মাকে হারিয়ে গহীন বনে নিরুদ্দেশ সেই হাতির বাচ্চা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/06/elephant_killed_pic.jpg)
কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় মায়ের নিথর দেহ ছোট্ট শুঁড় দিয়ে তুলতে না পেরে গহীন অরণ্যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে সেই হাতির বাচ্চাটি। বছর দেড়েক মায়ের সঙ্গে চলে প্রকৃতি চেনে সে। মাটিতে অসাড় পড়ে থাকা মাকে তুলতে না পেরে মায়ের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল শাবকটি। এরপরও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মায়ের পাশে বাচ্চা হাতিটিও শুয়ে পড়ে। আবার শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করে মাকে। এসময় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ছোট্ট হাতি শাবকের এই করুণ দৃশ্য উপস্থিত সবাইকে ব্যথিত করে তোলে। এটি গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার পর প্রকৃতি ও প্রাণী প্রেমী ছাড়াও অনেকেই হাতি শাবকটির পরবর্তী অবস্থা জানতে ফোন করেন।
কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও-উত্তর) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঈদগাঁওর ফুলছড়ি রেঞ্জের রাজঘাট বিটের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার কাইস্যার ঘোনা নামক এলাকায় শনিবার বিকেলে মৃত মা হাতির সন্ধান পায় বন বিভাগ। খবর পেয়ে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকসহ প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যায়। ময়নাতদন্তের জন্য হাতির শরীরের ফুসফুস, হৃদপিণ্ডসহ শরীরের নানা অংশ নেওয়া হয়। সেখানে যা দেখলাম মৃত হাতিটির ফুসফুসে পানি জমেছে। ধারণা করা হচ্ছে কোনো কঠিন রোগে ভুগছিল হাতিটি। তার শরীরে গুলির চিহ্নের মতো চিহ্নগুলো গাছের গুড়ালির আঘাত হতে পারে। গুলির চিহ্ন ভিন্নতর হয়। তার শরীরের ক্ষতের চিহ্নগুলো থেকে জীবাণু অন্য প্রাণীদের গায়ে সংক্রমণ হতে পারে ভেবে রাত ৯টার দিকেই তাকে পাওয়া স্থানেই পুঁতে ফেলা হয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে থাকাকালীন হাতিশাবককে বাঁশপাতা ও অন্য খাবারগুলো দিলে শাবকটি সেগুলো খায়। উপস্থিত চিকিৎসকরা শাবকটি নিজেকে সামলানোর মতো বয়স বহন করছে বলায় তাকে বনেই ফেরাতে চেষ্টা চলে। রাতে লোকজন চলে আসার পর হাতিশাবকটিও বনে চলে যায়। তবে সেখানে বনকর্মী ও ভিলেজারদের নজর রাখতে বলা হযেছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছে, শনিবার শেষ রাতে অন্য হাতির পালের সঙ্গে বাচ্চা শাবকটিও মৃত হাতি পুতে ফেলা স্থানে এসে ঘুরে গেছে।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হাতি প্রজাতির একটি ধর্ম হলো শাবক যারই হোক বড় হাতির পাল সবাই মিলে শাবকের দেখভাল করে। এটিও সেভাবে রক্ষিত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এরপরও মাকে পুতে ফেলা স্থানসহ আশপাশে নজর রাখতে বলা আছে। যদি শাবকটি সেখানে একলা ফিরে আসে তবে, তাকে ধরে ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হলো, প্রকৃতির প্রাণী প্রকৃতিতে থাকা।
ঈদগাঁওর সমাজকর্মী শাহিদ মোস্তফা জানান, বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে আমরাও বনের সেই জায়গায় গিয়েছিলাম। বাচ্চা হাতিটির সন্ধান আর পাওয়া যায়নি।
ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আবু জাকারিয়া জানান, শনিবার স্থানীয়রা দেখতে পান একটি মা-হাতিটি দিকবিদিক ছুটাছুটি করছিল। একসময় হাতিটি শুয়ে পড়ে। প্লটে কাজ করা এক শ্রমিক হাতিটি শুয়ে আছে মনে করে পালিয়ে দূরে অবস্থান করেন। দীর্ঘক্ষণ নড়াচড়া না দেখে স্থানীয় রাজঘাট বিট কর্মকর্তাকে জানান। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতিটি মৃত বলে নিশ্চিত হন। তার পাশে একটি হাতিশাবক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্মদেয়। যা ইতোমধ্যে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বময় হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের ফোন করে অনেকে সর্বশেষ বিষয়টি জানতে চাচ্ছেন।