ধনকুবেররা মহাকাশ ভ্রমণে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কিন্তু মহাকাশে আসলে কারা যেতে আগ্রহী!
দুই কোটি ডলার খরচ করে ২০০১ সালে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন মার্কিন ব্যবসায়ী ডেনিস টিটো। মহাকাশে তিনিই ছিলেন প্রথম পর্যটক। মহাকাশ যানটি ছিল রাশিয়ার, সেবারের যাত্রায় রুশ নভোচারীদের সঙ্গে টানা আটদিন মহাকাশে কাটান টিটো। এসময় তাদের যানটি পৃথিবীর চারপাশে ১২৮ বার প্রদক্ষিণ করে।
মহাকাশে টিটোর এ ভ্রমণ বিত্তবানদের মধ্যে রোমাঞ্চপ্রিয় অন্যদেরও আকর্ষণ করেছে। ফলে পরবর্তী এক দশকে আরও ছয়জন পর্যটক মহাকাশে যান। তাদের কেউ কেউ টিকেট কিনতে ৪ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ করেন।
অমিত বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনুমান করে, বেসরকারি কোম্পানিগুলোও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে ভ্রমণে খরচ কমানোর গবেষণায় মনোযোগী হয়।
সেক্ষেত্রেও অতি-ধনীদের আগ্রহই প্রধান চালিকাশক্তি হয়। যেমন ২০১৮ সালে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন একটি রকেট পরীক্ষা করে। রকেটটি অধিক ভারবহনেও সক্ষম ছিল। এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী ধাপে অভিযাত্রীদের পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত মহাকাশ স্টেশনে প্রেরণ।
পৃথিবী সেরা ধনকুবের জেফ বেজোসও মহাকাশে দৌড়ের এ প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণের নতুন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো তৈরিতে তাঁর কোম্পানি ব্লু অরিজিন-ও কাজ করছে।
অন্যদিকে, চিরউদ্যমী খ্যাত ব্রিটিশ ধনকুবের উদ্যোক্তা স্যার রিচার্ড ব্রানসন প্রতিষ্ঠা করেন ভার্জিন গ্যালাকটিক। এপর্যন্ত কোম্পানিটি পৃথিবীর আন্তঃকক্ষপথে ভ্রমণের আড়াই লাখ ডলার দামের ৬৫০টি টিকেট বিক্রি করেছে। তবে অগ্রিম টিকেট বিক্রির পরও এখনও কোনো বাণিজ্যিক গ্রাহককে মহাকাশে পাঠায়নি কোম্পানিটি।
এভাবে মহাকাশ পর্যটনের প্রস্তুতি নতুন মাত্রা লাভ করলেও, ঠিক কতজন সম্পন্ন ব্যক্তি পর্যটক হিসেবে মহাকাশে যাবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে; পৃথিবীর বাইরে চূড়ান্ত এ সীমায় ঠিক কতজন যেতে আগ্রহী?
সম্প্রতি পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপসূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ মানুষই পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণে আগ্রহী নন। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ মানুষই কোনো ধরনের মহাকাশ যানে চড়তে নারাজ, ভ্রমণ তো দূরের বিষয়। অনাগ্রহের কারণ হিসেবে তারা বিপুল খরচ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে সার্বিক ভীতির কথাও জানান।
অপরদিকে, ৪৮ শতাংশ মার্কিনী মহাকাশে যাওয়ার আগ্রহ আছে দাবি করলেও, ভ্রমণের উদ্দেশ্য হিসেবে তারা দুর্বল সব যুক্তি দেন। উৎসাহীদের বেশিরভাগই "অনন্য অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে" মহাকাশে যেতে চান বলে জরিপ প্রতিবেদনে জানানো হয়।
তবে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মতামত যাই হোক, মহাকাশ নিয়ে অতি-ধনীদের আগ্রহ তাতে দমবার নয়। সেই আগ্রহ থেকেই ভিন দুনিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মশগুল তারা, এমনকি জনসাধারণের মধ্যে ভ্রমণের অনিচ্ছাও তাদের দমাতে পারছে না।
ইতোমধ্যেই, মহাকাশের প্রান্তসীমায় পর্যটকদের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে ব্লু অরিজিন ও ভার্জিন গ্যালাকটিক। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এই শেষ সীমায় আগামী বছর থেকে আন্তঃকক্ষপথ ভ্রমণও চালু হবে। এমনকি মঙ্গলগ্রহেও মানব কলোনি স্থাপনের আশা করছেন ইলন মাস্ক।
মহাকাশে পর্যটন শিল্পের জন্য সুযোগ দেখছে এয়ারলাইনগুলোও। এরমধ্যেই কক্ষপথ ভ্রমণের প্রযুক্তি তৈরির জন্য বিশেষায়িত স্টার্টআপগুলোতে (নতুন উদ্যোগে) বিনিয়োগ করছে জাপান এয়ারলাইন্স এবং অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ।
আবার ডেনিস টিটোর মহাকাশ যাত্রায় মধ্যস্ততাকারী পর্যটন প্রতিষ্ঠান- স্পেস অ্যাডভেঞ্চার্স প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে নতুন স্পেসপ্লেনের মাধ্যমে মধ্যাকর্ষণ মুক্ত যাত্রার। তবে ঠিক কবে নাগাদ এসব চমকপ্রদ আবিষ্কার বাস্তবে রূপ নেবে তারা সে সময়সীমা নিয়ে কিছুই জানায়নি।
এভাবে মহাকাশ পর্যটনের অনেক ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু অগ্রগতি আসলেও, এসবের সুফল ও সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
মহাকাশ পর্যটনের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে পিউ জরিপে অংশ নেওয়াদের মাত্র অর্ধেক সংখ্যক জানান, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে স্পেস ফ্লাইট স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হবে বলে তারা ধারণা করেন। অর্থাৎ, খুব আশাবাদীরাও চটজলদি অগ্রগতি আসবে বলে মনে করেন না। কিন্তু একইসময়, ধনী উদ্যোক্তাদের কল্পনা এখন সুদূর তারকালোকে যাত্রার দিবাস্বপ্নে বিভোর।
- সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক