কোনো উন্মাদ নয়, ‘দ্য স্ক্রিম’-এর গোপনবার্তা মুঞ্চই লিখেছিলেন!
মডার্ন আর্টের একটি বিখ্যাত নিদর্শন, নরওয়ের শিল্পী এডভার্ড মুঞ্চের (ইংরেজি উচ্চারণ 'মাঞ্চ' নামে অধিক খ্যাত) আঁকা 'দ্য স্ক্রিম'। এই ছবি ঘিরে বহু বছর ধরে এক রহস্যের জাল বিস্তৃত ছিল, শেষ পর্যন্ত উন্মোচিত হলো দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা করা সেই রহস্যের।
মুঞ্চের ছবিতে ছোট্ট একটি বার্তা উৎকীর্ণ ছিল এতদিন। মনে করা হয়েছিল, এই লেখা অন্য কারও। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, লেখাটি স্বয়ং এডভার্ড মুঞ্চেরই।
চিত্রকর্মটির বাম পাশে এক কোণায়, প্রায় অস্পষ্ট লেখাটি ছিল এ রকম 'শুধুমাত্র কোনো পাগলের পক্ষেই এটা আঁকা সম্ভব।'
বিগত কয়েক দশক ধরে 'দ্য স্ক্রিম' ছবির এই লেখা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করত, পেইন্টিংয়ের মধ্যে লেখাটি কোনো দর্শকের।
কিন্তু ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব নরওয়ে অবশেষে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এই লেখার রহস্য উদঘাটন করেছে: বার্তাটি মুঞ্চেরই লেখা।
এক্সপ্রেশনালিস্ট ঘরানার 'দ্য স্ক্রিম'কে বলা হয় আধুনিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি চিত্রকর্ম। মানুষের মনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয়কে এই ছবির মতো এত সুন্দর করে আর কেউ বোঝাতে পারেনি বলেই সমালোচকরা মনে করেন। চিত্রের বিষয়ের যে যন্ত্রণাকাতর মুখ শিল্পী তুলে ধরেছেন, তা এতটাই পরিচিত হয়ে উঠেছে, একে সম্প্রতি একটি ইমোজির আদলও দেওয়া হয়।
মিউজিয়ামের কিউরেটররা চিত্রকর্মে থাকা বার্তাটি বিশ্লেষণের জন্য এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও শিল্পী মুঞ্চের রেখে যাওয়া নানা নোট, চিঠিপত্র ও পেইন্টিংটি প্রথম জনসম্মুখে আনার সময়ে শিল্পীর সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে তারা এ সিদ্ধান্তে আসেন।
মিউজিয়ামের কিউরেটর মেই ব্রিট গুলেংয়ের ভাষ্যে, 'এটি নিঃসন্দেহে মুঞ্চের নিজের হাতের লেখা। সে সময়ের নানা ঘটনাবলি এবং ১৮৯৫ সালে মুঞ্চ যখন প্রথম নরওয়েতে এই ছবি দেখান, এই সবকিছু তা-ই প্রমাণ করে।'
২০০৪ সালে একবার চুরি যাওয়ার পর থেকে পেইন্টিংটি জনসম্মুখে খুব কমই আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিগত বছরগুলোতে পেইন্টিংয়ের বেশ কিছু ক্ষতিও হয়েছে।
চিত্রকর্মটি প্রথম যখন সবার সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন কিছু সমালোচক একে গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করেন। আবার মুঞ্চের মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। সেই থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, চিত্রকর্মে থাকা বার্তাটি হয়তো কোনো ক্ষুব্ধ দর্শকেরই কাজ।
তবে কিউরেটরদের মতে, জনগণের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়াই সম্ভবত মুঞ্চকে তার চিত্রকর্মে ওই ক্ষুদ্র বার্তা যোগ করতে প্রভাবিত করেছিল।
ক্রিস্টিয়ানিয়াতে (বর্তমান অসলো) প্রথমবার প্রদর্শনের পরেও নেতিবাচক দর্শক প্রতিক্রিয়া পেয়ে হতাশ ও দুঃখিত হয়েছিলেন মুঞ্চ।
স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনে যখন মুঞ্চ নিজের এই ছবি প্রদর্শন করেন, তখন মুঞ্চের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তরুণ মেডিকেল শিক্ষার্থী ইয়োহান শারফেনবুর্গ। মুঞ্চকে বলেছিলেন, তার এই চিত্রকর্মই প্রমাণ দেয়- তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। মিউজিয়ামের ধারণা, মুঞ্চ বার্তাটি ছবিতে যোগ করেন ১৮৯৫ সালে কিংবা এর কিছু পরে।
কোনো একদিন অস্থিরচিত্তে কিংবা মানসিক অশান্তি নিয়ে শহরের পথে পায়চারি করতে করতেই এডভার্ড মুঞ্চ তার 'দ্য স্ক্রিম' আঁকার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
২০১২ সালে নিউইয়র্কে সোথবির নিলামে এক অজ্ঞাতনামা ক্রেতা প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার রেকর্ড গড়া দামে মুঞ্চের এই চিত্রকর্ম কিনে নেন।
- সিএনএন থেকে অনুবাদ: খুশনূর বাশার জয়া