কোরবানির পশুর হাটে একমাত্র উট
আমজাদ হোসেনকে গাবতলীর কোরবানির পশুর হাটের অনেকেই চেনেন। তার পরিচিতির অন্যতম কারণ, পশু বিক্রির জন্য নির্ধারিত দেশের সবচেয়ে বড় এই হাটের একমাত্র উট বিক্রেতা তিনি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, বিক্রির জন্য আমজাদ হোসেনের কাছে আছেও একটি মাত্র উট।
বিক্রাতাদের ধারণা, দেশের পশুর হাটগুলোতে বিক্রির জন্য তোলা এটিই একমাত্র উট।
কোরবানির পশুর হাটে গেলে ক্রেতাদের নজরে সবার আগে পড়ে দীর্ঘ উচ্চতাবিশিষ্ট পশু যার মধ্যে অন্যতম হল 'মরুভূমির জাহাজ' নামে পরিচিত প্রাণী উট। গাবতলী পশুর হাটেও বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হাজার হাজার গরু, মহিষ, ছাগলের ভীড়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বিক্রেতা আমজাদের এই উটটি।
দীর্ঘ উচ্চতার এই প্রাণীটির বিক্রয় মূল্য হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন আমজাদ। বছর দুয়েক আগে ভারত থেকে ৯টি উট এনেছিলেন তিনি যার আটটিই গত কোরবানিতে বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, "আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে এটি ছাড়া বর্তমানে কোনো উট নেই। আমরা তো গরুই আনতে পারি না, উট আনা তো আরও পরের ব্যাপার।"
দেশীয় খামারীদের প্রতি নজর দিতে বিগত কয়েকবছর ধরেই ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সীমান্ত হয়ে যাতে চোরাই পথে গরু না আসতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখে বিজিবি।
ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকবছর আগেও গাবতলীতে কোরবানির মৌসুমে বিক্রির জন্য ১০ থেকে ১৫টি উট আসতো। একদশক আগেও এই হাটে ৩০-৪০টি উট আনা হত।
আমজাদ হোসেন বলেন, "আমরা ভারত থেকে গরু এবং উট নিয়ে আসতাম। একেকটা ট্রিপে ১০ থেকে ১৫টা উট আনতে পারতাম। কিন্তু সেইসব দিন এখন আর নাই।"
তিনি জানান, উট এবং দুম্বা কিনতে তিনি ভারতের মহারাষ্ট্র এমনকি পার্কিস্তানে পর্যন্ত যেতেন। মহারাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে উট নিয়ে আসতে প্রায় পাঁচ দিনের মতো লেগে যেত তাদের।
তিনি বলেন, "এই উটগুলো আমরা ট্রাকে করে আনতাম। কিছু কিছু জায়গায় তাদের হাঁটাতাম। এরপর বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতাম।"
দেশে গবাদিপশু বিক্রির অন্যতম প্রতিষ্ঠান সাদিক এগ্রো চার বছর আগে ভারত থেকে ১৯টি উট নিয়ে আসে। গত কয়েকবছরে সবগুলোই বিক্রি হয়ে গেছে।
ওই খামারের মালিক এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসাইন জানান, তার খামারে ৭টি উট ছিলো যার সবগুলোই গত কোরবানির মৌসুমে বিক্রি হয়ে যায়।
উট আছে কিন্তু বিক্রির জন্য নেই
দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় উটের খামার ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে অবস্থিত দেওয়ানবাগ শরীফের বাব-এ মদিনা উট খামার। ১৩ বছর আগে তারা গাবতলী থেকে ১০টি উট কেনে ওই খামার কর্তৃপক্ষ। এরপর সেগুলো লালন-পালনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে খামারটিতে ৬৫টি উটের জন্ম হয়।
প্রতিবছরই ঈদুল আযহার আগে ওই খামার কর্তৃপক্ষ কয়েকটি উট বিক্রি করে দিতেন। তবে গত বছর থেকে তা বন্ধ রয়েছে।
দেওয়ানবাগ শরীফের গণমাধ্যম সমন্বয়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের এই খামার শুরু থেকেই কোনো ব্যবসায়িক খামার ছিল না। আমাদের বেশি ছিল তাই আমরা বিক্রি করে দিতাম। উটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গতবছর থেকে আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।"
বর্তমানে ওই খামারে ২৪টি উট রয়েছে। ওরসের সময় জবাই করার জন্য ওই উটগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই খামার থেকে প্রতিকেজি ৪০০টা দরে উটের দুধও বিক্রি করা হয় বলে তিনি জানান।
বাব-এ মদিনার মতো দেশের অন্যান্য অনেক জায়গাতেও উট রয়েছে তবে সেগুলোর কোনোটিই বর্তমানে বিক্রির জন্য নয়।
খুলনার মুসলমানপাড়ার বাসিন্দা জেএমএ জব্বার শখের বশে গত পাঁচ বছর ধরে দুটি উট পালন করছেন। তার ওই উট দুটিকে লালন-পালনে সহায়তা করেন তার ভাতিজা হুমায়ুন কবির।
তিনি জানান, এই উটগুলো তারা বিক্রি করবেন না।
তিনি বলেন, "খামারের অন্যান্য প্রাণীদের মতো আমার চাচা এই উট দুটিকেও ভালোবাসেন। সেগুলো জবাই করার জন্য তিনি বিক্রি করবেন না।"