অপ্রতিরোধ্য প্রকৃতি
মানুষ তার সীমিত ক্ষমতা নিয়ে পিরামিড বানিয়েছে, ভালোবেসে তাজমহল গড়েছে। দেখে আমাদের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়, মুখে কথা সরতে চায় না। তাহলে অপার শক্তিশালী প্রকৃতি যখন কিছু সৃষ্টি করে, সেটা দেখে কি বলবেন? পৃথিবীটাকে চষে বেড়ানোর সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তারা হয়তো জানবেন। আর আমরা যারা শহরেই আছি, তারাও কিন্তু দূরে নই প্রকৃতি থেকে। বিকেলে ছাদে উঠে হঠাৎ সিমেন্টের শক্ত প্রাচীর ফুড়ে বের হওয়া বট কিংবা অশ্বত্থের চারা আমরা কে দেখিনি, বলুন? এটাও কি কম আশ্চর্যের? এই ইট পাথরের শহরেও প্রকৃতি কোথাও কোথাও অপ্রতিরোধ্য। এমনই কিছু বিষয় তুলে ধরেছে ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেলিং অনলাইন।
প্রকৃতির এমনই কিছু আশ্চর্য সৃষ্টি নিয়ে আজকের এই আয়োজন। ‘চক্ষু ছানাবড়া’ হয়ে যাবে এমন আশ্চর্য সৃষ্টি দেখে।
কম্বোডিয়ার মন্দির
কম্বোডিয়া দেশটি জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মন্দির। কিন্তু সিয়েম রীপে অবস্থিত আংকর ওয়াট মন্দিরটি যেন এদের সবার সেরা! প্রকৃতি আর মানুষের সৃষ্টি কি করে এক হয়ে যায়, এই মন্দিরটি না দেখলে বোঝা বিশ্বাস হতে চাইবে না আপনার! শত বছরের পুরানো এই মন্দিরগুলো গাছের চাপে ভেঙ্গে পড়ছে না, বরং মিশে আছে একে অন্যের সঙ্গে!
প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দানব
কিছুক্ষণের জন্য ভেবে নিন প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো এক লেগুনে কায়াকিং করে বেড়াচ্ছেন আপনি। লেগুনের স্বচ্ছ নীলাভ পানির তলা পর্যন্ত দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ এগুনোর পর দেখলেন স্বচ্ছ পানির নিচে শুয়ে আছে বিরাট এক দানব, কালচে রঙের এবড়ো-খেবড়ো এক দানব!
ভয় পাবেন না, যা দেখছেন তা জীবিত কোনো কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশকিছু যুদ্ধ জাহাজ আর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়, এদের অনেকগুলোই সলিল সমাধি হয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোর আশে-পাশে। আর বছরের পর বছর ধরে এভাবেই রয়ে গেছে সেগুলো।
এখন এই পরিবেশের অংশ হয়ে গেছে ধাতব দানবেরা। ভেতরে বাসা বেঁধেছে রংবেরঙ্গের মাছ। পর্যটকরাও অবাক হয়ে যান গত শতকের ভয়াবহতার প্রতীক এই মহা দানবদের দেখে।
সিন্ডারেলার জুতা!
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কখনো একাকী এক পাটি জুতা চোখে পড়ে যায় আমাদের, মুহূর্তের জন্য মনে হয়- আরেক পাটি জুতা কোথায় গেল? জুতাটা হারিয়ে গেল কেমন করে? হয়তো সিন্ডারেলার কথা মনে পড়ে যায় আমাদের। গল্পের সুতা ধরে আমরা হয়তো ভেবে বসি, কোন এক সিন্ডারেলা দৌঁড়তে গিয়ে ফেলে এসেছে তার জুতা, রাজপুত্র জুতাটা খুঁজেই পায়নি আর, বাস্তবে তাদের দেখাই হয়নি হয়তো আর!
সে যাই হোক, বাস্তবে এমনই এক জুতা পড়ে আছে ইউরোপের কোনো এক পাইন জঙ্গলে। রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তার গায়ে গজিয়েছে রাজ্যের মস আর ঘাস! যেন চির তরুণ থাকতে চায়, মিশে যেতে চায় প্রকৃতির মাঝে!
সাইকেল-খেকো গাছ!
মানুষখেকো গাছ আছে বলেও শুনেছি আমরা। কিন্তু বাস্তবের একটি গাছ গিলে ফেলছে লোহার জবড়-জং সাইকেলও! ওয়াশিংটনের ভাশোন দ্বীপেই পাওয়া গেছে সাইকেলটিকে। মাটি থেকে ৭ ফুট উপরে আটকে আছে গাছটির পেটের ভিতরে।
সাইকেলটি কী করে এল এই জঙ্গলে তা নিয়ে নানা রকমের গল্প প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন, কোনো এক বাচ্চা ছেলের সাইকেল সেটা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে ফেলে গেছে।ছোট্ট ছেলেটি হয়তো বড় হয়ে গেছে, ভুলে গেছে তার ছোট্টবেলা খেলনাটিকে। যদিও এইসমস্ত গল্প আদৌ কতোটা সত্য, তা বলা যায় না।
মাছেদের শপিংমল
কেমন হবে, যদি শপিং মলে মাছেরা ঘুরে বেড়ায়? চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে মাছেরা ওঠা-নামা করে? থাইল্যান্ডের হংকংয়ে এমন একটা শপিং মল মাছেরা দখল করে নিয়েছে! হ্যাঁ, ১৯৯০ এর দশকেও মানুষে গমগম করতো মার্কেটটি। কিন্তু ১৯৯৭ সালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সেটা। একসময় পরিত্যক্ত মার্কেটটির ছাদ ভেঙ্গে পড়ে।
দিন যায়, বছর যায় বৃষ্টির পানি পড়ে জমতে থাকে। এভাবেই চলতে চলতে হঠাৎ নগর কর্তৃপক্ষের লোকজন ভেতরে গিয়ে দেখলেন- জমে থাকা পানিতে বসতি গড়েছে অসংখ্য তেলাপিয়া মাছ!
জলে ভাসা জঙ্গল
কোনো একদিন জাহাজে করে সমুদ্রে ভেসে পড়ার স্বপ্ন আমরা সবাই কম বেশি দেখি তাই না? কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরে চোরাবালির দ্বীপে আটকে পড়া এই জাহাজটি দেখলে মনে হয়- এরকমই হয়তো চোখে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে কেউ সমুদ্রে ভাসিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে আটকে গেছে, পূরণ হয়নি বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।
কিন্তু স্বপ্নের ভূতেরা রয়ে গেছে জাহাজটিকে আঁকড়ে! সমুদ্রের ঢেউয়ে পাড় থেকে ভেসে আসা বীজ আটকে পড়ে জাহাজের কঙ্কালে। ধীরে ধীরে এই জলে ভাসা জঙ্গলে বাসা বেঁধেছে পাখিরা। বছরের পর বছর ধরে মানুষের চোখের আড়ালে তৈরি হয়েছে এই স্বপ্নের দুনিয়া, যেখানে জল আর স্থল যেন সত্যিই এক হয়ে গেছে!