‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়ে মিন্নির আবেদন
দেশজুড়ে আলোচিত বরগুনার যুবক রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দোষ ‘স্বীকার’ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তা প্রত্যাহারের জন্য পুনরায় আবেদন করেছেন তিনি।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম মিন্নির উপস্থিতিতে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে এ আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করেন।
তবে আবেদনের শুনানির দিন এখনো নির্ধারন করেননি বিচারক।
মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বলেন, এর আগে মিন্নির জামিন আবেদন শুনানির জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার সব নথি তলব করেছিল। সেখান থেকে নথিগুলো হাকিম আদালতে আসার পর জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৪ আসামিকে হাজিরা দিতে বুধবার আদালতে আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার ১৩ আসামিকে একসাথে আদালতে আনা হয়। পরে পৃথকভাবে আনা হয় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে। মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় সে যশোরের কিশোর সংশোধনাগারে আছে।
গত ২৬ জুন স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য দিবালোকেই রিফাত শরীফ নামে বরগুনার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
হত্যাকান্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায় রিফাতের স্ত্রী বারবার ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় পাশে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও রিফাতের স্ত্রী ছাড়া কেউই সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
এর একদিন পর বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে মামলা করেন রিফাত শরীফের বাবা।
এরমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার মূল নকশা করেন মামলার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশব্যপী সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডকে ‘জনগণের ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্যও আসে হাইকোর্ট থেকে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত কয়েক আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান ঘটনার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ২ জুলাই সকালে পুলিশের বরাত দিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়নের নিহত হবার খবর আসে গণমাধ্যমে।
রিফাত শরীফের মৃত্যুর পর তার বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন তাতে প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
তবে ১৩ই জুলাই রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নতুন দিকে মোড় নেয়।
দুলাল শরীফ বলেছিলেন, “নয়নের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা মিন্নি ও তার পরিবার ‘সুকৌশলে’ গোপন করে গেছে। ওই বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় শরিয়া বহির্ভূতভাবে মিন্নি তার ছেলেকে বিয়ে করেছেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় আসা-যাওয়া ও যোগাযোগ রক্ষা করতেন।”
শ্বশুরের এ বক্তব্যকে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় পড়ে বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য’ বলে দাবি করেছিলেন মিন্নি।
এরপর গত মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে এনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি করে রাত নয়টার দিকে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।