থাইল্যান্ডের চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী বাংলাদেশ, ভারতের মশা: গবেষণা
থাইল্যান্ডে ২০১৮-২০১৯ সালের দিকে যে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল, তার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশে উদ্ভুত মশার স্ট্রেইন (ধরন বা প্রজাতি) দায়ী। নতুন এক গবেষণায় এমনটি দাবি করা হয়েছে।
সে সময় থাইল্যান্ডের ৬০টি প্রদেশ জুড়ে চিকুনগুনিয়ার প্রায় ১৫,০০০ কেস সনাক্ত হয়। তবে দেশটিতে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তেমনটি শোনা যায় নি
চিকুনগুনিয়া হলো মশা দ্বারা মানুষের মধ্যে সংক্রমণশীল একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। এটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সংক্রামিত হয়। এ সংক্রমণের ফলে প্রথমে জ্বর এবং পরবর্তীতে হাড়ের জোড়ায় জোড়ায় তীব্র, অসহনীয় ব্যথা দেখা যায়। এখনও পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিষেধক বা নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।
চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসের প্রধান তিনটি জাতের নিবাস- পূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা এবং এশিয়াতে।
সম্প্রতি থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালনাকারী একটি দল দেশটির ১৩ টি প্রদেশ থেকে চিকুনগুনিয়া দ্বারা আক্রান্ত ১,৮০৬টি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে।
তারা নমুনাগুলোর জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করে দেখেন যে, ২০১৮-২০১৯ সালে যে প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল সেই স্ট্রেইনটি দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্ভুত স্ট্রেইনটির একটি মিউটেশন।
জিনোটাইপ হল কোনও জীবের জিনগত গঠন; জিনোম এনালাইসিস থেকে যে কোন জীবের কোষের গঠন, বংশবিস্তারের প্রকৃতি ইত্যাদি জানা যায়। ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি জানা প্রয়োজন কেননা জিনোম এনালাইসিস থেকেই ভাইরাসটির জিনোম কোড সম্পর্কে জেনে তা প্রতিহত করার উপায় বের করা যায়।
গবেষকেরা দেখেন, থাইল্যান্ডের ভাইরাল স্ট্রেইনের (E1-226A) সাথে আরও দুটি মিউটেশন ছিল- E1-K211E এবং E2-V264A ।
এই ডাবল মিউটেশন সম্পন্ন একই স্ট্রেইন এর আগে ২০১০ সালে নয়াদিল্লির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজির একটি দল দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল।
একই মিউটেশন ২০১৭-২০১৮ সালে ভারতের কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং নয়াদিল্লির বিভিন্ন অংশেও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
গবেষণা দলের একজন সদস্য ইওং পূভোরাওয়ান জানান, এডিস মশার জীবনীশক্তি বৃদ্ধিতে এই মিউটেশন দায়ী। থাইল্যান্ডের শহরাঞ্চলে মশার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলেছে এই ধরন।
বাংলাদেশের সাথে সংস্রব
গবেষণায় ব্যবহৃত সবগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের মধ্যে অন্তত ছয়টিতে বাংলাদেশে ২০১৭ সালের প্রাদুর্ভাবের সময় বিস্তার করা একটি স্ট্রেইনের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
পূভোরাওয়ান বলেন, "সামগ্রিকভাবে, আমাদের ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে, থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটির জিনোটাইপ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ বিশেষত বাংলাদেশে উদ্ভুত স্ট্রেইনের জিনোটাইপের অন্তর্গত"।
তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য উত্থাপন, প্রতিকার এবং বংশ নির্মূলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ মিলে একত্রে গবেষণায় এগিয়ে আসা উচিত।
সূত্র: দ্য প্রিন্ট