পাবনার সেই ওসি ওবায়দুল সাময়িক বরখাস্ত
পাবনায় থানা চত্বরে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ের আয়োজনের ঘটনায় সদর থানার ওসি ওবায়দুল হককে এবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর আগে, ১২ সেপ্টেম্বর তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
বুধবার বিকেলে ওবায়দুলকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইবনে মিজান। তিনি জানান, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীর পক্ষে সহকারী মহাপরিদর্শক (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট) আবদুল্লাহিল বাকি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে ওবায়দুল হককে চট্রগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্তির কথাও জানানো হয়েছে ওই বার্তায়।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইবনে মিজান বলেন, তদন্তে ঘটনাটির সঙ্গে ওসি ওবায়দুল হক ও এসআই একরামুল হকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এরপর রিপোর্টটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে পর্যালোচনা শেষে মঙ্গলবার রাতে ওসি ওবায়দুল হককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর।
এর আগে, ১২ সেপ্টেম্বর ওসি ওবায়দুলকে প্রত্যাহার ও এসআই একরামুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
এদিকে এই ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত জেলা প্রশাসকের তদন্ত দলের প্রতিবেদনেও ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ভিকটিমকে দলবদ্ধ হয়ে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ এবং তারপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে মামলা না নিয়ে ওসির নির্দেশে এক ধর্ষকের সঙ্গে তার জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়গুলোর সত্যতা মিলেছে।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদও তাদের প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান।
প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের ওই নারীকে ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ ও তার চার সহযোগী অপহরণ করে। পরে তাকে চার দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।
ভিকটিম নারী বাড়ি ফিরে বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু তারা মামলা নথিভুক্ত করেনি। বরং ধর্ষিতাকে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর থানা চত্বরে রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন দুজন পুলিশ সদস্য।
অভিযুক্ত দুজন পুলিশ সদস্য এভাবে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা চালান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখনই পাবনার পুলিশ সুপার ধর্ষিতার মামলা নিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। আসামীদেরও গ্রেফতার শুরু হয়। এরই মধ্যে ধর্ষক রাসেল, শরিফুল ইসলাম ঘন্টু, ওসমান, হোসেন আলী ও সঞ্জুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার অন্যতম আসামী শরিফুল ইসলাম ঘন্টু দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। দলীয় তদন্ত শেষে তাকে এ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তথ্যটির সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, “কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেবে না। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের নমনীয়তা বা সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই।”