দেখতে ছুটে যাওয়াদের মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুকছেদুর রহমান লেবুও ছিলেন। তিনি অধিনায়ক মাশরাফির আচরণ ও ব্যবহারে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, “বাসার কাজের মেয়ে এবং সাবেক নিরাপত্তাকর্মীকে খুশি করতে মাশরাফির মতো এমন একজন সেলিব্রেটি এমন অজপাড়াগাঁয়ে সস্ত্রীক এসেছেন। টুনির বাবা আক্কাছ আলী ক্রিকেটতারকা মাশরাফির বাসার নিরাপত্তাকর্মীর কাজ থেকে বিদায় নিলেও তার পরিবারের প্রতি মাশরাফির দারুণ মমতা। তিনি তাদের প্রতি নানা সহযোগিতা বজায় রেখেছেন। তিনি আক্কাছ আলীকে চিকিৎসা-সহায়তা, মাথা গোঁজার জন্য গ্রামের বাড়িতে একটি হাফ-বিল্ডিং টিনশেড ঘর করে দিয়েছেন। সর্বোপরি, মাশরাফি টুনির দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানে না এলে বিষয়টি আমরা জানতেই পারতাম না। সত্যিই, ‘ম্যাস দ্য রিয়েল ক্যাপ্টেন, স্যালুট হিম’।”
স্থানীয়রা জানান, এবারের কুরবানির ঈদ মাশরাফির বাসায় কাটলেও ঈদের পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসার ইচ্ছে ছিল টুনির। আর তাই সে ইচ্ছা পূরণে কেবল টুনিকে বাড়ি পাঠাননি, নিজেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টুনির গ্রামের বাড়ি নালিতাবাড়ীর নিভৃত পল্লীতে চলে আসেন মাশরাফি। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পরই হঠাৎ দুটি গাড়ি নিয়ে টুনিদের বাড়িতে হাজির হন টুনিসহ মাশরাফির পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আমিন সিফাত জানান, ঢাকার মিরপুর এলাকায় একটি হাউজিং অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত থাকায় আক্কাছ আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় ওই অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ক্রিকেটতারকা মাশরাফি বিন মুর্তজার। ওই পরিচয়সূত্রে প্রায় ৮ বছর আগে হতদরিদ্র আক্কাছ আলীর মেয়ে টুনিকে তাঁর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নেন মাশরাফি।
বয়স আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে আক্কাছ আলী ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিদায় নিলেও, মাশরাফির বাসাতেই রয়ে গেছে তার মেয়ে টুনি। দীর্ঘ ৮ বছর সময়কালে মাশরাফি ও তাঁর পরিবারও টুনিকে এখন তাদের পরিবারের একজন মনে করেন এবং সেভাবেই তার প্রতিপালন করে আসছেন ও তার পরিবারকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
ক্রিকেট অধিনায়কের নালিতাবাড়ীতে আগমনের বিষয়টি জানলেও টুনির বাবা-মা কাউকে কিছু জানাননি। তবে তারা মাশরাফিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। কিন্তু নালিতাবাড়ীর যোগানিয়া কাচারি মসজিদ-সংলগ্ন টুনিদের সেই বাড়িতে পৌঁছার পর ঘুরে-ফিরে বাড়ির চারপাশের প্রকৃতি দেখছিলেন মাশরাফি। তখনই এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। আর মাশরাফিকে এক নজর দেখতে মানুষের ভিড় লেগে যায় সেখানে।
এদিকে, জনতার ভিড় আর গরমের কারণে দ্রুত পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাশরাফিকে গাড়িতে উঠতে হয়। ফলে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নালিতাবাড়ী ছেড়ে যান।