করোনামুক্ত আইসল্যান্ডে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য
বার আর রেস্টুরেন্টগুলোতে বসার জায়গা নেই। সমস্ত পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে লোকজন।
এখন আইসল্যান্ডে গেলে মনে হবে অন্য আরেক পৃথিবীতে চলে এসেছেন আপনি, যে পৃথিবীতে করোনা নামে কোন মহামারী কোনদিন আঘাত হানেনি।
কয়েকমাস ধরে লকডাউনে থাকা আমাদের জন্য এই দৃশ্য কল্পনা করা একটু যন্ত্রণাদায়কই বটে! রিকজাভিক ক্যাফেতে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ, আইসল্যান্ডের শক্তিশালী গালফস জলপ্রপাতের অতল গহ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকা- এসবের কথা ভাবলেই অস্থির লাগছে, তাই না?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সফল ইউরোপের এই দেশ। একেবারে শুরুর দিকে অল্প জনসংখ্যার এই দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ঘটে। দেশটির সরকার খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এর বিরুদ্ধে। করোনা সংক্রমিতদের দ্রুত শনাক্ত এবং আলাদা করে ফেলে। এভাবে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ফলে অবশেষে করোনামুক্ত হয় ইউরোপের এই দেশটি। শুধু তাই নয়, ১৫ জুন পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার আত্মবিশ্বাস পায় করোনা নির্মূলে সক্ষম আইসল্যান্ডের সরকার।
দু'দিন পর দেশটিতে জাতীয় দিবস যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। রাজধানীর নর্ডিক সড়কে স্থানীয়রা মিলিত হন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকোসদোতির জনতার মুখোমুখি হন। এ সময় কারও মুখে মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই ছিল না।
তবে আপনি যদি একজন পর্যটক হয়ে থাকেন, তবে দেশটিতে ঘুরতে গেলে ফ্লাইটে এবং কেফলাভিক বিমানবন্দরে পৌঁছেও বাধ্যতামূলকভাবে আপনাকে মাস্ক পরতে হবে। সেখানে পৌঁছানোর পর কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য পর্যটকদের নাক ও গলা থেকে নমুনা নেয়া হয়।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নমুনা পরীক্ষার ফল ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। যদি করোনা পজিটিভ ফল আসে, তাহলে পর্যটকদেরকে ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কেউ পরীক্ষা না করে সরাসরি কোয়ারেন্টিনে যেতে চাইলে সেই সুযোগও পাবেন। তবে পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে পর্যটকরা কোনও ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াই আইসল্যান্ডে ঘুরতে পারবেন।
আইসল্যান্ডের স্ক্রিনিং এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে- বিশ্বে করোনাভাইরাসে সর্বনিম্ন মৃত্যুর রেকর্ড যেসব দেশের রয়েছে আইসল্যান্ড তাদের একটি। যুক্তরাজ্যে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৪৪০ জন মারা গেলেও আইসল্যান্ডে সেই সংখ্যা লাখে মাত্র তিনজন।
যেটি আরও বেশি লক্ষণীয় তা হল- ইউরোপের সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশ ছিল আইসল্যান্ড। যেখানে যুক্তরাজ্যে প্রতি লাখে ৪৫০ জন করোনা-শনাক্ত হচ্ছিলেন, আইসল্যান্ডে তার সংখ্যা ছিল লাখে ৫১৩ জন।
আইসল্যান্ডের নাগরিকদের সমস্ত নমুনা পরীক্ষা পরিচালনা করে রেকজাভিকের প্রাইভেট ল্যাব ডিকোডি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কারি স্টিফ্যানসন সিএনএনকে জানান, ' ভাইরাসটি যখনই কোনও নতুন অঞ্চলে যায়, তখনি ঐ অঞ্চলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এলোমেলোভাবে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যেহেতু আমরা আইসল্যান্ডের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভাইরাসকে সিক্যুয়েন্স করেছি, তাই প্রথমেই আমরা নির্ধারণ করতে পারি যে এটি কোথা থেকে এসেছে এবং চেইন অনুসরণ করে কোথায় কোথায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে তা খুঁজে বের করে ফেলতে পারব'।
এই তথ্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে যারাই এসেছেন তাদের খুঁজে পেতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূত্র: সিএনএন