‘একুশে আগস্টে বেঁচে যাওয়াটা আল্লাহর ইশারা ছাড়া আর কিছুই নয়’
২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা হয়েছিল তার ১৫ বছরপূর্তিতে সেই হামলার মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার ইশারাতেই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউটে একুশে আগস্ট উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন দুঃসহ সেই সময়ের পূর্বাপর।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘ট্রাকটা (অনুষ্ঠানের মঞ্চ) এত সামনে নিয়ে আসছ কেন?’ আমাকে বলল, ‘ব্রেক কষতে কষতে ট্রাকটা একটু সামনে চলে গেছে।’ তার মানে হল, ওই রমনা হোটেল থেকে তারা যে টার্গেট করে, রেকি করে গ্রেনেড মারার জন্য যে প্ল্যানটা করেছিল সেটা আর কার্যকর হয়নি।”
“সেটা আল্লাহর ইশারা ছাড়া আর কিছুই না, আমি যা মনে করি।”
আমার ট্রাকে ওঠার জন্য একটা সিঁড়িও বানানো ছিল। যাহোক, আমি উঠে গেলাম। তখনও তো জানি না কী ঘটনা।
ট্রাকের ওপর বানানো যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন, বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামনে এসে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এর পরপরই নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফেলে মানববর্ম তৈরি করে ফেলে।
মুহূর্তের ওই বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মঞ্চের পাশে থাকা অনেক নেতাকর্মীর দেহ। একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ঘিরে রেখেই তাঁকে তাঁর মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “যেহেতু আমার দূরে দেখতে অসুবিধা ছিল, চশমাটা পড়ে গিয়েছিল কোথাও, আমি ভালো করে দেখতে পাচ্ছিলাম না কী হচ্ছে। কিন্তু আমি গাড়িটা নিয়ে যখন মোড় পার হয়ে স্টেডিয়ামের দিক থেকে বের হলাম, সাথে সাথে সেখানে টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ।”
“আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা যাঁরা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে গেছেন, তখন একটা বীভৎস দৃশ্য তারা (পুলিশ) তৈরি করল যেটা আমরা পরে শুনেছি। সেখানে যারাই যাচ্ছে তাদের মারছে পুলিশ, লাঠিচার্জ করছে, সেই সাথে টিয়ার গ্যাস মারছে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের ওপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বড় আঘাত এটিই।
একুশে আগস্টের সেই হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের সেসময়কার মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ দলটির ২৪ জন নেতাকর্মী।
হামলায় আরও ৪’শ জন আহত হন। আহতদের অনেককেই বরণ করে নিতে হয় পঙ্গুত্ব; কেউ কেউ আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।