মানুষের সংস্পর্শে করোনা আক্রান্ত হতে পারে পোষা প্রাণী
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিড়াল ও কুকুর জাতীয় পোষা প্রাণীর মালিক যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে তা পোষা প্রাণীটিকেও সংক্রমিত করতে পারে।
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন এমন ১৯৬টি বাড়ি থেকে ৩১০টি পোষা প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদের মধ্যে ছয়টি বিড়াল এবং সাতটি কুকুরের পজিটিভ পিসিআর রেজাল্ট এসেছে এবং ৫৪টি প্রাণীর শরীরে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
উটরেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. এলস ব্রোয়েন্স বলেন, 'আপনার যদি কোভিড হয়ে থাকে, তাহলে আপনার উচিত পোষা প্রাণীটির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা; যেমনটা আপনি তখন মানুষের থেকে দূরে থাকেন। এখানে পশুস্বাস্থ্য মুখ্য নয়, বরং আসল ব্যাপার হলো এই যে, প্রাণীরা ভাইরাসের জীবাণু বহুদিন বয়ে বেড়াতে পারে। ফলে তাদের থেকে আবারও মানুষের দেহে ভাইরাস ঢুকতে পারে।'
গবেষণার লেখকেরা বলেন, এখন পর্যন্ত পোষা প্রাণীর দেহ থেকে মালিকের দেহে ভাইরাস ঢুকেছে-এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু এখনো মানবদেহে ছড়াচ্ছে, তাই এটা নির্ণয় করা কঠিন।'
বেশিরভাগ আক্রান্ত প্রাণীর মধ্যেই কোনো উপসর্গ দেখা যায়না কিংবা হালকা উপসর্গ চোখে পড়ে।
উটরেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নেদারল্যান্ডসের কিছু বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসা ক্লিনিক পাঠান যেখানে গত ২০০ দিনের মধ্যে কেউ না কেউ কোভিড পজিটিভ হয়েছেন।
সেসব বাড়ির পোষা বিড়াল ও কুকুরের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে বর্তমান সংক্রমণ আছে কিনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। অতীতে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিল কিনা তা বুঝতে তাদের রক্তের নমুনাও পরীক্ষা করা হয়।
প্রাণীগুলোর নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ইউরোপীয়ান কংগ্রেস অফ ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এ উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেখা যায়- বর্তমান সংক্রমণ ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং অতীতে অ্যান্টিবডি থাকার প্রমাণ আছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
ফলো-আপ টেস্টে দেখা যায়, সকল পিসিআর (পলিমেরাস চেইন ইনফেকশন) পজিটিভ প্রাণীরাই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এবং তাদের দেহে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে।
গবেষকরা বলেন, ভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে সম্ভাব্য উপায় হলো মানুষ থেকে প্রাণীতে আসা; যদিও অনেকেরই ধারণা তার উল্টো।
ডা. ব্রোয়েন্স বলেন, 'আমরা বলছি না যে পোষাপ্রাণী থেকে মালিক কখনোই সংক্রমিত হবেন না। এই মুহূর্তে মহামারি মানুষের থেকেই মানুষের দেহে ছড়াচ্ছে, তাই এই মুহূর্তে তা নিশ্চিত করা সম্ভব না।'
তবে রাশিয়ার পশুচিকিৎসকরা কিছু পশুপ্রাণিকেও কোভিডের টিকা দিচ্ছেন। ডা. ব্রোয়েন্স বলেন, ' এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমি এখনো পাইনি। মহামারিতে পোষা প্রাণীদেরও ভূমিকা থাকাটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।'
কানাডার অন্টারিওতে গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত আলাদা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষত যেসব বিড়াল তার মালিকের সাথে একই বিছানায় ঘুমায় তারা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
গবেষণার জন্য তারা মোট ৭৭টি বাড়ি থেকে ৪৮টি বিড়াল ও ৫৪টি কুকুরের কোভিড অ্যান্টিবডির পরীক্ষা করেন এবং মালিকদের তাদের পোষা প্রাণীর সাথে কি পরিমাণ মিথস্ক্রিয়া করেন, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন।
এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ পোষা বিড়াল এবং ৪৩ শতাংশ কুকুর কোভিড পজিটিভ প্রমাণিত হয়। অন্যদিকে একই অঞ্চলের একটি পশু আশ্রয়কেন্দ্রের ৯ শতাংশ কুকুর ও ৩ শতাংশ বিড়াল কোভিড পজিটিভ বলে জানা যায়।
পোষা প্রাণীদের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা গেছে। খাওয়ার রুচি হারানো থেকে শুরু করে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া-এমন সব উপসর্গ তাদের রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগের ধরন সামান্য হলেও, তিনটি প্রাণীর ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থা দেখা যায়।
গবেষণার লেখকেরা বলেন, বিড়ালের শারীরিক গঠনের কারণেই তারা কোভিড সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এছাড়াও, কুকুরের তুলনায় বিড়াল তার মালিকের সাথে এক বিছানায় ঘুমায়ও বেশি। ফলে তারা যেকোনো ধরনের ইনফেকশনের শিকার হতে পারে সহজে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক জেমস উড জানান, দুটি গবেষণার মিলিত ফলাফলই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পোষা কুকুর-বিড়ালদের একটি বড় অংশ তাদের মালিকের কাছ থেকে করোনা সংক্রমিত হতে পারে।
তিনি বলেন, 'ডাচ গবেষণাটি বেশ গুরুত্ব নিয়ে জোরালোভাবে করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে করোনা আক্রান্ত মালিকের সংস্পর্শে আসা ২০ শতাংশ পোষাপ্রাণী আক্রান্ত হতে পারে, ঠিক মানুষের সমানই।'
- সূত্র- বিবিসি