রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ খামারীদের
১৪ কোম্পানির তরল দুধ বিক্রিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর নিজেদের খামারে উৎপাদিত দুধ নিয়ে ‘বিপাকে’ পড়ায় রাস্তায় দুধ ঢেলে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাবনার খামারীরা।
বাজারে বিক্রি হওয়া তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট, সিসাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার পর গতকাল রোববার চার সপ্তাহের জন্য ১৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানীর পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
তার একদিন পর সোমবার কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখলে হাজার হাজার লিটার দুধ নিয়ে বিপাকে পড়ে যান পাবনা ও সিরাজগঞ্জের খামারীরা।
সোমবার সকাল থেকে কোথাও দুধ বিক্রি করতে না পারার হতাশা থেকে পাবনার ভাঙ্গুড়া বাজারে প্রায় ৪০০ লিটার দুধ রাস্তায় ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন তারা।
বিক্ষুব্ধ খামারীরা জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া ও সাঁথিয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর,উল্লাপাড়াসহ আশেপাশের উপজেলার ২০ হাজার দুগ্ধ খামার থেকে প্রতিদিন ৫ লাখ লিটার উৎপাদন হয়, যা রাষ্ট্রায়ত্ত মিল্কভিটাসহ চারটি কোম্পানীতে সরবরাহ হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় এসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্তে দুগ্ধ সংগ্রহ বন্ধ থাকায় ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি করেও মিলছে না ক্রেতা। ফলে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচলনা করা এসব দুগ্ধ খামারীরা পড়েছেন চরম দুঃশ্চিন্তায়।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দুগ্ধ খামারি খোকন বিশ্বাস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “কোম্পানিগুলো আগের মতো আমাদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করছে না। দুধ বিক্রি করতে না পেরে আমরা মহাবিপদে পড়েছি। কারণ আমাদের প্রতিদিনের জীবন-জীবিকা এই দুধ বিক্রির ওপর নির্ভর করে।”
১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলা এবং পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলা মিলিয়ে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন বা মিল্ক ভিটা গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যায়।
এখন দুই জেলা মিলিয়ে দেড় হাজার সমিতি রয়েছে যার নিয়মিত সদস্য ১৯ হাজারেরও বেশী। অনিয়মিত সদস্য রয়েছে আরও প্রায় ১২ হাজার। সমিতিভুক্ত দুগ্ধ খামার রয়েছে ২০ হাজার। এসব সমিতি ও খামারের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৫ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত মিল্ক ভিটায় প্রতিদিন গড়ে পৌনে ২ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়। মিল্ক ভিটা ছাড়াও প্রাণ ডেইরি, আকিজ গ্রুপ, ফ্রেশ, আড়ংসহ কিছু দেশীয় কোম্পানি এ অঞ্চলে তাদের স্থাপিত ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে।