পোর্ট্রেইট কিউবার্স: রুবিক্স কিউবে ভেসে ওঠা মুখের গল্প!
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, পাঠানের শাহরুখ খান কিংবা ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের ওয়াল্টার হোয়াইট- কেমন লাগবে যদি চরিত্রগুলোর পোর্ট্রেইটের চোখ, নাক, মুখের হাসি- সবই বানানো হয় রুবিক্স কিউব দিয়ে? শুনতে অবাক লাগলেও রুবিক্স কিউব দিয়ে এমনই তাক লাগানো পোর্ট্রেইট বানানোর কাজ করেন সোহেল কবির। পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে দিন কয়েক সময় লাগলেও শত শত রুবিক্স কিউব দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি করে ফেলেন একেকটি পোর্ট্রেইট।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিলো সোহেল কবিরের 'পোর্ট্রেইট কিউবারস'-এর যাত্রা। ঐ বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আবদুস সালাম এর প্রতিকৃতির মাধ্যমে প্রথম শুরু করেন পোর্ট্রেইট বানানোর কাজ। প্রথমদিকে টুকটাক রুবিক্স কিউব মেলাতে পারলেও পোর্ট্রেইট তৈরি করবেন- এমন ভাবনা শুরুতে সোহেল কবিরের মাথায় আসেনি। পরে ঝোঁকের বশেই তিনি আর তার ভাই মিলে উন্মোচন করেন রুবিক্স কিউবে পোর্ট্রেইট তৈরির নতুন দুনিয়া।
রুবিক্স কিউবের সূত্রপাত
বিশ্বজুড়ে রুবিক্স কিউব দিয়ে পোর্ট্রেইট তৈরির চল থাকলেও আমাদের দেশে তা অনেকাংশেই নতুন। রুবিক্স কিউব উৎপত্তির ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৭৪ সালে। হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভুত স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষক এর্নো রুবিকের হাত ধরেই সূত্রপাত রুবিক্স কিউবের।
ঘরে ছড়িয়ে থাকা কাঠের টুকরা, রঙিন কাগজ ও ইলেক্ট্রিক স্ট্রিং জোড়া লাগিয়ে অনেকটা খেলাচ্ছলেই প্রস্তুত করেছিলেন ঘনকাকৃতির এই খেলনাটি। কৌতুহলবশত রঙিন খেলনাটি ঘোরাতে ঘোরাতে এক পর্যায়ে দেখলেন, তিনি খেলনাটি মেলাতে পারছেন না। পরবর্তী সময়ে অনেকগুলো দিন খাটিয়ে এই অদ্ভুত খেলাটির সমাধান করেন এর্নো রুবিক।
প্রথমদিকে এর্নো রুবিক আশ্চর্যজনক এই বুদ্ধির খেলনাটির নাম দিয়েছিলেন 'ম্যাজিক কিউব'। পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে রাখা হয় রুবিক্স কিউব। ১৯৭৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে রুবিক্স কিউব উৎপাদন করা হয় এবং হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের খেলনার দোকানগুলোতে বিক্রয় করা হয়। ১৯৮০ সালে 'আইডিয়াল টয়' প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি ঘটে এই খেলনাটির।
রুবিক্স কিউব দিয়ে তৈরি চিত্রকর্মকে বলা হয় 'রুবিক্স কিউবিজম'। ভারত, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রুবিক্স কিউবের মাধ্যমে পোর্ট্রেইট তৈরি করেন শিল্পীরা। বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত দেরিতে শুরু হলেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে এই শিল্পের মাধ্যমে।
'পোর্ট্রেইট কিউবারস' যেভাবে শুরু...
'পোর্ট্রেইট কিউবারস' এর যাত্রা শুরুর গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, 'আমার এক বন্ধু আমাকে রুবিক্স কিউব উপহার দিয়েছিলো। রুবিক্স কিউব তো অনেকেই মিলাতে পারেন, তাই আমি কেবল মিলাতে পারার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছিলাম না। অসাধারণ কিছু করতে চাচ্ছিলাম। প্রথমে টার্গেট ছিল ফাস্ট কিউবার হওয়ার। কিন্তু বয়সের কারণেই হোক বা যেকোনো কারণেই আমার হাত দ্রুত চলতো না। পরে ইউটিউবে ও গুগলে সৃজনশীল কিছু করার জন্য ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি। হুট করেই একদিন একটা ভিডিও দেখলাম ইউটিউবে যে মানুষ রুবিক্স কিউব দিয়ে পোর্ট্রেইট তৈরি করছে। আমি তখন রুবিক্স কিউব মিলাতে পারতাম। সেই ভিডিও দেখেই আইডিয়া মাথায় আসে। তারপরদিনই আমি রুবিক্স কিউব কিনে চেষ্টা শুরু করি।'
'পোর্ট্রেইট কিউবার্স' নামের গল্প জানতে চাইলে সোহেল জানান, 'পোর্ট্রেইট কিউবার্স নাম প্রথমে ছিল না। প্রথমে নাম ছিল লাইফ এক্সপ্লোরার। প্রথম দিকে ইচ্ছা ছিল ঘুরতে গেলে ট্র্যাভেল ভ্লগ বানাবো। তখনও রুবিক্স কিউব দিয়ে যে পোর্ট্রেইট বানাবো- তার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। পরে আমি আর আমার ভাই মিলে যখন এর কাজ শুরু করি তখন নাম দেই পোর্ট্রেইট কিউবার্স। লোগোর মধ্যে বাংলাদেশের ছাপ রেখেছি কারণ আমার জানামতে আমি বাংলাদেশে প্রথম এই কাজ করছি।'
সঙ্গীত ও চিত্রকলা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল অনেক। ইচ্ছে ছিলো সঙ্গীতজ্ঞ হবেন। বিধাতা হয়তো সঙ্গীতে সঙ্গত দেননি, কিন্তু চিত্রকলার নতুন শাখায় বাজিমাত করতে ঠিকই সাহায্য করেছেন।
বাহারি রুবিক্স কিউবে বাজিমাত
দৈর্ঘ্য অংশে ৩০টি ও প্রস্থ অংশে ২০টি রুবিক্স কিউব দিয়ে একেকটি পোর্ট্রেইট তৈরি করেন সোহেল কবির। সবমিলিয়ে প্রয়োজন হয় ৬০০টি রুবিক্স কিউব। ৭০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৫০ ইঞ্চি প্রস্থের ফ্রেমে সম্পন্ন হয় একেকটি কাজ।
রুবিক্স কিউব দিয়ে পোর্ট্রেইট তৈরি করার কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ। প্রথমে যে ছবিটির পোর্ট্রেইট করা হবে সেটি খুঁজে বের করা হয়। তারপর সেটিকে পিক্সেল অনুযায়ী ভাগ করতে হয়। সোহেল বলেন, 'একটা রুবিক্স কিউবে নয়টা ফেজ থাকে। আমার টোটাল ফ্রেমে যদি ছয়শো রুবিক্স কিউব থাকে তাহলে ৬০০ গুণ ৯, সর্বমোট ৫৪০০ পিক্সেল অনুযায়ী ছবি ভাগ করে নিতে হয় প্রথমে। ওই পিক্সেল অনুযায়ী রুবিক্স কিউবে যে রংগুলো আছে সেগুলোর সাহায্য নিয়ে আস্তে আস্তে একেকটি পিস করে ঠিক করি।'
'একটি রো তে ২০টা করে রুবিক্স কিউব বসে। আমি আগে একটা একটা করে রো মিলাই এবং এটা ফ্রেমে সাজাই। আবার ইদানিং দেখা যায় যে আমি হয়তো আমার খাটে বসে মিলাচ্ছি। খাটের উপরে অর্ধেক বানানো হয়ে গেলে সেভাবে কার্টনে তুলে রাখি, পরে ফ্রেমে বসাই।'
রঙের ব্যাপারেও ভীষণ সচেতন সোহেল কবির। পোর্ট্রেইট তৈরির সময় রুবিক্স কিউবে যদি কাঙ্ক্ষিত রংটি পাওয়া না যায়, তবে তার সবচেয়ে কাছের রংটি দিয়ে সম্পন্ন করেন তার অভাব। এ ব্যাপারে সোহেল বলেন, 'ধরুন, কোনো জায়গায় কালো রঙের প্রয়োজন। আমার রুবিক্স কিউবে তো কালো রং নেই কিন্তু নীল আছে। তাই আমি নীল রং দিয়েই দিয়ে কালোর অভাব পূরণ করেছি। সে হিসেবে মুখের উজ্জ্বল অংশটা হয়তো হলুদ বা কমলা দিচ্ছি। আবার একটু গাঢ় অংশ হয়তো লাল দিচ্ছি। এভাবে আইডিয়া করে করে রং ব্যবহার করি।'
পোর্ট্রেইট কিউবারের কর্ণধার আরো বলেন, 'রুবিক্স কিউব নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেছিলাম। আমার পেজে একটা ছোট বাচ্চার ভিডিও আছে। সেখানে আমি সর্বপ্রথম চেষ্টা করেছিলাম যে কীভাবে রুবিক্স কিউবের মাধ্যমে মানুষের মুখের রং আনা যায়। রুবিক্স কিউবে কিন্তু একটাও মানুষের মুখের রং অনুযায়ী রং নেই। আমরা চোখে যা দেখি এটা আরজিবি মানে লাল, সবুজ ও নীল রং। এই তিনটা রঙই কিন্তু পৃথিবীর সব রঙের মৌলিক রং। আমার রুবিক্স কিউবে যেহেতু এই তিনটা রং আছে, তাই এটা দিয়ে আমি মানুষের মুখের রং ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম।'
একটি ফ্রেমের উপরেই বারংবার পোর্ট্রেইট তৈরি করেন সোহেল কবির। মাপানুসারে চারপাশে কাঠ ও পেছনে বোর্ড দিয়ে কাঠের দোকান থেকেই তৈরি করিয়ে নিয়েছেন বোর্ড। রুবিক্স কিউব দিয়ে একেকটি পোর্ট্রেইট তৈরির পর তার ছবি তোলা এবং ভিডিওর আনুষঙ্গিক কাজের পরেই তা ফ্রেম থেকে নামিয়ে ফেলেন। একই রুবিক্স কিউব দিয়ে ঐ ফ্রেমেই পুনরায় অন্য পোর্ট্রেইটের কাজ করেন তিনি।
সোহেল আরো বলেন, '৬০০ রুবিক্স কিউবে এখনো ছবি কিছুটা ঘোলা আসে। ভবিষ্যতে রুবিক্স কিউবের সংখ্যা যদি আরো বাড়াতে পারি, তাহলে ছবি আরো নিখুঁত হবে।'
এখন পর্যন্ত বাসাতেই পোর্ট্রেইট তৈরির কাজ করেন সোহেল কবির। তবে ভবিষ্যতে স্টুডিওর মাধ্যমে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছাও তাদের রয়েছে।
সময় লাগে সাত-আট ঘণ্টা
পোর্ট্রেইট বানানোর পরিকল্পনা, ছবি বাছাই করা এবং ফ্রেমে বসানো- সবমিলিয়ে ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগে পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে। সোহেল বলেন, 'ফটো প্রসেসিং করতে আমার মোটামুটি এক-দেড় ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। অনেক সময় ফটো বাছাই করতেই দুই-তিনদিন সময় লাগে। আমি যখন কাজে নামি আমার পুরো পোর্ট্রেইট তৈরি করতে সাড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা লাগে এখন। আগে দশ বারো ঘণ্টা সময় লাগতো।'
প্রথমদিকে কাজ শুরুর জন্য স্থানীয় দোকান থেকে ২০টি রুবিক্স কিউব সংগ্রহ করেছিলেন সোহেল কবির। চেষ্টা ছিল রুবিক্স কিউবের মাধ্যমে কোনো লেখা তৈরি করবেন। প্রথম প্রচেষ্টায় সফল হন। পরের লক্ষ্য আরো বড়। এবার ভাবনা রুবিক্স কিউব দিয়ে প্রস্তুত করবেন পোর্ট্রেইট। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একজন আমদানিকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন আরো ৫৮০টি রুবিক্স কিউব।
প্রতিটি রুবিক্স কিউবের পেছনে ১১০ টাকা এবং ফ্রেম বাবদ সাত-আট হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিলো সোহেল কবিরকে।
বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পাওয়া রুবিক্স কিউবই ছিলো ছিল সোহেলের পোর্ট্রেইট তৈরির জগতে আসার অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, 'বন্ধুর কাছ থেকে উপহার যেহেতু পেয়েছি, এই গিফট দিয়ে আসলে কোন কিছু তৈরি করা যায় নাকি- ওটা থেকেই শুরু রুবিক্স কিউব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা।'
পোর্ট্রেইটে ফোটে অসংখ্য চেনা-অচেনা মুখ!
রুবিক্স কিউব দিয়ে যে কেবল পরিচিত তারকাদেরই পোর্ট্রেইট বানান, তা কিন্তু নয়। সাধারণ মানুষের ছবির উপরেও পোর্ট্রেইট তৈরি করেন সোহেল কবির। তিনি বলেন, 'অনেকেই আসে যে ভিডিও উইশ করবে তার কোনো কাছের মানুষকে। এরকম কাজ পনেরো বিশটা করা হয়েছে। কেউ আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জানালে এবং ছবি দিলে আমি পোর্ট্রেইট তৈরি করে তাকে ভিডিও করে গুগল ড্রাইভে দিয়ে দেই। যেগুলো আমার পেজে বা চ্যানেলে আসে না আরকি।'
এখন পর্যন্ত ভাষা শহীদ আব্দুল সালাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী নজরুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান, শাহরুখ খান, লিওনেল মেসি, ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের ওয়াল্টার হোয়াইট, কেজিএফ ২ এর রকি ভাই, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা'র রুবিক্স কিউব পোর্ট্রেইট তৈরি করেছেন।
সোহেল আরো বলেন, 'যে বন্ধুটি আমাকে রুবিক্স কিউব উপহার দিয়েছিলো তারও পোর্ট্রেইট বানিয়েছি। এটা বানিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।'
বর্তমানে রুবিক্স কিউব দিয়ে ফেস পোর্ট্রেইটের পাশাপাশি ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিও বানাচ্ছেন সোহেল কবির। নতুন কিছু করার লক্ষ্যে শুরু করেছেন এই উদ্যোগ।
পরিবার থেকেও ভালোভাবেই সমর্থন পেয়েছেন তিনি। সোহেল নতুন কিছু করছে তাতেই ভীষণ খুশি তারা। তিনি বলেন, 'যেদিন আমি একবারে ফুল সেটআপ কিনে নিয়ে আসি হুট করে, তখন পরিবারের লোকজন ভেবেছিল আমি হয়তো পাগল হয়ে গেছি। কিন্তু ওই রাতের মধ্যেই যখন আমরা দুই ভাই মিলে ভাষা শহীদ আব্দুল সালামের পোর্টেইট তৈরি করে ফেলি, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমার বাবা নিজেকে অবাক হয়ে গিয়েছিলো যে এটা কীভাবে সম্ভব? ওইদিন থেকেই সমর্থন পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমি যখন পোর্টেইটের এর কাজ করি এবং আমার ভিডিও চলতে থাকে, তখন বাসায় কেউ এলেও পরিবারের লোকজন তাদেরকে আমার কাছে আসতে দেয় না এবং যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়।'
সাকিব আল হাসান দিয়েছেন নতুন পরিচয়!
এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বানানো পোর্ট্রেইটটি সোহেল কবিরের সবচেয়ে প্রিয়। এই ভিডিওটি দিয়েই জনমানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন সোহেল কবির। সোহেল বলেন, 'এই ভিডিওটা মানে আমার কাছে স্মরণীয় থাকবে সবসময়। এরপরে আমি এক হাজার ভিডিও বানালেও এটাই আমার কাছে সবসময়ের জন্য প্রিয় হয়ে থাকবে।'
আচমকাই জনমানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সোহেল কবির বলেন, 'মজার অভিজ্ঞতা এই দুই-একদিনের মধ্যে হয়েছে। আমি একদিন ইফতারের পরে বাজার করতে গিয়েছি, এর আগেও অনেকদিনই বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভিডিওটা ভাইরাল হওয়ার পরে আমি যেদিন বাজারে যাই, আমাকে প্রায় আট দশজন লোক জিজ্ঞেস করেছে যে ভাই আপনাকে টিভিতে দেখলাম আপনাকে ইউটিউবে দেখলাম। সেটা ভালো লেগেছিলো খুব।'
কাজ করতে গিয়ে আরেকটি মজার অভিজ্ঞতার কথা বলেন সোহেল কবির। 'আমার বাসায় আমার একটা ছোট ভাতিজা আছে। আমার দেখা যায় যে একটানা হয়তো ছয়শো পিস একবারে ফ্রেমে উঠিয়ে ফেলতে পারি না। দেখা যায় আমি হয়তো দুইশো পিস উঠিয়েছি, এরপর একটু বিশ্রাম নিচ্ছি বা একটু বাসার বাইরে গেছি। পরে দেখি ছোট ভাতিজা আমার কষ্ট করে করা কাজ হয়তো ফেলে দিয়েছে। তখন আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। সেই সময় একটু বিরক্ত লাগে কিন্তু এটা করে আমি মজা পাই।'
চ্যালেঞ্জের বিষয় বলতে গিয়ে সোহেল বলেন, 'কালার কম্বিনেশন নিয়ে অনেক সময় একটু বেশি চিন্তা ভাবনা করা লাগে। বিশেষ করে মানুষের চোখ মিলাতে সবচেয়ে কষ্ট হয়। এটার সময় দেখা যায়, ফ্রেম থেকে নামিয়ে আবার রিভাইস করে আবার উঠানো লাগে। মানুষের চোখটাই কিন্তু তার মুখের ৮০ শতাংশ পরিচয় প্রকাশ করে। চোখের বিষয়টা নিয়ে একটু চ্যালেঞ্জ প্রত্যেকটা পোর্ট্রেইটের ক্ষেত্রেই হয়।'
বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন সোহেল কবির। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, 'চ্যানেল থেকে যদি আয় করা শুরু করি, তাহলে আমি আমার লোকাল জবগুলো ছেড়ে দিতে চাই। এখান থেকেই সংসারে দিতে চাই। এটা করে আমি ভেতর থেকে মজা পাই। আমি যেটা বিশ্বাস করি, মজা নিয়ে কাজ করলে মানুষ কখনো ক্লান্ত হয় না।'
চ্যানেল আরো বড় হলে সোহেল কবিরের ইচ্ছা আয়ের নির্দিষ্ট অংশ গরীবদের জন্য দান করার। সোহেল তার কাজ নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শনী করতে চান। সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান নিজের কাজ।