শেয়ারবাজার: এক সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা
গত সপ্তাহের পুরোটা জুড়েই শেয়ারর দরপতন ঘটেছে। এ সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২.৬৯ শতাংশ বা ১৪১ পয়েন্ট কমেছে। বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বেঞ্চমার্ক সূচক সিএসসিএক্স ২.৮৩ শতাংশ বা ২৭৭ পয়েন্ট কমেছে।
ডিএসইর বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৮৫ শতাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে, বেড়েছে মাত্র ১৩ শতাংশের। এ সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে ১৫১ টি শেয়ারের।
মূলত গ্রামীণ ফোনের কাছে পাওনা আদায়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির নেওয়া পদক্ষেপ, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং তারল্য সংকটের কারণে এমন পতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আর এসব কারণে বিনিয়োগকারীরাও আস্থার সংকটে আছেন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
শেয়ারবাজার বিশ্নেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হওয়ায় এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অবশ্য ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা গেলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হত।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ে সিআরআর ও এসএলআর জমা রাখার নিয়ম করা হয়েছে। এতে তারল্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পিপলস লিজিং বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কশিমনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতনে সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ফোনের কাছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার কর দাবি এবং অনাদায়ে লাইসেন্স বাতিলের হুমকির খবরে বোজার পড়ছে।
এদিকে ইবিএল সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতের ব্যাপক দরপতন এবংগ্রামীণ ফোনের শেয়ারের দর পড়ে যাওয়ায় সূচকে এ পতন হয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহজুড়ে প্রায় সব ব্যাংকেরই দরপতন হয়েছে। আর গ্রামীণ ফোনের শেয়ার ৪১৭ টাকা থেকে ২৫ শতাংশ কমে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩১৩ টাকায়। কেবল গ্রামীণ ফোনের মার্কেট শেয়ার ৪০ শতাংশেরও বেশি।
ডিএসইর প্রধান সূচক সপ্তাহজুড়ে ২.৬৯ শতাংশ কমে ৫০৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর গড় লেনদেন কমেছে ২.৬০ শতাংশ। মোট লেনদেন ৫.৩২ শতাংশ কমে হয়েছে ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া ৩৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০২টিরই দর কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৪৮টির।
দর বাড়ার শীর্ষে ছিল রেকিট বেনকিজার। বহুজাতিক এ কোম্পানির শেয়ারের দর ১৮.৬৩ শতাংশ বেড়েছে। আর সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য ২৮.৭০ শতাংশ কমেছে। টার্নওভারের শীর্ষে ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।
এছাড়া, সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স সপ্তাহজুড়ে ২.৮৩ শতাংশ কমে ৯৪৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে মোট ২০৯ কোটি টাকার শেয়ারের। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৩০৯টি ইস্যুর মধ্যে ২৫৬টিরই দর কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৪৩টির।
ন্যাশনাল পলিমারের লভ্যাংশ:
বৃহষ্পতিবার অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল পলিমারের পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের ২২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২০ টাকা করে রাইট শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোম্পানিটি প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে রাইট শেয়ার ছাড়বে। এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পেতে আগামী ১৫ অক্টোবর ডিভিডেন্ড এবং রাইট শেয়ার-সংক্রান্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য ২২ সেপ্টেম্বর রেকর্ড ডেট ঠিক করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের আইপিও আবেদন শুরু ২৩ সেপ্টেম্বর:
বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর, চলবে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা তুলবে। বন্ডটির প্রতি ইউনিটের দর ৫ হাজার টাকা। কোম্পানিটি ভূমি উন্নয়ন ও সিভিল ওয়ার্ক, প্রাথমিক জ্বালানি, যানবাহন ক্রয়, প্রকৌশলী ও পরামর্শক সেবা ও চলতি মূলধনের জন্য এই টাকা ব্যয় করবে।