রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্ব আর নয়তো আলাদা রাষ্ট্র দাবি করলেন মাহাথির
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া কিংবা তাদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেওয়া।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেশটির সরকার পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন তুরস্ক সফররত মাহাথির।
মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া সাধারণত অন্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কিন্তু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়েছেন এবং মালয়েশিয়া এর বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের অন্যায় আচরণেরও বিরুদ্ধে অবস্থান মালয়েশিয়ার।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটিতে একসময় অনেক রাজ্য ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা মিয়ানমারকে একটি রাজ্য হিসেবে শাসন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ বার্মা রাজ্যে অনেক উপজাতি ছিল।
কিন্তু এখন অবশ্যই তাদের সঙ্গে হয় নাগরিকদের মতো আচরণ করা, নয় তাদেরকে নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভূখণ্ড দেয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে চার লাখেরও বেশি মানুষ এখনও মিয়ানমারে রয়ে গেছে। জাতিসংঘ দেশটিতে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমার অনেকগুরো রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ব্রিটিশরা চেয়েছিলো একসঙ্গে শাসন করতে। সেজন্যই অনেককে এক করে বার্মা রাষ্ট্র গঠন করা হয়। তিনি বলেন, তবে এখন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত নয়তো আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া সবসময়ই আলোচনা ও আইনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের চীনকে বলা উচিত যে তারা আপনাদের নাগরিক। ধর্ম আলাদা হওয়ার কারণে আচরণ আলাদা করবেন না।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, আজ বেশির ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য মুসলিমদেরকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু সত্য হলো ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল এবং আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষার ফল এই তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ।
ফিলিস্তিনি ইস্যুকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে তুরস্ককে অনুরোধ করেন মাহাথির। তিনি বলেন, পশ্চিমারা দেখাতে চায় ফিলিস্তিনে কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ চলছে।
মাহাথির বলেন, ‘মিডিয়াতে ফিলিস্তিনি সমস্যা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রচারণা হয়নি। সমস্যাটি না দেখাতে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে একটি চুক্তি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরাইল রাষ্ট্রটি তৈরির জন্য কাদের কাছ থেকে কিভাবে ফিলিস্তিনের জমি দখল করা হয়েছিল তা বলা হচ্ছে না।
মাহাথির বলেন, যখন আপনি সহিংসতার আশ্রয় নিবেন, তখন সবকিছু অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ সহিংসতার মাধ্যমে কোনও কিছু অর্জনের নজির অনেক কম।
উল্লেখ্য, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়্যিপ এরদোগানের আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত ২৪ জুলাই দেশটিতে পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির।