ছবির গল্প: ‘নকল’ চ্যাপলিনের আসল লড়াই
মরক্কোর ৫৮ বছর বয়সী বেলহুসেইন আবদেলসালাম যখন তিন দশক আগে গ্রেপ্তার হয়ে চাকরি হারান, তখন টিভিতে চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমা দেখেছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঠিক করে ফেলেন তার নতুন ক্যারিয়ার: 'লিটল ট্র্যাম্প' চরিত্রের জন্য বিখ্যাত সেই কিংবদন্তি ব্রিটিশ অভিনেতা ও নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাতার ছদ্মবেশেই জীবন কাটাবেন।
তারপর থেকে মরক্কোর রাজধানী রাবাতের রাস্তাগুলোতে চার্লি চ্যাপলিন সেজে পারফর্ম করেন আবদেলসালাম। মানুষকে হাসিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বাঁচেন। লোকেদের কাছ থেকে বখশিস হিসেবে তার মাসিক আয় ১৫০ ডলার বা সাড়ে ১২ হাজার টাকার চেয়েও কম। তবু 'রাস্তার তারকা' হতে পেরে গর্বের শেষ নেই তার।
স্থানীয় লোকে তাকে স্রেফ 'চার্লো' বলে ডাকে।
নিজের ও আসল চ্যাপলিনের মধ্যে একটা মিলের দেখা পান এই সাবেক স্পোর্টস ফটোগ্রাফার। দুজনেরই হাসি-তামাশার আড়ালে রয়েছে বেদনাবিধুর শৈশবস্মৃতি। একইভাবে, চ্যাপলিনকে অনুকরণ করার কাজটি আবদেলসালামের অবয়বে এমন এক কৌতুকপূর্ণ মুখোশ পরিয়ে দিয়েছে, যেটির আড়ালে তিনি নিজের বেদনা ও কঠিন জীবনসংগ্রাম আড়াল করতে জানেন।
'সবকিছু হারিয়ে ফেলার পর আমি সেই চার্লি চ্যাপলিন হয়ে উঠেছি- যে মানুষ মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ না করেও সারা দুনিয়াকে হাসিয়েছেন ও কাঁদিয়েছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও সব মানুষকে এক করার জন্য লড়াই করা এক অতুলনীয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি,' বলেন আবদেলসালাম।
নিজ দেশের রাজধানীর মূল ধমনী হিসেবে খ্যাত মোহাম্মদ ভি এভিনিউতেই চার্লোর তিক্তমধুর দিনযাপন। বেলুন, মুখোশ, বেঢপ বড় আকৃতির জুতো, ডঙ্কা, কবুতরের খাবার আর মুখে হাসি বয়ে বেড়ান তিনি।
তবে নিজ অতীতের প্রেতও বয়ে বেড়ান আবদেলসালাম। নিজের অতীত ক্যারিয়ারের ছবিগুলো সবসময় সঙ্গে রাখেন, যেখানে রাজনীতিতে সক্রিয় সুট পরিহিত এক যুবকের দেখা মেলে। ১৯৮০-এর দশকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে কাটানোর আগের ছবি ওগুলো। রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংবাদিকতার কারণের গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে দাবি আবদেলসালামের।
সেটি ছিল বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের শাসনকাল; আবদেলসালামের 'চার্লো' হয়ে ওঠার আগের ঘটনা।
-
এপি থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ