করোনাকালে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোয় যেভাবে উদযাপিত হচ্ছে নববর্ষ
সামাজিক দূরত্বে আবদ্ধ মহামারী কবলিত ২০২০ সালকে হয়তো নীরবেই চলে যেতে হবে।
বিশ্বের প্রধান শহরগুলোয় সাধারণত বছরের শেষরাত এবং নতুন বছরের শুরু খুবই জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করা হয়, তবে এবছর করোনার প্রকোপে বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহরে সুনসান নীরবতার মাঝে বিয়েই বিদায় নেবে ২০২০ সাল। তবু কিছু শহরে বরাবরের মতো হবে নানা ধরনের আয়োজন, শুধু একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে।
চলুন ঘুরে দেখা যাক, পৃথিবীর প্রধান শহরগুলো কীভাবে ২০২০ সালকে বিদায় জানিয়ে বরণ করে নিচ্ছে আরেকটি নতুন দশকের সূচনা।
সিডনি
সিডনিতে সাম্প্রতিককালে করোনার স্থানীয় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শহর কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করেছে বড় ধরনের উদযাপনের উপর। যদিও, শহরের কোনো কোনো স্থানে সর্বোচ্চ ১০জন নিয়ে পার্টি করার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবং শহরবাসীকে উৎসাহিত করা হয়েছে ঘরে বসে ৭ মিনিটব্যাপী সিডনি হারবার ব্রিজে জমকালো আতশবাজি ও আলোকসজ্জা টিভিতে উপভোগ করবার জন্য।
লন্ডন
লন্ডনে থেমস নদীর পাড়ে বাৎসরিক আলোকসজ্জা ও আতশবাজি প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তবে সংস্কারের জন্য থেমে থাকা বিখ্যাত বিগ বেন ঘড়ি সচল হবে মধ্যরাতে।
শহরের বাসিন্দারা নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের অধীনে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী, লন্ডনের বাসিন্দারা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসতে পারবে।
প্যারিস
সংগীতশিল্পী জেন-মাইকেল-জ্যার প্যারিসে আয়োজন করেছেন "অপর প্রান্তে স্বাগতম" নামে এক ভার্চুয়াল লাইভ কনসার্টের। ফ্রান্স এবং ইতালি সেইসব দেশের মাঝে অন্যতম; যারা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছিল করোনা সংক্রমণে। নতুন করে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে, রাতের বেলা বাহিরে লোকসমাগম ঠেকাতে নববর্ষে তাই কারফিউ জারি করেছে ইউরোপীয় রাষ্ট্র দুটি। এলক্ষ্যে প্যারিসে মোতায়েন করা হয়েছে ১ লাখ পুলিশ।
বার্লিন
বার্লিনেও একদম সাদামাটা ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপন হবে নববর্ষ।
জার্মান সরকার নববর্ষ উপলক্ষে সকল রকমের আতশবাজি ক্রয় ও বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মহাসড়কে লোকসমাগম কমাতেই এ পদক্ষেপ।
রিও ডি জেনিরো
ব্রাজিলের রিও নগরীতে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। বরাবরই ৩১ ডিসেম্বর উপলক্ষে সারা বিশ্বের লাখো মানুষের ভিড়ে তা পরিণত হতো নববর্ষ উৎযাপনের প্রাণকেন্দ্রে। তবে এইবার কর্তৃপক্ষ সমুদ্রে সৈকতে দর্শনার্থী প্রবেশের ব্যাপারে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যাতে ব্রাজিলের মতো জনবহুল দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ পদক্ষেপ।
নিউইয়র্ক
পৃথিবীর রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো নববর্ষ উদযাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পেশার ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের পরিবার টাইমস স্কয়ারে সংগীতানুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
টোকিও
এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহরগুলোর মাঝে একমাত্র টোকিওতে নানান আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন হবে মহামারীর ভেতর নববর্ষ।
৩১ ডিসেম্বর টোকিওর বড় নৈশক্লাব তার নতুন রিয়েল এক্সপেরিয়েন্স কাউন্টডাউন পার্টির সাথে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে। ক্লাবটিকে এরিনা, আইল্যান্ড এবং ওয়াটার নামে তিনটি বিভাগে ভাগ করা হবে, যেখানে সারা রাত ধরে বেশ কিছু ডিজে এবং শিল্পীকে লাইভ পারফর্ম করতে দেখা যাবে।
অকল্যান্ড
টোকিওর ছাড়া বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মাঝে কেবল নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে শহরে বরাবরের মতো জমকালোভাবে উদযাপিত হবে নববর্ষের অনুষ্ঠান। করোনার শুরু থেকেই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় মহামারীর ভেতরেও নিউজিল্যান্ডের অবস্থা ছিল স্থিতিশীল, তাই নববর্ষকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের আনন্দ-উৎস্ব এবং আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে দেশটির প্রধানতম এই শহর।
ঢাকা
বিগত কয়েক বছর ধরেই ঢাকায় ইংরেজি নববর্ষকে কেন্দ্র করে আতশবাজি ফোটানো, ফানুস ওড়ানো এবং রাতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনগণ যেন দ্বিগুণ উৎসাহে তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ডিএমপি নগর জুড়ে জারি করেছে বাড়তি সতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। তবে নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকাতে কোথাও কোনো জনসামগমের প্রস্তুতি এখনো দেখা যায়নি।