মহামারিতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এমন সম্পূরক খাদ্যের চাহিদা বেড়েই চলেছে: বিক্রি ১৪০.৩ বিলিয়ন ডলার
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও ফিটনেস বাড়াতে, ওজন কমাতে বা যৌন সক্ষমতা বাড়াতে প্রতি চারজন আমেরিকানের তিনজনই এবং শিশুদের প্রতি তিনজনের একজন সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এমন সম্পূরক খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। গত বছর বিশ্বজুড়ে ১৪০.৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পূরক খাদ্য বিক্রি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে এ খাদ্যের বাজার ১৫১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
সম্পূরক খাদ্যের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম, অরগান টিস্যু, গ্রন্থিবিশেষ, বিপাক উপাদান এবং উদ্ভিদ (যেমন, ঔষধি গাছড়া)। এসব সম্পূরক খাবার বড়ি, গুঁড়ো বা তরল হিসেবে কেনা যায়। তবে সেসব ওষুধ নয়, খাদ্য হিসেবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
আইন অনুসারে, সম্পূরক খাদ্যে কেবল অনুমোদিত খাদ্য উপাদানই থাকতে পারে। তবে কোনো কোনো সম্পূরক খাদ্যে যতটা বলা হয়, তার চেয়ে অনেক কম বা বেশি পুষ্টি উপাদান থাকে। কোনো কোনো সম্পূরক খাদ্যে আবার অননুমোদিত ওষুধ বা নিষিদ্ধ উপাদানও থাকে।
এফডিএর তথ্যানুযায়ী, জীবাণু, কীটনাশক বা ভারী ধাতবের কারণে দূষিত হওয়ার জন্য কিছু কিছু সম্পূরক খাদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার লেবেলের লেখা উপাদানের সঙ্গে মেলে না, এমন উপাদান থাকার কারণেও অনেক সম্পূরক খাদ্য বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অননুমোদিত উপাদান বেশি থাকে ওজন কমানো, শরীরচর্চা, ব্যথা উপশম, নিদ্রাবর্ধক কিংবা যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পূরক খাদ্যগুলোতে।
আবার অননুমোদিত ওষুধও সম্পূরক খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা হয়।
আমেরিকায় এসব খাদ্য বাজারজাত করার আগে মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। এনএসএফ ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএসপি-সহ (ইউনাইটেড স্টেটস ফার্মাসিউটিক্যাল কনভেনশন) আরও কিছু মান যাচাইকারী সংস্থার ছাড়পত্র ছাড়া দেশটিতে সম্পূরক খাদ্য বিক্রি করা যায় না।
কিন্তু এই মান যাচাইকারী কর্মসূচিগুলো স্বেচ্ছাসেবামূলক। এসব কর্মসূচির আওতায় খুব অল্প পরিমাণ সম্পূরক খাদ্যের মান যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়। ইউএসপি বর্তমানে ৫ থেকে ৭ শতাংশ খাদ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
কয়েকটি কোম্পানি নিজ উদ্যোগেই তাদের সম্পূরক খাদ্যের মান যাচাই করতে অনুরোধ করেছিল এনএসএফকে। এসব খাদ্যের ১০ শতাংশ এনএসএফের ছাড়পত্র পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
ছাড়পত্র ছাড়া ভেজাল বা ভুল ব্র্যান্ডযুক্ত উৎপাদক ও পরিবেশকদের সম্পূরক খাদ্য বিপণন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অনেকেই মানে না।
এনএসএফ, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এবং বেলজিয়ামের সায়েন্সানসো'র বিজ্ঞানীরা ১৭টি ব্র্যান্ডের সম্পূরক খাদ্য পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় খাবারগুলোতে নিষিদ্ধ সিন্থেটিক উদ্দীপক ডিটারেনল পাওয়া যায়।
গত ডিসেম্বরে এফডিএ সতর্ক করে দেয়, অনলাইনে কেনা প্রায় ৫০টি ওজন কমানোর ও পুরুষের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির পণ্যে তারা অননুমোদিত ওষুধের উপাদান পেয়েছে। এসবের মধ্যে কিছু বেস্টসেলার পণ্যও রয়েছে।
২০১৭ সালে অন্টারিয়োর গেল্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক অনিদ্রার জন্য ব্যবহৃত ৩১টি মেলাটোনিন সম্পূরক পরীক্ষা করে দেখেন। তারা দেখতে পান, সম্পূরকগুলোতে মেলাটোনিনের পরিমাণ প্রতিশ্রুত পরিমাণের চেয়ে ৮৩ শতাংশ থেকে ৪৭৮ শতাংশ পর্যন্ত কম।
ভুল লেবেলযুক্ত বা ভেজাল সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
গত অক্টোবরে টেক্সাসের একটি ফেডারেল আদালত দুটি সম্পূরক খাদ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের কারাদণ্ড দেন এবং তাদেরকে মিলিতভাবে ১০.৭ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেন। প্রতিষ্ঠান দুটি ভুল লেবেলযুক্ত সম্পূরক খাদ্য বিক্রি করত। শরীরচর্চা ও ওজন হ্রাসের এ খাবারগুলো লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
সম্পূরক খাদ্য বিক্রি করে, এমন প্রায় ১ হাজার প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে এফডিএর ডেটাবেজে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে তাদের কাছে যতগুলো নাম আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ও দোকানে বিপজ্জনক সম্পূরক খাদ্য বিক্রি করে।
ফিটনেস বা স্বাস্থ্য বাড়াতে চাইছেন যারা, তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে এসব সম্পূরক খাদ্য।
-
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল