দশ বছরে প্রযুক্তির দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া দশ পরিবর্তন
পরিবর্তন অতি চূড়ান্ত বিষয়, একে থামাবার জো নেই কারো। পার্থক্য কেবল এটাই যে কিছু পরিবর্তন হয় খুব দ্রুত, আবার কখনোবা এর গতি থাকে মন্থর। এসব পরিবর্তন নিয়ে সব সময় ভবিষ্যতবাণীও দেয়া যায় না, তবে অনেক বছর পর পেছন ফিরে চাইলে অনুভব করা যায়।
ব্লুমবার্গের একটি টেলিভিশন শো'র জন্য এমনি দশটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের তালিকা করেছেন সান ফ্রান্সিসকোর এমিলি চ্যাং। এসব পরিবর্তন তার গত এক দশকের অনুধাবন।
১। প্রায় ১০ বছর আগে স্টিভ জবস শেষবারের মত প্রকাশ্যে মঞ্চে এসেছিলেন, এরপর টিম কুক অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে আসীন হন।
২। গত দশটি বছর আইফোন তার ৪ থেকে ১২ (এখন পর্যন্ত) সংস্করণ দিয়ে বিমুগ্ধ করে গেছে। সিরি, ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং, ৪জি, ৫জি, টাচ আইডি এবং তারপরে ফেস আইডি, বৃহৎ স্ক্রিন, ল্যাপটপের চাইতেও দ্রুতগামী প্রসেসরের মত নিত্যনতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়ে এসেছে।
৩। ২০১১ সালের প্রথম দিকে, ভার্চুয়ালি কোনও অ্যামাজন ভ্যান ছিল না কিন্তু এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলিতে প্রায় প্রতিটি রাস্তার কোণে অন্তত একটির দেখা মিলবে; রয়েছে সারা বিশ্বে ১৬০০ এরও বেশি লজিস্টিকস সেন্টার ।
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ক্লাউড কম্পিউটারের বিশাল নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি তরুণদের 'স্টার্টআপে' সহায়তা করছে। আলেক্সাকেও ভুলে গেলে চলবে না; ঘরের অন্যান্য আসবাবগুলোর মতই আলেক্সা এখন যেন এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ।
৪। ২০১১ সালে একটি কোম্পানিও ছিল না যাদের বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি ছিল; কিন্তু আজ চারটি কোম্পানির নাম আসবে তালিকায়- অ্যামাজন,অ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফট।
৫। ২০১১ সালের একদিন প্রেসিডেন্ট ওবামা স্টিভ জবস এবং মার্ক জুকারবার্গের মাঝে বসে প্রযুক্তি নির্বাহীদের সাথে ডিনার সারেন। সে সময়ই সিলিকন ভ্যালির সাথে ওয়াশিংটন তার সম্পর্ক জোরদার করে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের চেয়ারে বসার আগ পর্যন্ত সে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ।
আজ এক দশকের ব্যবধানে যেভাবে ফেসবুক, টুইটার এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপিত কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, সন্দেহ নেই এটিই তাদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!
৬। বাজারে টেসলার একটিই গাড়ি ছিল-দ্য রোডস্টার; বলতে গেলে তেমন প্রতিযোগীও ছিল না। কিন্তু আজ তাদের বিক্রয়ের জন্য চারটি মডেল রয়েছে, মডেল এস, থ্রি, এক্স এবং ওয়াই। গাড়ি প্রস্তুতকারকের সুবিধার্থে এখন ভার্চুয়ালি ইলেকট্রিক অফারের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু টেসলা এখনো বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
৭। অনলাইন স্ট্রিমিং জগতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম নেটফ্লিক্সকে আজ আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার নেই। ২০১১ সালে নেটফ্লিক্স তার ডিভিডি ভাড়া দেবার ব্যবসাকে বিভক্ত করে কুইকস্টার নামক আরেকটি প্ল্যাটফর্মের জন্ম দেয়।
২০১২ সালে নেটফ্লিক্স নিজেদের প্রযোজনা শুরু করে; পরের বছর তাদের প্রথম পরিচালিত ধারাবাহিক 'হাউস অব কার্ডস' ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ব্যস এরপর আর পেছনে তাকাতে হয় নি। আজ এই কোম্পানীটি সমগ্র হলিউডকে বদলে দিয়েছে; স্ট্রিমিং সেবা বাড়লেও নিজেদের ডিভিডি ব্যবসা কিন্তু এখনো ধরে রেখেছে নেটফ্লিক্স।
৮। দশ বছর আগে, উবার নিছক একটি কালো রঙের গাড়ি ভাড়া দেবার পরিষেবা ছিল। এটি খুব স্বল্প সময়ের জন্য সুলভ ছিল এবং গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আসতেই কাজে লাগত। এয়ারবিএনবি বাড়িতে এয়ার-বেড ম্যাট্রেস সরবরাহ করা কেবল শুরু করেছে তখন। আর ডোরড্যাশের তো তখনো অস্তিস্ত্বই ছিল না।
৯। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে কোন বৈচিত্র্য চোখে পড়েনি। শ্বেত এবং পুরুষ অধ্যুষিত শিল্প দুনিয়ায় প্রথম বড় পরিবর্তন এল ২০১৭ সালে, হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের মাধ্যমে। সদ্য সংঘটিত ২০২০ এর ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন মানুষকে আরও বেশি করে অধিকার সচেতন করে তোলে। তবে যতটা আশা করা হয়েছিল, এখনো সেভাবে প্রযুক্তির দুনিয়ায় নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়ছে না।
১০। অঙ্ক কষতে যারা ভালবাসে, তাদের কাছেই যেন কেবল বিটকয়েন খানিকটা কৌতূহলদ্দীপক ছিল। ২০১১ সালে ভার্চুয়াল কালো বাজার সিল্ক রোড একে অর্থ প্রদানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করলে ইন্টারনেটের কালো বাজারের দুনিয়ায় পাচারের জন্য এই ডিজিটাল মুদ্রার কদর বাড়তে থাকে।
সেই সময়ে কেনা ১০০ ডলারের বিটকয়েনের মান দশক পেরিয়ে এখন এসে ঠেকেছে ৫০ লাখ ডলারে!