হামলার পর গণমাধ্যমকে যা বলেছিলেন শেখ হাসিনা
২০০৮ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
সে হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও নিহত হন আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী।
হামলায় আরও ৪’শ জন আহত হন। আহতদের অনেককেই বরণ করে নিতে হয় পঙ্গুত্ব, কেউ কেউ আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের ওপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বড় আঘাত এটিই।
হামলার পর রাতে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে এই হামলার জন্য দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবি জানান।
সাক্ষাৎকারে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, “আমার নেতা-কর্মীরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে অনেকেই ইনজিউরড (আহত) হয়েছে। তাদের রক্ত এখনও আমার কাপড়ে লেগে আছে। আমার নেতা-কর্মীরা তাদের জীবন দিয়েই আমাকে বাঁচিয়েছে।”
আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার বাধা দিয়েছিল বলেও সে রাতে অভিযোগ করেছিলেন শেখ হাসিনা।
“আমার কাছে ঢাকা মেডিকেল থেকে এ পর্যন্ত আসা তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের ১৬ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন, আইভি রহমান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।”
২৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইভি রহমান।
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই অভিযোগ করেছে, হামলার পর পুলিশ তাদের সহায়তা করার পরিবর্তে উল্টো হেনস্তা করেছিলো।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন আহতদের সাহায্য করতে গেছে, ঠিক সে সময় পুলিশ উল্টো টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও তাদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে পুলিশের লাঠি পেটার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “পুলিশের কার্যক্রম থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো এই হামলার মাস্টারমাইন্ড সরকার।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম বর্বর এই হামলার ঘটনায় নানা নাটকীয়তার পর ১৮ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল এই মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।