রোবট কি মানুষের কাজের জায়গা দখল করে নেবে
বিশ্বজুড়ে যখন কোভিড-১৯ এর মহামারি চলছে, তখন ঘটে চলেছে আরেক পরিবর্তন- রোবটের উত্থান।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে রোবট মানুষের অনেক কাজের ক্ষেত্র দখল করে নেবে। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এই প্রক্রিয়াকে আরও বেশি বেগবান করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে আসে।
ভবিষ্যত গবেষক বা ফিউচারিস্ট মার্টিন ফোর্ড এর মতে 'মানুষ সাধারণত বলে যে, তারা তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ বা মিথষ্ক্রিয়ার জন্য মানবিক ছোঁয়া চান। কিন্তু কোভিড-১৯ সেই ধারণাকে বদলে দিয়েছে'। মার্টিন ফোর্ড আসছে দশকগুলোতে অর্থনীতিতে রোবটকে কিভাবে সংযুক্ত করা হবে সে বিষয়ে লেখালেখি করে থাকেন।
"কোভিড-১৯ ভোক্তাদের পছন্দের ধরণকে পাল্টে দিতে যাচ্ছে এবং এটি স্বয়ংক্রিয়তা বা অটোমেশনের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।"
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বাড়াতে ছোট বা বড়- নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান রোবটের ব্যবহার বাড়াচ্ছে এবং পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে আসতে হয় এমন কাজের কর্মী কমাচ্ছে। এছাড়া কর্মীরা যেসব কাজ বাড়িতে থেকে করতে পারবে না এমন কাজ করতেও রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রিটেইলার ওয়ালমার্ট মেঝে পরিষ্কার করতে রোবট ব্যবহার করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় তাপমাত্রা পরিমাপ করতে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করতে রোবট ব্যবহার করছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করেছেন যে, ২০২১ সাল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হতে পারে। এমন অবস্থায় রোবট কর্মীর চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে রোবটের চাহিদা বাড়ছে
যেসব কোম্পানি পরিষ্কার এবং জীবাণুনাশক পণ্য তৈরি করে তাদের প্রতিষ্ঠানে রোবটের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ইউভিডি রোবটস নামে একটি ডেনিশ কোম্পানি যেটি আল্ট্রাভায়োলেট-লাইট-ডিসইনফেকশন রোবট তৈরি করে তারা চীন এবং ইউরোপের হাসপাতালগুলোতে শত শত মেশিন সরবরাহ করেছিল।
যেসব মুদি দোকান কিংবা রেস্তোরাঁ টেকঅ্যাওয়ে বা খাবার কিনে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিয়ে থাকে সেগুলোতে এসব রোবটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে, আশা করা হচ্ছে যে এসব প্রযুক্তির ব্যবহারও তত বাড়বে- হয়তো দেখা যাবে যে স্কুল কিংবা অফিস পরিষ্কার করছে রোবট।
কাস্টমার অব দ্য ফিউচার নামে একটি বই লিখছেন ব্লেক মরগান। তিনি বলেন, 'ভোক্তারা এখন তাদের নিজেদের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।'
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে
ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফাস্ট-ফুড চেইনগুলো খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহতে পরীক্ষামূলকভাবে রোবট ব্যবহার করছে।
আমাজন এবং ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানের গুদামে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে রোবটের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে।
কোভিড-১৯ এর মহামারির পর এই দুটি কোম্পানিই বাছাই, শিপিং এবং প্যাকেটজাত করার জন্য রোবটের ব্যবহার আরো বাড়ানোর চিন্তা করছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এর ফলে এসব কর্মীদের অনেকেই বেকার হয়ে পড়বে।
একবার যদি কোন একটি কোম্পানি নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য কর্মীর পরিবর্তে রোবটে বিনিয়োগ করে তাহলে সেটি আবার একই কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ দেবে- এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রোবট তৈরি করা এবং সেগুলো ব্যবসায়ে নিয়োগ করাটা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু একবার যদি সেগুলোকে সচল করা যায় তাহলে সাধারণত তা কর্মীদের তুলনায় সস্তা।
এ বিষয়ে ফিউচারিস্ট মার্টিন ফোর্ড বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে রোবটের ব্যবহার চালু হলে তা বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করবে।
"মানুষ সেসব স্থানেই যেতে চাইবে যেখানে মানুষের আনাগোনা কম থাকে এবং এ কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম হয়," তিনি বলেন।
কিন্তু রোবট কি মানুষের মতোই দক্ষ?
যেসব ক্ষেত্রে কোন ধরণের শিক্ষা বা সেবার জন্য ব্যক্তির প্রয়োজন হয় সেখানে কিভাবে রোবটগুলো কাজ করবে?
এর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটানো হচ্ছে যা স্কুলের শিক্ষক, শরীরচর্চার প্রশিক্ষক এবং ব্যবসায়িক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে পারবে।
বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। ফেসবুক এবং গুগলও আপত্তিকর পোস্টগুলো সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে থাকে।
তবে রোবট নিয়ে সংশয়বাদীরা বলছেন, এসব কাজের ক্ষেত্রে কোন না কোনভাবে মানুষ জড়িত থাকবে।
২০১৭ সালের নিজের এক গবেষণায় গ্লোবাল কনসালটেন্ট ম্যাককিনজি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়তা এবং রোবটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ কর্মী কাজ হারাবে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে যে মহামারির মতো ঘটনা সব ধরণের সময় সীমার ধারণাকে পরিবর্তিত করে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তিকে মানুষ কিভাবে বিশ্বে সংযুক্ত করতে চায় তা নির্ভর করবে মানুষের সিদ্ধান্তের উপর।