বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কেমন আছে পৃথিবীর শেষ দুই সাদা গন্ডার?
দুনিয়ায় এক সময় বেশ সদলবলে ঘুরে বেরালেও নর্দার্ন হোয়াইট রিনো বা সাদা গন্ডার এখন টিকে আছে মাত্র দুটি! নাজিন ও ফাতু নামের ওই দুই গন্ডারই নারী। কেনিয়ার এক সংরক্ষণশালায় নিরন্তর তদারকির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ওরা।
এদিকে, সর্বশেষ পুরুষ সাদা গন্ডারটি মারা গেছে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ। সুদান নামের ওই গন্ডারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে এই প্রজাতির অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এক সময় মধ্য আফ্রিকাজুড়ে ব্যাপক বিচরণ ছিল সাদা গন্ডারের। কিন্তু শিকারিদের রোষে পড়ে এখন এই গন্ডার পরে গেছে চূড়ান্ত রকমের অস্তিত্ব সংকটে।
এক ঝলকে সাদা গন্ডার
আফ্রিকান পশুকুলের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণীর তালিকায় হাতি ও জলহস্তির পরই সাদা গন্ডারের অবস্থান। ওদের একেকটির ওজন ১,৭০০ থেকে ২,৪০০ কেজি।
মজার ব্যাপার হলো, নাম সাদা গন্ডার হলেও ওদের গায়ের রঙ আসলে ধূসর। তবে মুখের দিকে একটু সাদাটে আভা রয়েছে।
ওদের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া কালো গন্ডারের ঠিক উল্টো। কালো গন্ডারের মুখ তুলনামূলক সুচালো হওয়ায় তারা সাধারণত গাছের পাতা, অঙ্কুর ও শাখা খেয়ে থাকে। অন্যদিকে, সাদা গন্ডারের মুখ চওড়া হওয়ায় ওরা তৃণভূমির ঘাস খেতেই অভ্যস্ত।
যেভাবে এসে দাঁড়াল অস্তিত্বের শেষ সীমানায়
এক সময় উগান্ডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, চাদের দক্ষিণাঞ্চল, সুদানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পূর্বাঞ্চল এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবাধ বিচরণ ছিল সাদা গন্ডারের। কিন্তু আফ্রিকান এসব দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করায় এবং দিন দিন গন্ডারের শিংয়ের চাহিদা বাড়ায় এই প্রজাতি এখন অস্তিত্ব সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে।
১৯৭০-এর পুরোটা ও ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে সেন্ট্রাল আফ্রিকাজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর গারাম্বা ন্যাশনাল পার্কের সামান্য কয়েকটি ছাড়া, আফ্রিকার বাকিসব সাদা গন্ডারের সবগুলোই বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২০০৮ সালে গারাম্বায় এক জরিপ চালিয়ে জানা যায়, দুনিয়ার বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় ইতোমধ্যেই নাম উঠে গেছে সাদা গন্ডারের। সে সময়ে দুনিয়ার দুই প্রান্তের দুই দেশ- চেক রিপাবলিক ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি চিড়িয়াখানায় মাত্র ৮টি সাদা গন্ডার টিকে ছিল।
এ ঘটনায় চেক রিপাবলিকের চিড়িয়াখানায় থাকা সাদা গন্ডারগুলোর দিকে দ্রুত মনোযোগ বাড়ে সংশ্লিষ্টদের। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ফাউনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় শেষ চারটি সাদা গন্ডার শাবকের জন্ম দেওয়া হয়; সেগুলোর মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি নারী।
এই প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার শেষ আশায় সেই শাবকগুলোকে চেক চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে আসা হয় কেনিয়ার ওল পেয়েতা কনজারভ্যান্সিতে। আশা করা হয়েছিল, এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে প্রাণীটি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, এখানে কোনো শাবকেরই জন্ম হয়নি। উল্টো, ২০১৩ সালে একটি পুরুষ সাদা গন্ডার আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলে ওই কনজারভ্যান্সিতে দুই নারী সাদা গন্ডারের সঙ্গে একমাত্র পুরুষ সাদা গন্ডার হিসেবে বেঁচে থাকে সুদান। ২০১৮ সালে বয়সজনিত কারণে সেটিরই মৃত্যু ঘটে।
গন্ডার বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এখনো এই প্রজাতি টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় হাল ছাড়েননি। কৃত্রিম উপায়ে বংশবৃদ্ধির প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর বুকে সাদা গন্ডারের নতুন শাবক জন্ম দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো আশা জাগানিয়ে খবর পাওয়া যায়নি।
-
তথ্যসূত্র: ফাউনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইট - ছবি-সূত্র: রয়টার্স