খাঁচাবন্দী মানুষ প্রদর্শনী: শতবর্ষ পর ক্ষমা চাইল চিড়িয়াখানা
১৯০৪ সালে ওটা বেঙ্গা নামের এক বালককে কঙ্গো থেকে অপহরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিড়িয়াখানায় প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অবশেষে এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর, নিউইয়র্কের ব্রংক্স চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর গড়ে ওঠা আন্দোলনের জের ধরেই 'দ্য ওয়াইল্ডলাইফ কনভার্ভেটিভ সোসাইটি' নামের প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমা প্রার্থনার ঘোষণা আসে।
সংস্থাটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিয়ান স্যাম্পার বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস এবং বিদ্যমান বর্ণবাদ নিয়ে ভাবা প্রয়োজন ছিল।'
ইতোপূর্বে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি ওটা বেঙ্গা চিড়িয়াখানার কর্মচারী ছিলেন বলেও দীর্ঘদিন প্রচার করে।
ওটা বেঙ্গা কে ছিলেন?
১৯০৪ সালে মার্কিন ব্যবসায়ী স্যামুয়েল ভার্নার তৎকালীন বেলজিয়াম কঙ্গো থেকে ওটা বেঙ্গাকে অপহরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। ওটা বেঙ্গার বয়স ছিল তখন ১২ কিংবা ১৩। ১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রোংক্স চিড়িয়াখানায় ২০ দিন ধরে তাকে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে প্রদর্শন করা হয়। সমালোচনার মুখে এবং সরকারি হস্তক্ষেপে এটি অবশেষে বন্ধ হয়। এরপর তাকে নিউইয়র্কের একটি অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৯১০ সালে তিনি ভার্জিনিয়ার থিওলজিকাল সেমিনারি অ্যান্ড কলেজে যোগ দেন। সেখানে প্রতিবেশী শিশুদের শিকার করা ও মাছ ধরা শেখাতেন। শোনাতেন তার নিজ দেশের গল্প।
১৯১৬ সালের মার্চ মাসে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন ওটা বেঙ্গা।
১৯৭৪ সালে চিড়িয়াখানার কিউরেটর উইলিয়াম ব্রিজেস দাবী করেন, সেসময় কী হয়েছিল তা জানা সম্ভব না। ১৯৯২ সালে ওটা বেঙ্গার অপহরণকারী স্যামুয়েল ভার্নারের নাতি একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে ওটা বেঙ্গা ও স্যামুয়েল ভার্নারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল দাবী করে বিভিন্ন গল্প ছাপা হয়।
বইটিতে এমনকি এ-ও দাবী করা হয়েছে, ওটা বেঙ্গা তার আবদ্ধ সময়কালে ওইসব প্রদর্শনী উপভোগ করতেন। শতাব্দীজুড়েই এ ধরনের নানা মিথ্যা আখ্যান ছড়ানো হয়েছে বিশ্বজুড়ে।
সম্প্রতি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তৎকালীন নথিপত্র অনলাইনে প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে কিছু চিঠিতে ওটা বেঙ্গা ও স্যামুয়েল ভার্নারের দৈনন্দিন কার্যাবলির বিবরণ আছে। এই চিঠিগুলোর বেশ কয়েকটি ইতোপূর্বে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত 'Spectacle : The Astonishing Life of Ota Benga' বইয়ে উল্লেখ করা হয়।
এই বই প্রকাশের পরেও আরও পাঁচ বছর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ওটা বেঙ্গা রাখার চিন্তা করছে।
- সূত্র: বিবিসি