বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ খাদ্যাভাস মেনে চললে স্মৃতির উন্নয়ন হয়, মস্তিষ্ক বুড়িয়ে যাওয়ার গতিও কমে
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দশ বছরেরও বেশি সময় বসবাসের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি, এখানকার খাবার শুধু সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অসাধারণ। ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট টানা আট বছর ধরে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাসকে (মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট) বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের তুলনায় অনেক ভালো বলেই মনে হয়।
এসব অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে, প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে শাকসবজি, ফাইবার, সামুদ্রিক খাবার এবং জলপাই তেলে সমৃদ্ধ ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও দারুণ উপকারী। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এ খাদ্যাভ্যাস মস্তিষ্কের বার্ধক্য ধীর করতে এবং মানসিক তীক্ষ্ণতা বজায় রাখতেও সহায়ক।
২০২২ সালের একটি গবেষণায় প্রথম প্রমাণ মেলে যে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য মস্তিষ্কের ক্ষয় কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় ধারণাটি আরও পরিষ্কার হয়েছে।
এ গবেষণায় ২২৪ জন অতিরিক্ত ওজনের গড়ে ৫০ বছর বয়সি মানুষকে তিনটি ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে বলা হয়—একটি সাধারণ স্বাস্থ্যকর ডায়েট, একটি ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট এবং একটি "সবুজ ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট," যা উদ্ভিদভিত্তিক উপাদানে সমৃদ্ধ। দেড় বছর ধরে চলা এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, সবুজ ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণকারীদের মস্তিষ্কে সংকোচন ও নিউরনের মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সহজ কথায়, উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য গ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের বার্ধক্য ধীরগতিতে হয়, যা তাদের মানসিক তীক্ষ্ণতা বজায় রাখতে সহায়ক।
গবেষকেরা মনে করেন, সবুজ ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের একটি বড় সুবিধা হলো এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যা মস্তিষ্কে প্রদাহ কমায়। এ বিষয়ে গবেষণার প্রধান লেখক ডাফনা প্যাচটার বলেন, "এ খাদ্যাভ্যাস মস্তিষ্কের বার্ধক্য ধীর করার একটি নিরাপদ ও কার্যকর উপায় হতে পারে।"
তাই, খাদ্যতালিকায় জলপাই তেল, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল, লেবু বা মটরশুটি, ফাইবার এবং মাছ ও সামুদ্রিক খাবার যুক্ত করা শুরু করলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
মুদি দোকানে পালং শাক বা মটরশুটি কেনার মতো ছোট পদক্ষেপও আপনার মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে টুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায়ও ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে নতুন আলোকপাত করা হয়েছে।
গাট মাইক্রোবস রিপোর্টস-এ প্রকাশিত এ গবেষণায় ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের প্রভাব পরীক্ষা করা হয় গবেষণায় ব্যবহৃত ইঁদুরের অন্ত্রে থাকা অণুজীবগুলোর ওপর। ১৪ সপ্তাহ ধরে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়ানোর পর ইঁদুরগুলোর অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে যায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ইঁদুরগুলোর স্মৃতিশক্তি ভালো হয়েছে এবং তাদের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতায় নমনীয়তাও বেড়েছে। যদিও এটি প্রাথমিক গবেষণা, এবং মানুষের ক্ষেত্রে এ প্রভাব পুরোপুরি নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ গবেষণার সহ-লেখক ডেমেট্রিয়াস এম. মারাগানোর বলেন, "আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য কিশোর-কিশোরীদের পড়ালেখার নৈপুণ্য বাড়াতে এবং তরুণদের পেশাগত দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।"
সুতরাং আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে চাইলেই খাদ্যতালিকায় জলপাই তেল, শাকসবজি, ফাইবার এবং মাছ রাখা শুরু করতে পারেন।
জেসিকা স্টিলম্যান: ইনক ডটকম-এর কন্ট্রিবিউটিং লেখক