রবীন্দ্রনাথের জীবনের যে কাহিনিগুলো আপনি আগে শোনেননি (পর্ব-২)
রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবী ছিলেন এ নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকলেও, বিপ্লব বা বিপ্লবীর আটপৌরে সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি কিন্তু কিছু কম ছিলেন না! তার জীবনদর্শন বাঙ্গালীর মানসপটে যে এক গভীর বিপ্লব এনেছিল সে-কথা স্বীকার করতেই হবে।
রবীন্দ্রনাথকে জানা মানে নিজেকে চেনা। যত বেশি রবীন্দ্রনাথকে আমরা জানবো, ততবেশি আমরা নিজেকে ঢেলে নতুনরূপে সাজাতে পারবো। তার মানবতা, নম্রতা, জীবপ্রেম এমনকি কৌতুকরসও আমাদের জীবনের জন্য পাথেয়স্বরূপ।
তার জীবনের তেমনি কয়েকটি গল্প নিয়েই আমাদের এই ধারাবাহিক। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
ঘটনা-৪
বঙ্গভঙ্গের সময় খুব ব্যস্ত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে অংশ নিতেন। এদিকে নাটোরের মহারাজার কন্যার বিয়ে। সব শেষ করে বিয়েতে উপস্থিত হতে ঠাকুরের অনেক দেরি হয়েছিল সেবার। পৌঁছানোর পর রাজা তাকে বললেন, 'কোথায় আপনি আসবেন সকাল সকালে, আর আপনি কিনা এলেন এত দেরিতে?' রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিয়েছিলেন, 'আমারও মাতৃদায়, দু'জায়গায় সভা করে আসতে হল।'
জন্মভূমিকে তিনি 'মা' ভাবতেন। তিনি লিখে গিয়েছেন, 'সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে।' জন্মভূমিকে তিনি মায়ের মতোই ভালোবাসতেন।
ঘটনা-৫
কাউকে কোনোদিন ক্ষুদ্রজ্ঞান করতেননা রবীঠাকুর। উদাহরণস্বরূপ সৈয়দ মুজতবা আলীর স্মৃতিচারণে উল্লেখিত গল্পটির কথা বলা যায়। মুজতবা আলীর সময় শান্তিনিকেতনের আশ্রমে 'ভাণ্ডারে' নামক এক মারাঠি ছাত্র ছিলেন। শালবীথির একপ্রান্তে ছিল লাইব্রেরী, অন্যপ্রান্তে দেহলি বাড়িতে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ।
কিশোর বয়সের ভাণ্ডারে তখন কয়েক মিনিট হলো এসেছেন আশ্রমে। রবীন্দ্রনাথ কালো জুব্বা, মাথায় টুপি পরে ঘর থেকে বেরলেন। রবীন্দ্রনাথকে দেখামাত্র ভাণ্ডারে রবীন্দ্রনাথের কাছে এলেন। কোনো প্রণাম-টনাম কিছুই না করে জোর করে কী যেন একটা মুঠিতে দিয়ে এসে হাসিমুখে আবার ফিরে এলেন।
এদিকে ভাণ্ডারেকে নিয়ে তো হৈচৈ রটে গেল। সকলে তাকে ঘিরে ধরলো। ঠাকুরের হাতে সে কী গুঁজে দিয়ে এল, তা জানতে হবে তো!
ছোট্ট ডানপিটে স্বভাবের ভারে বললেন, 'ক্যা গুরুদেব গুরুদেব কারতা হ্যায়, হাম উসকো এক অঠন্নী দিয়া।'
পরে জানা গেল,ঠাকুমা তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, কোনো সন্ন্যাসী দরবেশ দেখলে দান করতে।
এরপর তাকে শত বুঝিয়ে বিশ্বাস করানো গেল না যে তিনি কোনো দরবেশ নয়, রবীন্দ্রনাথকেই দান করেছিলেন।
ছোটো এই কিশোরকে ঘিরে শিক্ষকদের থাকতো নালিশের পাহাড়। একবার একজন ঠাকুরের কাছে ভাণ্ডারের নামে নালিশ করলেন। রবীন্দ্রনাথ ভাণ্ডারেকে ডেকে বললেন, 'যখন প্রথম এলি,তখন কত ভালো ছেলে ছিলি?মনে নেই তুই দান খয়রাত পর্যন্ত করতিস। আমাকে পর্যন্ত তুই একটা আধুলি দিয়েছিলিস। আজ পর্যন্ত কত ছাত্র এল গেল কেউ তোর মতো আমাকে একটি পয়সাও দেয়নি। সেই আধুলিটি আমি কত যত্নে তুলে রেখেছি দেখবি?'
ঘটনা-৬
রবীন্দ্রনাথ এরকম অনেক ব্যাতিক্রমী কাজ করতেন। রথীন্দ্রনাথ তার স্মৃতিচারণে এমন এক অদ্ভুত কাহিনি লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পাটকিলে রঙের একটি বুড়ো ঘোড়া ছিল। বিকেল হলে রবীন্দ্রনাথ এই বুড়ো ঘোড়া নিয়ে বালিগঞ্জে সত্যেন্দ্রনাথের কাছে যেতেন। চলাচল করতে অনেক সময় নিত ঘোড়াটি। তারপরও একে পরিত্যাগের কথা একবারও ভাবেননি রবীন্দ্রনাথ।