মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে যাও: আশ্রয়প্রার্থীর উদ্দেশে স্কটিশ হোম অফিস
মাত্র চার মাস হল ম্যালকমের (ছদ্মনাম) মেয়ের জন্ম হয়েছে। তা-ও প্রিম্যাচিউরড বেবি। এ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। কিন্তু ম্যালকমের স্ত্রী-কন্যা একটু সুস্থ হতেই স্কটল্যান্ডের সরকারি দপ্তর থেকে নির্দেশনা এল, “ফিরে যাও কন্যাকে নিয়ে নিজ দেশে।”
৪০ বছর বয়সী ম্যালকমের নিজের দেশ মানে জিম্বাবুয়ে। যেখানে তিনি ছিলেন ‘মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক চেইঞ্জ’ নামের সরকারবিরোধী দলের কর্মী। এখন ম্যালকমের দলটিই দেশের প্রধান বিরোধী দল। ম্যালকম ২০০৮ সালে স্কটল্যান্ডে এসেছিলেন, পড়াশুনা করতে। কিন্তু নিজ দেশে ফিরে গেলে নিপীড়নের শিকার হবার ভয়ে যাননি আর।
এখন তাঁর দেশে কেবল তাঁর বুড়ো বাবাই থাকেন। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে গোটা পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গেছে।
গত বছর ম্যালকম বিয়ে করেছেন এক স্কটিশ নাগরিককে। যিনি এদেশে রয়েছেন সতের বছর ধরে। ওয়েস্ট লোথিয়ানে ওঁরা একসঙ্গে থাকছেন। এডিনবরার এক হাসপাতালে মাস চারেক আগে তাদের মেয়ের জন্ম হয়।
জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারের পথেঘাটে রায়ট পুলিশের দেখা মেলে হরহামেশাই। ওদের কাজ হল, প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়ার সরকারের বিরুদ্ধে চলমান যে কোনো প্রতিবাদে অংশ নেওয়াদের পেটানো। সরকারের অনেক নীতিরই কঠোর সমালোচনা করেন জনগণের একটা অংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারি সার্ভিসগুলোর মেরামতঅযোগ্য অবস্থা আর গুরুতর অসুস্থ স্বাস্থ্যসেবা খাত— যেটি নিয়েই কথা হোক না কেন, রায়ট পুলিশের পিটুনি খেতেই হবে।
আর এসব কারণেই তরুণ বয়সে ম্যালকম দেশ ছাড়েন।
সুখের বিষয়, লিনলিথগাউ এন্ড ইস্ট ফলকির্কের এসএনপি-দলীয় (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি) এমপি মার্টিন ডে এই পরিবারের বিষয়টি নিজে দেখভাল করছেন। তিনি হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেলের কাছে চিঠি লিখেছেন যাতে তিনি ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের ‘আর্টিকেল এইট’ অনুসারে ম্যালকমের বিষয়টি বিবেচনা করেন।
এর আগে, গত ১১ বছরে কয়েক বারই ম্যালকম স্কটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেছেন স্থায়ী হবার জন্য। কিন্তু তাঁর হাতে যথেষ্ট প্রমাণাদি নেই, এ কথা বলে বারবারই তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মেয়ের জন্মের পরও তিনি দরখাস্ত করেছিলেন মানবিকতার দিক থেকে বিষয়টি দেখতে। হোম অফিস তখনও তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “ফিরে যাও নিজের দেশে।”
অথচ ম্যালকমের স্ত্রীর তো সেখানে থাকার অনুমতি রয়েছে। তার ওপর, তাদের মেয়ের জন্ম হয়েছে সে দেশে। হোম অফিসের এই নির্দেশনা পেয়ে তাই ম্যালকমের পরিবার হতবাক। একে অমানবিক নির্দেশনা বলেও মনে হচ্ছে তাঁর কাছে। ‘দেশে তো কিছুই নেই আমার। সব ফেলে চলে এসেছিলাম। পরিবারের সদস্যরাও নেই। ফিরে যাবার মতো কী আছে?”—হতাশ ম্যালকমের প্রশ্ন।
এক বছরের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছেন ম্যালকমের স্ত্রী। এ সময়ে বেতনও পাবেন তিনি। এখন যদি ম্যালকমকে মেয়ে নিয়ে জাম্বিয়া ফিরতে হয়, তবে স্ত্রীকে অন্য কাজে ঢুকতে হবে। কারণ জাম্বিয়ায় ম্যালকম ও তাঁর কন্যার অন্নসংস্থান করতে হবে স্ত্রীকেই। স্কটল্যান্ডে আয় করে ওদের পাঠাতে হবে। অথচ প্রিম্যাচিউরড বেবির জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর অনেক শারীরিক ধকল গেছে।
পার্লামেন্ট মেম্বার মার্টিন ডে ম্যালকমের পক্ষে তাঁর আবেদনে লিখেছেন, নিজ দেশে আফ্রিকান কালারস এবং জাম্বিয়ার বিরোধী দল এমডিসির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন ম্যালকম। তাই দেশে ফিরে যাওয়া নিরাপদ হবে না তাঁর জন্য।
ডে আরও বলছেন, ম্যালকম তো ঘরদোর বানিয়েছেন স্কটল্যান্ডকেই। বিয়ে করেছেন এখানে। সন্তানের বাবাও হলেন। ম্যালকমের মেয়ের এই মাটিতে জন্ম হবার পরও ওকে এদেশ থেকে চলে যেতে বলা হল, যেটাকে খোলাখুলি ‘অমানবিক’ বলেই মনে করছেন বিরোদী সোশ্যাল ডেমোক্রেট দলীয় এই এমপি।
চার মাসের এই শিশুটির স্কটল্যান্ডে তার মা ও বাবার সঙ্গে থাকার অধিকার অস্বীকারের কোনো উপায় নেই বলেও মনে করছেন ডে। যুক্তরাজ্য সরকারের ভেঙে পড়া ইমিগ্রেশন সিস্টেমের যতসব লজ্জাজনক এটিচ্যুডের আরেকটি রূপ এটা, এমনও ভাবছেন তিনি।
টোরি সরকার ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে যে ‘সবার জন্য একই নীতি’ গ্রহণ করছে, সেটা আর কাজ দিচ্ছে না বলে মনে করেন এমপি মার্টিন ডে। তাছাড়া এটা অমানবিকও।
“বরং আমাদের দরকার একটি সহজে পরিবর্তনশীল, সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি। ম্যালকমরা একটি পরিবার। এখানে তার মেয়ের জন্ম হয়েছে। মেয়েটি একমাত্র এ দেশকেই চেনে। তাকে এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে ওর বাবার সঙ্গে। তার মানে, একটি ভালোবাসাময় পরিবারকে দুভাগ করে ফেলা হচ্ছে।”
হোম অফিসের এক মুখপাত্র এত কিছুর পরেও বললেন কূটনৈতিক সুরের কথা– “সংশ্লিষ্ট দেশের থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, সেসব বিবেচনা করে বিষয়গুলোর উপযোগিতা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”